মালদা, 8 নভেম্বর : নভেম্বরেও পিঁয়াজের ঝাঁঝে চোখ জ্বলছে সাধারণের ৷ খোলা বাজারে পিঁয়াজ বিকোচ্ছে 60-70 টাকা কিলো দরে ৷ দেশের বাজারে মূল্যবৃদ্ধি রুখতে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ কিন্তু পুরোনো লেটার অফ ক্রেডিট (LC)-র দোহাই দিয়ে এখনও প্রতিদিন কয়েক লরি পিঁয়াজ যাচ্ছে বাংলাদেশে ৷ সবচেয়ে বড় বিষয়, পুরোনো LC-তে যতটা রপ্তানির উল্লেখ থাকছে, তার থেকে অনেক বেশি পরিমাণ পিঁয়াজ বাংলাদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে ৷ আরও অভিযোগ, পুলিশ ও শুল্ক দপ্তরের কর্মীদের একাংশের মদতেই এই বেআইনি কাজ চলছে ৷ এই নিয়ে সরব হয়েছে জেলার বণিকসভা, মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্স ৷ যদিও রপ্তানিকারকদের দাবি, বাংলাদেশে পিঁয়াজ রপ্তানি হচ্ছে সমস্ত আইন মেনেই ৷ এক্ষেত্রে কোনও বেআইনি কাজ করা হচ্ছে না ৷
সাধারণত অন্যান্য বছর অক্টোবর থেকেই বাজারে ঢুকতে শুরু করে নতুন পিঁয়াজ ৷ কিন্তু এবার বর্ষা ও বন্যার কারণে মহারাষ্ট্র, গুজরাট সহ অন্যান্য উৎপাদনকারী রাজ্যে এখনও জমি থেকে পিঁয়াজ ওঠেনি ৷ ফলে বাজারে এখনও নতুন পিঁয়াজ ঢুকতে শুরু করেনি ৷ মাস দুয়েক ধরেই তার প্রভাব পড়েছে গোটা দেশে ৷ খোলা বাজারে পিঁয়াজের দাম লাগামছাড়া ৷ আজ মালদার বাজারে পিঁয়াজ বিক্রি হয়েছে 60-70 টাকা কিলো দরে ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার পিঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ৷ তার জেরে এই মুহূর্তে বাংলাদেশেও পিঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকার কথা ৷ কিন্তু পুরোনো LC-র দোহাই দিয়ে এখনও প্রতিদিন প্রতিবেশী রাজ্যে পিঁয়াজ রপ্তানি চলছে ৷ অভিযোগ, সেই LC-কে ঢাল করে একশ্রেণির রপ্তানিকারক অতিরিক্ত পিঁয়াজ রপ্তানি করছে ৷ বাইরে থেকে লরিতে পিঁয়াজ আনা হচ্ছে মহদিপুর স্থল বাণিজ্য বন্দরে ৷ সেখানে দুই লরির পিঁয়াজ একটি লরিতে চাপিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে ৷ পুলিশ কিংবা শুল্ক দপ্তরের চোখের সামনে অতিরিক্ত পিঁয়াজ ভরতি লরি বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হলেও তারা কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না ৷ রপ্তানিকারকদের একাংশই এক্ষেত্রে পুলিশ ও শুল্ক দপ্তরের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তুলেছে ৷ তবে এই নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ মহদিপুর স্থল বাণিজ্য বন্দরে দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও শুল্ক দপ্তরের কর্মীরা ৷
এই বিষয়ে মুখ খুলেছেন মালদা চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত কুণ্ডু ৷ তিনি বলেন, "পিঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি রোধ করতে কেন্দ্রীয় নিষেধাজ্ঞার কথা আমরা জানি ৷ কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের পুরোনো LC-তে বাণিজ্য চলে ৷ সেই পুরোনো LC-র মাধ্যমেই এখন সেদেশে পিঁয়াজ রপ্তানি করা হচ্ছে ৷ তবে আপনাদের তোলা ছবি থেকে বুঝতে পারলাম, যেখানে LC-তে 25টন মাল যাওয়ার কথা, সেখানে 50টন মাল বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে ৷ LC-র বাইরে যাতে কোনও মাল বাংলাদেশে না যায় তা পুলিশ ও শুল্ক দপ্তরকে দেখতে হবে ৷ এব্যাপারে সাধারণ মানুষের স্বার্থে চেম্বার অফ কমার্স সবসময় প্রশাসনকে সহযোগিতা করবে ৷ এনিয়ে বৃহস্পতিবার রপ্তানিকারকদের বৈঠকেও আমি আলোচনা করব ৷ LC-র বাইরে যাতে কেউ বাংলাদেশে পিঁয়াজ রপ্তানি না করেন তার জন্য আমরা আবেদন জানাব ৷ অতিরিক্ত মাল কেউ বাংলাদেশে পাঠালে তা তিনি নিজের দায়িত্বে পাঠাবেন ৷ তার জন্য জেলা প্রশাসন কিংবা শুল্ক দপ্তরের ওই রপ্তানিকারকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ৷ অসাধু রপ্তানিকারকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে আগামীতে অতিরিক্ত পিঁয়াজ বাংলাদেশে রপ্তানি বন্ধ হবে বলে আমি মনে করি ৷"
এপ্রসঙ্গে মহদিপুর এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য, পেঁয়াজ রপ্তানিকারক হৃদয় ঘোষ দাবি করেন, "বাংলাদেশে প্রতিদিন পিঁয়াজ রপ্তানি করা হয় না ৷ দু’একজন রপ্তানিকারকের হাতেই পিঁয়াজ রপ্তানির পুরোনো LC আছে ৷ তাতে দিনে দু’চার গাড়ি পিঁয়াজ রপ্তানি করা হয় ৷ গত 3 দিন ধরে পিঁয়াজের কোনও গাড়ি মহদিপুরে ঢোকেনি ৷ এখন বাংলাদেশে 90-95 টাকা কিলোতে পিঁয়াজ রপ্তানি করা হচ্ছে৷ কিন্তু এই রপ্তানি নিয়ে যে অভিযোগ উঠছে তা ভিত্তিহীন ৷ শুল্ক দপ্তর সমস্ত কাগজপত্র খতিয়ে দেখেই বাংলাদেশে পিঁয়াজ রপ্তানিতে অনুমোদন দেয় ৷"