মালদা, 23 অগাস্ট: ভোটের ময়দান থেকে সরে দাঁড়াতে চাইছেন ইংরেজবাজার পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন কার্যকরী সভাপতি দুলাল সরকার ৷ নিজের সিদ্ধান্তের কথা দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েও দিয়েছেন ৷ তাঁর এই সিদ্ধান্ত নিয়ে জল্পনা চলছে দলের অন্দরে ৷ ব্যক্তিগত কারণেই ভোট ময়দান থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে প্রকাশ্যে দাবি করেছেন ইংরেজবাজার পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ৷ কিন্তু নিজের ঘনিষ্ঠমহলে তাঁর এই সিদ্ধান্তের জন্য দায়ি করেছেন পৌরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান নীহাররঞ্জন ঘোষকে ৷
তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে রয়েছেন ৷ তৃণমূল নেত্রীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে শাসকদলে পরিচিত ৷ রাজ্যের শাসন ক্ষমতা দখলের আগে কোনও কারণে মালদায় এলে তিনি ছিলেন তৃণমূলনেত্রীর ছায়াসঙ্গী ৷ জানা গেছে, দলনেত্রীর সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কে এখনও কোনও চিড় ধরেনি ৷ পরপর পাঁচ বার তিনি পৌর নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন ৷ টানা 15 বছর ধরে সামলাচ্ছেন পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যানের পদ ৷ এহেন দুলালবাবু নির্বাচন থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ইচ্ছেপ্রকাশ করায় স্বাভাবিকভাবেই তোলপাড় শুরু হয়েছে শাসকদলের অন্দরমহলে ৷
আরও পড়ুন : অঞ্চল সভাপতি করার প্রলোভন দেখিয়ে 2 লাখ হাতিয়েছেন তৃণমূল নেতা !
সংবাদমাধ্যমের সামনে দুলাল সরকার বলেন, "1979 সালে বরকত সাহেব যখন লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হন, তাঁর হাত ধরেই রাজনীতি শুরু করি ৷ পরে বরকত সাহেব আমাকে পৌর নির্বাচনে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেন ৷ পরপর পাঁচ বার কাউন্সিলর নির্বাচিত হই ৷ তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আছি ৷ তিনি আমাকে দু'বার বিধানসভার প্রার্থীও করেছিলেন ৷ আমাকে কাউন্সিলর করেছেন ৷ পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান করেছেন ৷ কিছুদিনের জন্য চেয়ারম্যানের দায়িত্বও দিয়েছেন ৷ জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি ছিলাম, পরে জেলা তৃণমূলের সভাপতিও হই ৷ এই প্রথম দলে আমার কোনও পদ নেই ৷ অনেকদিনই হয়ে গেল আমার ৷ এবার নতুন ছেলেদের জায়গা দিতে হবে ৷ রাজনীতিতে যত নতুন ছেলে আসবে, তারা আরও বেশি মানুষের কাজ করতে পারবে ৷ তাছাড়া আমার বয়স হয়েছে ৷ পরিবারের দায়িত্ব বেড়েছে ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আসার পর এত উন্নয়ন হয়েছে যে, মানুষের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে ৷ কিন্তু অনেক কারণেই আমরা মানুষের সব চাহিদা পূরণ করতে পারছি না ৷ তাই আমি আর ভোটে লড়াই করব না ৷ একথা দলের জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছি ৷ জনপ্রতিনিধি হিসেবে অনেক কাজই করতে পারছি না ৷ তাই এখন থেকে শুধুমাত্র দলেরই কাজ করব ৷ দলের হয়েই মানুষের কাজ করা যাবে ৷ তবে আমার এই সিদ্ধান্তের পিছনে কোনও গোষ্ঠীকোন্দলের বিষয় নেই ৷"
যদিও নিজের ঘনিষ্ঠমহলে এই সিদ্ধান্তের পিছনে দুলালবাবু পরোক্ষে পৌরসভার চেয়ারম্যান নীহাররঞ্জন ঘোষকেই দায়ি করেছেন ৷ তিনি জানিয়েছেন, চেয়ারম্যান নিয়ম মেনে কোনও কাজ করছেন না ৷ পরিকল্পনাহীনভাবেই চলছে পৌরসভা ৷ তার খেসারত তাঁকেই সবচেয়ে বেশি দিতে হচ্ছে ৷ নিজের 20 নম্বর ওয়ার্ডের নিকাশি ও জঞ্জাল অপসারণের কাজ সঠিকভাবে করতে পারছেন না ৷ তাঁর হাতে আর্থিক কোনও ক্ষমতা না থাকায় নিজে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না ৷ সম্ভবত তিনি বুঝতে পেরেছেন, এভাবে চললে আগামী পৌরসভা নির্বাচনে দলের জয়লাভ করা কঠিন ৷ লোকসভা নির্বাচনে তাঁর ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী অনেকটাই পিছিয়ে ছিলেন ৷ ফলে ওয়ার্ডের মানুষ যে দলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, তা পরিষ্কার ৷ সেজন্যই তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৷ যদিও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি নীহারবাবু ৷ তিনি বলেন, "দুলালবাবু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কিনা সে বিষয়ে দলই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ৷ " এই নিয়ে জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নুরেরও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷