মালদা, 1 জুন : যশের যে প্রভাব জেলায় পড়েছিল ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠছে মালদা ৷ মালদা শহরের জমা জলও অনেকটাই নেমে গিয়েছে ৷ তবে এখনও গ্রামগঞ্জে দুর্যোগের ছবি স্পষ্ট ৷ একদিনের প্রবল বৃষ্টি ভাসিয়েছে জমির ফসল, পুকুরের মাছ ৷ ভেসে গিয়েছে চাঁচল মহকুমার বিস্তীর্ণ অংশের মৎস্যজীবীদের ভবিষ্যতও ৷ খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকা পরের কথা, কীভাবে মহাজনদের ঋণ শোধ হবে, সেই ভাবনাতেই ব্যস্ত তাঁরা ৷ দুর্যোগে এই মহকুমার মৎস্যচাষে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে আশঙ্কা করছে মৎস্য দফতরের৷
চাঁচল 1 নম্বর ব্লকের মতিহারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভীমপুর গ্রামের মৎস্যজীবী মহম্মদ নুরজামাল হোসেন ৷ ঋণের টাকায় পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করেছিলেন ৷ যশ পরবর্তী বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছে পুকুর ৷ বেরিয়ে গিয়েছে সব মাছ ৷ তিনি বলেন, “ছ’মাস আগে বন্ধন থেকে ঋণ নিয়ে ছ’বিঘা পুকুরে মাছ চাষ করেছিলাম ৷ ছ’মাস আগে পুকুরে চার কুইন্টাল মাছের চারা ছেড়েছিলাম ৷ এখন মাছ 500 গ্রাম থেকে এককিলো সাইজ হয়েছিল ৷ সম্প্রতি 17-18 কুইন্টাল মাছ বিক্রি করেছিলাম ৷ বৃহস্পতিবারের বৃষ্টিতে সব মাছ ভেসে গিয়েছে ৷ এখন কীভাবে সংসার চালাব, কীভাবেই বা ঋণ শোধ করব, বুঝে উঠতে পারছি না ৷ পুকুরের বাঁধ (পাটাল) শুকনো ছিল ৷ কিন্তু একদিনের বৃষ্টিতেই পাটাল ভেঙে ধসে যায় ৷ এই জায়গায় 10-15টি পুকুর আছে ৷ তার মধ্যে দু’একটি পুকুরের মাছ অক্ষত আছে ৷ এখন ব্লক প্রশাসন কিছু সাহায্য করলে আমি আবার পুকুর পাটালটা ঠিক করতে পারব ৷”
দীর্ঘদিন ধরেই মাছ চাষ করে জীবিকানির্বাহ করেন ভীমপুর গ্রামের সুফিজান বিবি ৷ তিনি বলেন, “পুকুরের সব মাছ ভেসে গিয়েছে ৷ কীভাবে এখন সংসার চালাব ? প্রায় 15 বিঘা পুকুরে মাছ চাষ করেছিলাম ৷ বন্ধন থেকে ঋণ নিয়েছিলাম ৷ লিজ নেওয়া পুকুর ৷ মালিককেও লিজের টাকা দিতে হবে ৷ কীভাবে ব্যবস্থা করব জানি না ৷ এখন সরকার আমাদের কিছু আর্থিক সাহায্য না করলে আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় থাকবে না ৷”
আরও পড়ুন :মালদা মেডিকেলে রোগীদের পরিবারে খাদ্য বিলি মৌসম এবং নীহারের
চাঁচল 1 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ মীর্জা বেগম বলেন, “বৃষ্টির পর আমি গোটা এলাকা ঘুরে দেখেছি ৷ মাছচাষিদের বেশিরভাগ পুকুর ভেসে গিয়েছে ৷ প্রায় 350টি পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত ৷ আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও অনেক ৷ চাষিদের অনেকেই ঋণ নিয়ে, লিজ নেওয়া পুকুরে মাছ চাষ করেছেন ৷ ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিদের আর্থিক সহায়তার জন্য আমরা জেলা পরিষদ ও রাজ্য সরকারকে জানাচ্ছি ৷ চাষিদের আর্থিক সহায়তা না করা হলে তাঁরা মাছ চাষে আগ্রহ হারাবেন ৷”