মালদা, 23 সেপ্টেম্বর: বাস্তবিকই উলটপুরাণ ! যখন রাজ্যের পুজো কমিটিগুলি আরও বেশি টাকার পিছনে দৌঁড়ে বেড়াচ্ছে, আরও বেশি চাঁদার জন্য জুলুমবাজির অভিযোগ উঠছে, তখন চাঁদার অতিরিক্ত টাকা মানুষকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন মালদা শহরের একটি কমিটির সদস্যরা ৷ যাঁরা চাঁদার টাকা ফেরত পাচ্ছেন, প্রথমে হতবাক হয়ে পড়েন তাঁরাও ৷ সম্বিত ফিরতেই তাঁরা এর জন্য পুজো কমিটির সদস্যদের অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানাচ্ছেন ৷ বলছেন, এই পুজোর উদ্যোক্তাদের দেখে অন্যান্য কমিটিগুলিরও কিছু শেখা উচিত (Malda Durga Puja) ৷
মালদা শহরের চার্চপল্লির মহিলারা 16 বছর ধরে দুর্গাপুজো করে আসছেন (Malda Churchpally Durga Puja) ৷ এই পুজো চার্চপল্লি সর্বজনীন দুর্গাপুজো নামেই পরিচিত ৷ ওই পল্লির 52টি পরিবারের মহিলারা পুজোর আয়োজক ৷ চাঁদা তোলা থেকে শুরু করে দশমীতে বিসর্জন, সব করেন তাঁরাই ৷ এবার পুজোর (Durga Puja 2022) অনেক আগেই তাঁরা মিটিং করেছিলেন ৷ আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির বাজারে বাড়ি পিছু দেড় হাজার টাকা চাঁদা ধার্য করেছিলেন ৷ সেই অনুযায়ী অনেক বাড়ি থেকে চাঁদাও তোলা হয়েছিল ৷ এরই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী তাঁরা পুজোর জন্য 60 হাজার টাকা পান ৷ হিসেব করে দেখা যায়, এর ফলে পুজো শেষ করেও বেশ কিছু টাকা তাঁদের বেঁচে যাবে ৷ তাই যাঁরা এখনও পর্যন্ত চাঁদা দিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেককে কিছু টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা ৷ চাঁদা ফেরতের প্রক্রিয়া শুরুও হয়ে গিয়েছে (Malda durga puja organizers returning subscription) ৷
আরও পড়ুন: পিতৃপক্ষে দুর্গাপুজোর উদ্বোধন মমতার ! তীব্র আক্রমণ বিজেপির
এই প্রসঙ্গে পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ বাসবী দাস বলেন, “এবার আমরা বাড়িপিছু দেড় হাজার টাকা চাঁদা ধরেছিলাম ৷ চাঁদা তোলা শুরুও হয়ে গিয়েছিল ৷ তারই মধ্যে পুজোর জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের 60 হাজার টাকা অনুদান পাব বলে জানতে পারি ৷ আমরা হিসাব করে দেখি, পুজো শেষ করেও বেশ কিছু টাকা হাতে থাকবে ৷ তাই আমরা চাঁদার কিছু টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই ৷ আমরা খুব স্বচ্ছলতার সঙ্গে পুজো করতে পারি না ৷ পাড়ার সমস্ত মহিলারাই এই পুজো করেন ৷ আমরা হয়তো অতিরিক্ত টাকায় কোনও অনুষ্ঠান করতে পারতাম ৷ কিন্তু করোনার পর মানুষ এখন আর্থিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ৷ অনুষ্ঠান তাঁদের হয়তো সাময়িক আনন্দ দিত ৷ কিন্তু এই টাকাটা ফেরত পেলে তাঁদের পরিবারের উপকার হবে ৷”
পুজো উদ্যোক্তাদের এই উদ্যোগ প্রসঙ্গে চার্চপল্লির বাসিন্দা মনোজ দাসের বক্তব্য,“করোনা পরবর্তী সময়ে আমরা সবাই আর্থিক সমস্যায় রয়েছি ৷ সেই সময় এই পুজো কমিটির সদস্যরা অতিরিক্ত চাঁদার টাকা ফেরত দিচ্ছেন ৷ প্রতিটি পুজো কমিটি যদি এভাবে ভাবত, তবে মানুষের মঙ্গল হত ৷ সবার কাছেই পুজো আনন্দের হয়ে উঠত ৷ পুজোর সময় কিংবা পরে মহিলা পরিচালিত এই পুজো কমিটির যদি আর্থিক কোনও সমস্যা দেখা দেয়, তবে আমরা পাড়ার সবাই তাঁদের সঙ্গে থাকব ৷”