মালদা, 26 মে: বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জনসভার অনুমতি দেওয়ার পরেও তা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে তোপ দাগল বিজেপি ৷ গেরুয়া শিবিরের তোপের মুখে ঘাসফুল শিবিরও ৷ প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে গেলেও সুবিধে হয়নি ৷ কলকাতা হাইকোর্টও প্রশাসনের সিদ্ধান্ত আইনসঙ্গত বলে জানিয়েছে ৷ আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে আগামিকাল শনিবারের পরিবর্তে আগামী 12 জুন মালদার হবিবপুর থানার কেন্দপুকুরে শুভেন্দু অধিকারীর জনসভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা বিজেপি ৷
এনিয়ে শুক্রবার দলের জেলা সদর দফতর শ্যামাপ্রসাদ ভবনে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন বিজেপির উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত ৷ তাঁর কথায়, শনিবার হবিবপুরের কেন্দপুকুর হাইস্কুল ময়দানে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জনসভা করার কথা ছিল ৷ সেই অনুযায়ী তাঁরা প্রশাসনের কাছে ওই জনসভার অনুমতি পাওয়ার জন্য স্থানীয় থানায় সমস্ত নথিপত্র জমা দেন ৷ সেই আবেদনপত্র বিডিও এবং এসডিওকেও দেওয়া হয় ৷ প্রশাসন সভা করার অনুমতিপত্রও দেয় ৷
তিনি আরও জানান, কিন্তু 24 মে রাতে হবিবপুর থানা থেকে তাঁদের একটি চিঠি দেওয়া হয় ৷ ওই চিঠিতে তাঁদের আবেদন বাতিল করা হয় ৷ চিঠিতে পুলিশের তরফে তিনটি কারণ বলা হয়েছিল ৷ প্রথমত, সভার মাঠের কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি ৷ দ্বিতীয়ত, যেহেতু ওই দিনে মানিকচকের মথুরাপুরে শুভেন্দু অধিকারীর আরেকটি সভা রয়েছে, তাই পর্যাপ্ত পুলিশ দেওয়া সম্ভব নয় ৷ তৃতীয় কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছিল, কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী কোনও সভার জন্য অন্তত 15 দিন আগে আবেদন জানাতে হবে ৷ এই তিনটি কারণে নিজেদের দেওয়া অনুমতি নিজেরাই প্রত্যাহার করে নেয় প্রশাসন ৷
এই নিয়ে বিজেপি বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ৷ হাইকোর্ট পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী না থাকার অজুহাত উড়িয়ে দিয়েছে বলে দাবি উজ্জ্বল দত্তর ৷ তাঁর কথায়, আসলে 15 দিন আগে আবেদন না করার জন্যই বিরোধী দলনেতার সভা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৷ হাইকোর্টের তরফে বলা হয়েছে, 15 দিন পর সেখানে সভা করা যাবে ৷ আগামী 12 জুন কেন্দপুকুরে সভা করবেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ৷ তাঁরা বৃহস্পতিবারই মেল করে প্রশাসনের সমস্ত জায়গায় বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছেন ৷
উজ্জ্বল দত্ত বলেন, ‘‘অনুমতি দেওয়ার পরেও প্রশাসন যেভাবে শুভেন্দুবাবুর সভা বাতিল করতে বাধ্য করল, তা মানা যায় না ৷ তাহলে তো প্রথমেই আমাদের আবেদন প্রশাসন বাতিল করতে পারত ! সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সারা দিন ধরে জেলায় যে কর্মসূচি করেছেন, তার অনুমতিপত্র প্রশাসন প্রকাশ্যে আনুক ৷ একই সঙ্গে তৃণমূলের কাছেও এই আবেদন রইল ৷ আগামিকাল (শনিবার) শুধু মানিকচকের মথুরাপুরে শুভেন্দু অধিকারী জনসভা করবেন ৷”
এনিয়ে উত্তর মালদার সাংসদ খগেন মুর্মুর দাবি, এসব করে তৃণমূল কখনোই বিজেপির ক্ষতি করতে পারবে না ৷ বিজেপি একমাত্র দল, যারা চোখে চোখ রেখে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে ৷ ভয় পেয়েই তৃণমূল শনিবার শুভেন্দু অধিকারীর জনসভা প্রশাসনকে দিয়ে বাতিল করিয়েছে ৷
খগেন মুর্মুর অভিযোগ, ‘‘এর পিছনে মুখ্যমন্ত্রীও (মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়) জড়িত৷ তিনি চাইছেন না, শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যবাসীর কাছে যান ৷ শুভেন্দুবাবু এখন তৃণমূলের ত্রাস ৷ তাই এখানে প্রশাসন প্রথমে অনুমতি দিয়েও পরে তা বাতিল করে দিয়েছে ৷ আসলে এই সময় মানুষ তৃণমূলের পাশ থেকে সরে যাচ্ছে ৷ ওদের একমাত্র ভরসা পুলিশ ৷ চোরদের দেখে মানুষ তৃণমূলকে তাড়া করছে ৷ পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের ভরাডুবি হবে ৷ কিন্তু এভাবে শুভেন্দু অধিকারীকে রোখা যাবে না ৷”
হবিবপুরের সভা শনিবার না হলেও মালদার মথুরাপুরে শুভেন্দু অধিকারীর সভা হচ্ছে ৷ এখন দেখার সেই সভা থেকে হবিবপুরের কর্মসূচি বাতিল হওয়া নিয়ে বিরোধী দলনেতা পুলিশ, প্রশাসন ও শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ঠিক কী কী বলেন !
আরও পড়ুন: তৃণমূলের দলীয় ভোটে পুলিশকে ব্যবহার, অভিষেকের বিরুদ্ধে মামলা শুভেন্দুর