মালদা, 29 অগাস্ট : ইংরেজবাজার পৌরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান নীহাররঞ্জন ঘোষের বিরুদ্ধে গতকালই অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন তৃণমূলের 15 জন কাউন্সিলর । তার জেরেই কি কোপ পড়ল নীহার বিরোধী কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরির উপর? মালদা জেলা পরিষদের মেন্টর পদ থেকে তাঁর পদত্যাগ করার কথা আজ ছড়িয়ে পড়তেই এনিয়ে জল্পনা ছড়িয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলে । যদিও কৃষ্ণেন্দুবাবু দাবি করেছেন, জেলাপরিষদের মেন্টর পদ থেকে তাঁর পদত্যাগের সঙ্গে পৌরসভার কোনও সম্পর্ক নেই । তিনি বেশ কিছুদিন থেকেই ওই পদ থেকে পদত্যাগ করার কথা ভাবছিলেন । সেকথা তিনি মুখ্যমন্ত্রীকেও জানিয়েছিলেন । তবে তাঁর এই দাবির পরও রাজনৈতিক জল্পনা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে । কৃষ্ণেন্দুবাবুর পদত্যাগ নিয়ে জেলাপরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ না খোলায় সেই জল্পনা আরও পোক্ত হয়েছে ।
উল্লেখ্য, গতকালই ইংরেজবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান নীহাররঞ্জন ঘোষের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আসেন 15 জন তৃণমূল কাউন্সিলর । সেই 15 জনের মধ্যে রয়েছেন কৃষ্ণেন্দুবাবুও । মূলত তাঁরই নেতৃত্বে এই প্রস্তাব নিয়ে আসা হয় বলে পৌরসভা সূত্রে খবর । পরোক্ষে সেকথা স্বীকারও করে নেন অনাস্থা প্রস্তাবে স্বাক্ষর করা পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি । এদিকে বিধানসভার অধিবেশন চালু থাকায় এই মুহূর্তে নীহারবাবু কলকাতায় । তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গেছে, গতকালই তিনি এই অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে পৌরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেন । কার নেতৃত্বে তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা নিয়ে আসা হয়েছে, তাও তিনি দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানান । সাম্প্রতিক সময়ে কৃষ্ণেন্দুবাবু দলের শীর্ষ নেতৃত্বের গুডবুকে নেই বলেই তৃণমূল সূত্রে খবর । গোটা ঘটনায় গতকাল দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কৃষ্ণেন্দুবাবুকে নাকি সবক শেখানোর সিদ্ধান্ত নেয় । তাঁকে জেলাপরিষদের মেন্টর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । কোনও ভাবে সেকথা জানতে পারেন কৃষ্ণেন্দুবাবু । তাই নিজের মান রাখতে তাঁকে সরানোর আগেই গতকাল সন্ধ্যায় তিনি মেন্টর পদ থেকে পদত্যাগ করেন । নিজের পদত্যাগপত্র তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরেও পাঠিয়ে দেন বলে তাঁর দাবি ।
কৃষ্ণেন্দুবাবু আজ বলেন, "এর আগেও আমি মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছিলাম, আমি জেলা পরিষদের মেন্টর পদে থাকতে চাই না । এই পদের কোনও দামই নেই । উনি আমাকে বলেছিলেন, তিনি যখন আমাকে মেন্টর করেছেন, তিনিই বিষয়টি দেখছেন । তাঁর নির্দেশ মেনে আমি এই পদে থেকে কাজ করে যাচ্ছিলাম । কিন্তু পরে আমি দেখলাম, আইনগত দিক থেকে এই পদের কিছুই নেই । পঞ্চায়েত আইনেও মেন্টরের কোনও ভূমিকা নেই । তাই গতকালই আমি নিজের পদত্যাগপত্র মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠিয়ে দিয়েছি । আমি গত তিন-চার দিন থেকে জেলাপরিষদেও যাচ্ছি না ।" কৃষ্ণেন্দুবাবুকে প্রশ্ন করা হয়, গতকালই তিনি নিজের পদত্যাগপত্র পাঠালেন কেন? যদি মেন্টর পদের কোনও গুরুত্ব না থাকে, তার আইনি বৈধতা না থাকে, তবে তো তাঁর আগেই পদত্যাগ করা উচিত ছিল । তাঁর জবাবে বলেন, "আমার মনে হল, ফালতু ওই পদে থেকে আর লাভ নেই । কোনও কাজও করতে পারছিলাম না । তবে আমার পদত্যাগের সঙ্গে পৌরসভার বর্তমান পরিস্থিতির কোনও সম্পর্ক নেই । আমি অনেকদিন আগে থেকেই মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছি, আমি আর মেন্টর পদে থাকতে চাই না ।"
কৃষ্ণেন্দুবাবু যাই বলুন না কেন, জেলার রাজনৈতিক মহল কিন্তু বলছে, পৌরসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার কারিগর হিসাবে তাঁকেই চিহ্নিত করেছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব । তাই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রথম ধাপ হিসাবে তাঁকে জেলাপরিষদের মেন্টর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । রাজনৈতিক মহলের অনুমান যে খুব একটা ভুল নয়, তার খানিক প্রমাণ পাওয়া গেছে জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্যের বক্তব্যে । তিনি জানিয়েছেন, আজ রাজ্য পঞ্চায়েত দপ্তর থেকে তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলাপরিষদের মেন্টর পদ থেকে কৃষ্ণেন্দুবাবুকে সরিয়ে দিতে হবে । জানা যাচ্ছে, আজ বিকেলে কৃষ্ণেন্দুবাবুর অপসারণের চিঠিতে সই করবেন রাজ্যপাল ।