মালদা, 10 ডিসেম্বর: পোস্তচাষ মুক্ত করতে তৎপর মালদা জেলা প্রশাসন (Malda Administration) ৷ পাশপাশি এই তৎপরতায় হাত লাগিয়েছে পুলিশও ৷ এই মুহূর্তে জেলার কোনও জায়গায় পোস্তচাষ হচ্ছে বলে খবর নেই ৷ এমনকী এবছর গঙ্গার চরগুলিতেও এখনও পর্যন্ত পোস্তচাষের সন্ধান পাওয়া যায়নি ৷
কয়েকবছর আগেও পোস্তচাষের (Poppy Cultivation) জন্য কুখ্যাত ছিল মালদা জেলা ৷ জেলার 15টি ব্লকের মধ্যে অধিকাংশ ব্লকেই লুকিয়ে করা হত পোস্ত চাষ ৷ ভিনরাজ্যের মাদক মাফিয়ারা কৃষকদের মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে তাদের জমিতে পোস্তচাষ করাত ৷ মূলত ক্ষুদ্র চাষিদেরই নিশানা করত মাফিয়ারা ৷ কথাবার্তার সময়ই চাষিদের হাতে তুলে দেওয়া হত মোটা অংকের টাকা ৷ মাফিয়ারা ভিনরাজ্যে বসে সেই চাষ নিয়ন্ত্রণ করত ৷ ডিসেম্বরের প্রথমে জমিতে পোস্তর বীজ ছড়ানো হত ৷
প্রথম অবস্থায় পোস্ত গাছের সঙ্গে সরষে গাছের প্রচুর মিল থাকায় দু'টি গাছকে আলাদা করা দুষ্কর ৷ জানুয়ারির শেষ থেকে গাছে ফুল ফুটতে শুরু করলেই পোস্ত গাছকে আলাদা করা যায় ৷ সেই সুযোগটাই নিত মাফিয়ারা ৷ পোস্ত গাছে ফল ধরলে তাদের লোক সেই ফল থেকে আঠা বের করে নিয়ে যেত ৷ ওই আঠা দিয়েই তৈরি হত আফিম ৷ সেই আফিমকে বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় হেরোইন কিংবা ব্রাউন সুগারে পরিবর্তিত করা হয় ৷ এভাবেই মাদক মাফিয়ারা মালদা জেলাকে কার্যত 'পঞ্জাব' বানিয়ে ফেলেছিল ৷
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটের আগেই মালদার রেশম চাষে বরাদ্দ 7 কোটি
এককালীন প্রচুর টাকা উপার্জনের আশায় এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছিলেন মহিলারাও ৷ এমনকী এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছিল স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরাও ৷ পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন ৷ বছর আটেক আগে থেকে এই জেলায় পোস্তচাষ বন্ধ করতে তৎপর হয় পুলিশ ও প্রশাসন ৷ তার সুফলও মিলেছে ৷ এই মুহূর্তে জেলার কোথাও পোস্তচাষ হচ্ছে বলে খবর নেই ৷
তবে নজরদারিতে ঢিলেমি দিতে চায়নি প্রশাসন ৷ জেলা পুলিশের সঙ্গে সেই নজরদারিতে সামিল করা হয়েছে শুল্ক, কৃষি ও উদ্যানপালন দফতরকেও ৷ 'মিশন জিরো পপি' কার্যকর করতে চারটি দফতর একযোগে জেলাজুড়ে নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে ৷ প্রশাসনিক লোকজন যেমন সরাসরি জমিতে চলে যাচ্ছেন, তেমনই ড্রোন ক্যামেরাতেও ছবি তোলা হচ্ছে ৷ ছবিতে দেওয়া থাকছে জিপিএস (GPS) লোকেশন (Malda Administration Takes Initiative to Stop Poppy Cultivation) ৷
আরও পড়ুন: মালদাকে বেআইনি পোস্ত চাষমুক্ত রাখতে কড়া পদক্ষেপ প্রশাসনের
পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব জানান, জেলাকে পোস্তচাষ মুক্ত করতে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে ৷ শুধু নজরদারিই নয়, এই চাষ নিয়ে মানুষকে সচেতনও করা হচ্ছে ৷ পোস্তচাষ করে ধরা পড়লে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে, তা মানুষকে জানাচ্ছেন পুলিশকর্মীরা ৷ কোথাও কেউ লুকিয়ে এই চাষ করছে কি না, তা জানতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে পুরনো পোস্তচাষিদেরও সাহায্য নেওয়া হচ্ছে ৷ নজরদারিতে জোর দেওয়া হচ্ছে গঙ্গার চরগুলিতে ৷ এই মুহূর্তে বৈষ্ণবনগর, কালিয়াচক, মোথাবাড়ি, মানিকচক, রতুয়া, ইংরেজবাজার ও ভূতনি থানা এলাকায় নজরদারিতে জোর দেওয়া হয়েছে ৷ তবে এখনও পর্যন্ত জেলার কোথাও পোস্তচাষের সন্ধান পাওয়া যায়নি ৷ বাকি ব্লকগুলিও আমাদের আতশকাচের নীচে রয়েছে ৷