মালদা, 25 ফেব্রুয়ারি : পাঁচ দশক আগে এলাকায় তৈরি হয়েছিল সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র (Abandoned health centre in Malda)। অসুস্থ হলে কয়েক হাজার গ্রামবাসীর ভরসা ছিল সেটাই। শুধু বহির্বিভাগই নয়, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছিল 12টি বেডও । কিন্তু আজ সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ছবি দেখলে যে কেউ চমকে উঠতে বাধ্য । জরাজীর্ণ ভবন । স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মূল ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ছে । ছাদে গজিয়েছে বট আর অশ্বত্থ গাছ (Malda villagers demand to reopen abandoned health center)। সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র চলে গিয়েছে মানুষের দখলে । সেখানে এখন গরু-ছাগল বেঁধে রাখা হয় । অথচ এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ঠিকমতো চালু থাকলে উপকৃত হতেন এলাকার অন্তত 65 হাজার মানুষ ।
এই ছবি চাঁচল 2 নম্বর ব্লকের চন্দ্রপাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের (Malda news)। সত্তরের দশকে তিন একরেরও বেশি পরিমাণ জমির উপর গড়ে উঠেছিল এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র । চন্দ্রপাড়া-সহ আশপাশের বেশ কিছু গ্রামের মানুষের ছিল এটাই ভরসা । কারণ এখান থেকে মালতিপুর গ্রামীণ হাসপাতালের দূরত্ব অন্তত 15 কিলোমিটার । কিন্তু এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়ার পর গ্রামবাসীদের চিকিৎসার জন্য সেই 15 কিলোমিটার রাস্তাই এখন পাড়ি দিতে হচ্ছে । আর চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তো আরও দূরে । খারাপ রাস্তায় মুমূর্ষু রোগী কিংবা প্রসূতিদের হাসপাতাল নিয়ে যেতে এলাকায় অ্যাম্বুল্যান্স ঢোকে না । গ্রামবাসীদেরই ঝুঁকি নিয়ে সেসব রোগী কিংবা প্রসূতিদের হাসপাতাল নিয়ে যেতে হয় । বর্ষা আর শীতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে ওঠে । হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে বিপন্ন রোগীদের মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে ।
আরও পড়ুন: Malda medical college : সবার অলক্ষ্যে হাসপাতালের ছ'তলায় আট বছরের শিশু ! রেলিং বেয়ে নামতে গিয়ে মৃত্যু
এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে চূড়ান্ত আক্ষেপ চন্দ্রপাড়ার বাসিন্দা মহম্মদ জিন্নার । তিনি বলেন, “1970 সালে এই হাসপাতাল হয়েছিল । চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী সবই ছিল । 12টা বেড ছিল । বেশ কিছু বছর চলার পর হঠাৎ হাসপাতালটি বন্ধ হয়ে যায় । এখন এই হাসপাতাল মানুষের দখলে চলে গিয়েছে । ঘরগুলির মধ্যে গরু-ছাগল বাঁধা হচ্ছে । আসবাবপত্র ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে । ঘরগুলিও ভেঙে পড়ছে । এলাকার মানুষ হিসাবে আমরা চাইছি, এই হাসপাতালটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হলে এলাকার 60 হাজার মানুষের খুব উপকার হবে ।”
গোটা ঘটনা শুনে চাঁচল মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়ন্ত বিশ্বাস বলেন, “বিষয়টি আমার জানাই ছিল না । কেন ওই হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেল তা বিএমওএইচের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে হবে । তবে যেখানে মানুষ স্বাস্থ্য পরিষেবা পান, সেই জায়গা ফের চালু করার জন্য এলাকাবাসীকেই বিএমওএইচ কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে হত । আমাদেরও বিষয়টি জানানো হয়নি । কিন্তু মানুষই যদি সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র দখল করে রাখে, তবে সেটা ফের চালু করা কীভাবে সম্ভব ? গ্রামবাসীদেরই উদ্যোগ নিয়ে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র দখলমুক্ত করতে হবে । ”
মালতিপুরের বিধায়ক আবদুর রহিম বক্সি মালদা জেলা তৃণমূলের সভাপতিও বটে । এই মুহূর্তে পৌরভোট নিয়ে প্রবল ব্যস্ত তিনি । তিনি শুধু জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি পৌর নির্বাচনের পর স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কথা বলবেন ।