মালদা, 16 অক্টোবর : জালনোটের কারবারের আসামি ধরতে গিয়ে আক্রান্ত হল পুলিশ। শনিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে মালদার কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লকের বাখরাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের দৌলতপুর গ্রামে। জানা গিয়েছে, দুষ্কৃতীদের হামলায় জখম হয়েছেন আটজন পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ার। তাঁদের মধ্যে তিনজন স্থানীয় বেদরাবাদ গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন । দু’জনকে মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। দুষ্কৃতীরা পুলিশের একটি গাড়িতেও ভাঙচুর চালায়। ঘটনার পর গ্রাম থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা ইসারুল শেখ জাল নোট কারবারের সঙ্গে জড়িত। সূত্র মারফত কুম্ভীরা ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক তনবির আজাদ জানতে পারেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করার জন্য ইসারুল বিপুল পরিমাণ জালনোট মজুত করেছে। বর্তমানে সে গ্রামেই রয়েছে। এই খবর পেয়েই দেরি করেননি ওই পুলিশ আধিকারিক। দুপুরেই এএসআই সমীর দাস-সহ বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়ে তিনি ওই গ্রামে হানা দেন । পরপর তিনটি বাড়িতে তল্লাশি চালান তাঁরা । একটি বাড়ি থেকে ধরা পড়ে যায় ইসারুল। যদিও তার বাড়ি থেকে কোনও জালনোট উদ্ধার করা যায়নি। ইসারুলকে জেরা করার জন্য ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তনবির আজাদ। বিপত্তির সূত্রপাত তখনই।
আরও পড়ুন : Three Women Die : ফরাক্কায় লরির ধাক্কায় মৃত তিন মহিলা
ইসারুলকে নিয়ে যেতে পুলিশকে বাধা দেন তার পরিবারের মহিলা সদস্যরা । একসময় তাঁরা পুলিশের হাত থেকে ইসারুলকে ছিনিয়ে নেন। এই পরিস্থিতিতে পুলিশকর্মীরা বাড়ির বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যান। ঠিক সেই সময় ইসারুলদের বাড়ির দিক থেকে পুলিশের উদ্দেশ্যে ইট-পাথর উড়ে আসে বলে অভিযোগ। এরপরেই চারদিক থেকে পুলিশের উপর ইট-পাথরের বৃষ্টি শুরু হয়। বেশ কয়েকজন যুবক হাতে বাঁশ নিয়ে তেড়ে আসে পুলিশকে মারতে ৷ ঘটনা বেগতিক দেখে নিজেদের গাড়ির দিকে ছুটতে শুরু করেন পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়াররা । কিন্তু কোনও কিছুতে পা আটকে মাটিতে পড়ে যান এএসআই সমীর দাস । অভিযোগ, তাঁকে বাঁশ দিয়ে পেটাতে শুরু করে দুষ্কৃতীরা। সমীরবাবুকে বাঁচাতে গেলে দুষ্কৃতীরা তনবির আজাদের উপরেও ঝাঁপিয়ে পড়ে । আক্রান্ত হন অন্যান্য পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়াররাও । পুলিশের গাড়িতেও ভাঙচুর চালায় দুষ্কৃতীরা। পরে কোনওরকমে সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন পুলিশকর্মীরা ৷
ঘটনার খবর পেয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) অনীশ সরকার ও বৈষ্ণবনগর থানার আইসি নিম শেরিং ভুটিয়ার নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী যায় ওই গ্রামে। বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। পুলিশি ধরপাকড়ের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালাতে শুরু করেন অনেকে । অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, “জাল নোটের আসামি ধরতে গিয়ে আটজন পুলিশ ও সিভিককর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে । ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। গোটা ঘটনার পুলিশি তদন্ত শুরু হয়েছে। অপরাধীরা কেউ পার পাবে না ।”