মালদা, 4 জুন : পিছনে ঝকঝকে নীল-সাদা হাসপাতাল ভবন ৷ চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল ৷ ঠিক তার সামনেই জরাজীর্ণ আরও একটি ভবন ৷ দেওয়ালের ফাটলে গজিয়েছে গাছ ৷ বেশিরভাগ জায়গায় এখন লতাপাতা ৷ ভিতরে চাঙড় খসে পড়ছে অনেক জায়গায় ৷ এটাই স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার জায়গা ৷ প্রাণভয়ে অনেকেই ছেড়ে দিয়েছেন এই কোয়ার্টার ৷
তবে এখনও সেখানেই থাকে তিনটি পরিবার ৷ করোনাকালে যখন সংক্রমিতদের পাশে দেবদূতের ভূমিকা নিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা, ঠিক তখন প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সরকারি আবাসনে তাঁদের বসবাস প্রশ্ন উঠেছে মালদার চাঁচলে ৷ যদিও হাসপাতালের বিদায়ী সুপার জানিয়েছেন, আগামী দু’তিন সপ্তাহের মধ্যেই স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসন সংস্কারে হাত দেবে পূর্ত দফতর ৷
এই আবাসনেই তিন বছর ধরে থাকছেন মেদিনীপুর থেকে আসা হাউস স্টাফ নার্স মৈত্রী মাঝি ৷ তাঁর স্বামীও এই হাসপাতালের কর্মী ৷ মৈত্রীদেবী বলছেন, “যখন এসেছি, তখন থেকেই এই কোয়ার্টারের অবস্থা খুব খারাপ দেখছি ৷ আমরাই নিজেদের অর্থে ঘরের ভিতরের অংশ সারিয়ে বসবাস করছি ৷ নিজেদের অর্থে বছরে একবার কোয়ার্টার সাফাই করি ৷ আসলে হাসপাতালটা একেবারে সামনে, রাতবিরেতে যাতায়াতে সুবিধে, তাই এই অবস্থাতেও এখানে রয়েছি ৷ তার উপর করোনা আবহে এখানকার বাড়ির মালিকরা বাড়ি ভাড়া দিতে চাইছেন না ৷ আমাদের অনেকে পজিটিভও হচ্ছেন ৷ ফলে বাড়ি মালিকরা আমাদের ভাড়া দিতে ভয় পাচ্ছেন ৷ এখানে অনেক কোয়ার্টার এর থেকেও খারাপ ৷ সেগুলিই এখনও সংস্কার হয়নি ৷ এটা যে কবে হবে, জানি না ৷”
চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার লায়েক আলি জারদারি আজই বদলি হয়ে অন্যত্র রওনা দিয়েছেন ৷ তার আগে তিনি বলেন, “নার্সিং কোয়ার্টারটির সংস্কার হওয়া সত্যিই প্রয়োজন ৷ পূর্ত দফতরের আধিকারিকরা কোয়ার্টারটি দেখে গিয়েছেন ৷ তাঁরা কাগজপত্র তৈরি করছেন ৷ আশা করা যায়, দু’তিন সপ্তাহের মধ্যেই কাজ শুরু হবে ৷ কাজ শুরু হলে ওই কোয়ার্টারে থাকা কর্মীদের অন্য জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করা হবে ৷”
আরও পড়ুন : স্বাস্থ্যসাথী কার্ডকে উপেক্ষা করেই টাকা দাবি নার্সিংহোমের
হাসপাতাল চত্বরেই স্বাস্থ্যকর্মীদের ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে চাঁচলে ৷ এলাকার বাসিন্দা, পেশায় আইনজীবী রামকৃষ্ণ গোস্বামী বলেন, “প্রতিদিন হাসপাতাল চত্বর দিয়ে যাতায়াত করি ৷ স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসনেক সত্যিই ভগ্নদশা ৷ ওই ভবনের গায়ে এখন জঙ্গল ৷ অনেক ফাটলও দেখা দিয়েছে ৷ যে কোনও সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে ৷ করোনা মোকাবিলায় এই স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রথম থেকে সামনের সারিতে থেকে লড়াই করে যাচ্ছেন ৷ তাঁরা প্রকৃতই করোনা যোদ্ধা ৷ তাঁদের আশ্রয়স্থলের এমন দশা সত্যিই দুঃখজনক ৷ এর আগে আমরা জেলা ও ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে বিষয়টি জানিয়েছিলাম ৷ কোয়ার্টারটি সংস্কারের জন্য আবার আমরা তাঁদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি ৷”