মালদা, 23 নভেম্বর: রাজবংশী নেতা অনন্ত রায়ের পর উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবি কেএলও জঙ্গি সংগঠনের ধৃত নেতা মালখান সিংয়ের(KLO Leader Malkhan Singh says that Union Territory of North Bengal will be Declared in December)৷ মঙ্গলবার রাতে মালদা জেলা আদালত থেকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে যাওয়ার সময় এই দাবি করেন কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের প্রথম সারির নেতা মাধব মণ্ডল ওরফে মালখান সিং ৷ যদিও এই নিয়ে কেন্দ্রের তরফে তাঁকে কিছু জানানো হয়নি বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক ৷ রাজ্য ভাগ নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে তিনিও খানিকটা ধোঁয়াশা রেখে দিয়েছেন অবশ্য ৷
সম্প্রতি বঙ্গ বিজেপির অনেক নেতার মুখে ডিসেম্বরের প্রসঙ্গ শোনা গিয়েছে ৷ কিন্তু ডিসেম্বরে আদপে কী ঘটবে, তা তাঁরা কেউ খোলসা করে বলছেন না ৷ হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে, ডিসেম্বরে উত্তরবঙ্গকে রাজ্য থেকে আলাদা করে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করা হবে ৷ কিছুদিন আগে উত্তরের রাজবংশী নেতা অনন্ত রায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করে বেরিয়েই ডিসেম্বরে পৃথক উত্তরবঙ্গের কথা ঘোষণা করেন ৷ একই কথা আড়ালে বলতে শুরু করেন বঙ্গ বিজেপির একাধিক নেতা ৷ কিন্তু প্রকাশ্যে কেউ এই নিয়ে নির্দিষ্টভাবে কিছু বলেননি ৷ রাজনৈতিক মহলের অভিমত, এটা উত্তরবঙ্গের মানুষের আবেগকে রাজনীতির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার একটা কৌশল ছাড়া আর কিছু নয় ৷ গত লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে পদ্ম শিবিরের ফল ভালো হয়েছিল ৷ আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেই ভোট ধরে রাখতেই এই গেরুয়া কৌশল ৷
আরও পড়ুন : বাংলা ভাগ ইস্যুতে বিজেপিকে কটাক্ষ সেলিমের
সম্প্রতি জলপাইগুড়ির খড়িবাড়ি থেকে কেএলও'র অন্যতম শীর্ষ নেতা মালখান সিংকে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স ৷ মঙ্গলবার মালখানকে মালদা জেলা আদালতে পেশ করা হয় ৷ তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করেছে পুলিশ ৷ বিচারক তাঁকে পাঁচদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন ৷ এদিন আদালত থেকে বেরোনোর সময় মালখান বলেন, "উত্তরবঙ্গকে আলাদা ইউনিয়ন টেরিটরি করা নিয়ে আমাকে অসমের মুখ্যমন্ত্রী ডেকেছিলেন ৷ আমি কেএলও'র কেন্দ্রীয় কমিটিতে রয়েছি ৷ আলোচনায় বিশ্বাস করি ৷ সেখান থেকে আমি খড়িবাড়িতে শ্বশুরবাড়িতে যাই ৷ সেখান থেকে এসটিএফ আমাকে গ্রেফতার করে ৷ তারপর পুলিশ আমার বিরুদ্ধে ভুয়ো মামলা রুজু করেছে ৷ পুলিশ আমার বিরুদ্ধে কেস দেওয়ার জায়গা পাচ্ছে না ৷ যতদিন আমাকে পুলিশের হেফাজতে রাখা হবে, ততদিন আমি অনশন আন্দোলন করব ৷ আর ডিসেম্বরের শেষের দিকেই উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে ঘোষণা করে দেওয়া হবে ৷"
এদিকে এই ইস্যুতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক বলেন, "এখনও পর্যন্ত উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের এখনও পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি ৷ সিদ্ধান্ত হলে সবাই জানতে পারবেন ৷ তবে আমরা জনগণের রায়ে নির্বাচিত হই ৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা এবং গণতন্ত্রে আমরা সামিল হই ৷ মানুষের আবেগকে আমরা সম্মান করি ৷ উত্তরবঙ্গের মানুষের মনে বঞ্চনার খেদ রয়েছে ৷ এই প্রশ্ন কখন আসে ? কেন আসে ? এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করলেই রাজ্য সরকারকে এই নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ৷ মানুষের দাবিকে সম্মান জানিয়ে কাজ করা উচিত ৷ তাহলে এমন প্রশ্ন উঠবে না ৷ তবে আবারও বলছি, মানুষের দাবিকে আমরা সম্মান জানাই ৷"
প্রসঙ্গত, শিলিগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক মঞ্চে দেখা গিয়েছিল গ্রেটার নেতা অনন্ত মহারাজকে ৷ এরপর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি জানিয়েছিলেন, সরকার স্বীকৃতি দিয়ে দিয়েছে ৷ উত্তরবঙ্গ কেন্দ্রশাসিত রাজ্য হওয়া এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা ৷ এরপর প্রশ্ন উঠতে থাকে তবে কি সত্যিই ভাগ হচ্ছে বাংলা ? যদিও, নিশীথ প্রামাণিক তখন জানান যে, অনন্ত মহারাজের সঙ্গে তাঁর ভালো সম্পর্ক ৷ আর সেই সূত্রেই তাঁরা একে অপরের বাড়ি গিয়ে মাঝেমধ্যে দেখা করেন ৷
অপর দিকে অনন্ত মহারাজকে একজন সামাজিক ও ধর্মীয় নেতা বলে চলতি মাসের প্রথমে সুকান্ত মজুমদার বাংলা ভাগ ইস্যুতে মুখ খোলেন ৷ তিনি জানিয়েছিলেন, অনন্ত মহারাজ তো কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন ৷ আর তাছাড়া উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্রশাসিত রাজ্য করার কোনও নির্দেশ আসেনি ৷
তবে নিশীথ প্রামাণিক অতীতে বাংলা ভাগ ইস্যুতে সরব হলেও অনন্ত মহারাজ ও মালখান সিংয়ের বক্তব্য প্রসঙ্গে বঙ্গভঙ্গের তেমন কোনও ইঙ্গিত দেননি ৷ বিজেপির একাধিক নেতা উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্যের দাবি জানালেও শাসক-সহ বাকি বিরোধী দলগুলি এর বিরুদ্ধেই সুর চড়িয়েছেন ৷ শাসকদলের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, প্রয়োজন হলে তৃণমূল রক্ত দিয়েও বঙ্গভঙ্গ আটকাবে ৷
আরও পড়ুন : অনন্ত মহারাজের উলটো সুর সুকান্তের গলায়, ওড়ালেন বঙ্গভঙ্গের সম্ভাবনা