ETV Bharat / state

17 দিন ধরে চলে 350 বছরের চাঁচলের রাজবাড়ির পুজো - পুরোহিত অচিন্ত্যকুমার মিশ্র

এই পুজোর বৈশিষ্ট্য, কৃষ্ণা নবমী তিথিতে দুর্গাদালানে কল্পারম্ভ হয় । এবার মল মাসের জন্য একমাস আগেই সেই পুজো শুরু হয়েছে । সপ্তমীর দিন মিছিল সহকারে মা চণ্ডী ঠাকুরবাড়ি থেকে দুর্গাদালানে পুজো নিতে যান । অষ্টমীতে কুমারী পুজো প্রথম থেকেই হয়ে আসছে । দশমীর পুজো শেষে পাহাড়পুর থেকে ঠাকুরবাড়ি চলে আসেন সিংহবাহিনী । সেখানেই তাঁর ভোগ রান্না হয় ।

durga pujo at Chanchal palace celebrated for 17 days since 350 years ago
17 দিন ধরে চলে 350 বছরের চাঁচলের রাজবাড়ির পুজো
author img

By

Published : Oct 20, 2020, 10:18 PM IST

মালদা, 18 অক্টোবর : সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগ । সেই সময় উত্তর মালদার বিস্তীর্ণ এলাকার রাজা ছিলেন রামচন্দ্র রায়চৌধুরি । শুধু বাংলা নয়, বিহারের কিছু অংশও তাঁর রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল । দোর্দণ্ডপ্রতাপ হলেও প্রজাদরদী এবং ধর্মপ্রাণ হিসেবে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়েছিল পূর্ব ভারত জুড়ে । ঘরে বসে নয়, হাতির পিঠে চেপে তিনি নিয়মিত বেরিয়ে পড়তেন রাজত্ব দেখাশোনা করতে । গঙ্গা-মহানন্দা দু'পাড়ের উর্বরা জমির চাষ পরিদর্শন, প্রজাদের সুখ-দুঃখের খবরাখবর নেওয়া ছিল তাঁর রোজনামচা । রাজবাড়ি থেকে বেরোনোর পর কখনও কয়েকদিন কখনও বা মাসাধিককাল পেরিয়ে ঘরে ফিরতেন । কথিত আছে, একবার তিনি যখন এভাবেই রাজত্ব দেখতে বেরিয়ে বাইরে রাত কাটাচ্ছিলেন, তখন তাঁকে স্বপ্নাদেশ দেন দেবী চণ্ডী । রাজাকে তিনি আদেশ দিয়েছিলেন, মহানন্দার সতীঘাটায় তাঁর চতুর্ভূজা অষ্টধাতু নির্মিত মূর্তি রয়েছে । রাজমাতাকে দিয়ে সেই মূর্তি নদী থেকে তুলে রাজাকে তা প্রতিষ্ঠা করতে হবে । শুরু করতে হবে দুর্গাপুজো । আদেশ পেয়ে পরদিন সকালেই সতীঘাটায় চলে যান রাজা । স্বপ্নাদেশে বর্ণিত জায়গায় নদীতে নেমে রাজমাতা তুলে আনেন দেবী চণ্ডীর মূর্তি । সেবার থেকেই শুরু হয় রাজবাড়ির দুর্গাপুজো । এই পুজোর বয়স প্রায় 350 বছর হতে চলল ।

দেবী চণ্ডীর অষ্টধাতুর মূর্তি সতীঘাটা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে রাজবাড়িতে এনে প্রতিষ্ঠা করেন চাঁচলের রাজা রামচন্দ্র । সেদিন থেকেই রাজবাড়িতে শুরু হয় দেবীর নিত্যপুজো । পরবর্তীতে ফের দেবীর স্বপ্নাদেশ পান রাজা । আদেশ অনুযায়ী সতীঘাটায় দেবীর আর একটি মন্দির নির্মাণ করেন তিনি । তবে প্রথমে সেখানে মাটির ঘর ও খড়ের ছাউনি দিয়ে মন্দির তৈরি করা হয় । পরবর্তীতে রাজবংশের অন্যতম রাজা শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরির নির্দেশে তৎকালীন ম্যানেজার সতীরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে সেখানে পাকা দুর্গাদালান নির্মিত হয় । ততদিনে জায়গাটির নাম পরিবর্তিত হয়ে পাহাড়পুর হয়েছে । এখনও সেখানে রয়েছে ওই দুর্গাদালান । প্রতিবছর এখানেই রাজবাড়ির দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয় । পাকা মন্দির নির্মাণের পর রাজা শরৎচন্দ্র দুর্গাপুজোর জন্য সেই সময় সাত হাজার টাকা বছরে বরাদ্দ করেন । সেই সময় টাকার অঙ্কটি নেহাত কম নয় । প্রাচীন প্রথা মেনে এখনও সপ্তমী তিথিতে রাজবাড়ি থেকে দুর্গা দালানে নিয়ে আসা হয় অষ্টধাতুর চতুর্ভূজা মা চণ্ডীকে । দশমীতে তিনি ফের রাজবাড়িতে ফিরে যান ।

17 দিন ধরে চলে 350 বছরের চাঁচলের রাজবাড়ির পুজো

সময় বয়ে গিয়েছে অনেকটাই । এখন সেই রাজা নেই, রাজ্যপাটও নেই । চাঁচল রাজবাড়িতে এখন স্থাপিত হয়েছে কলেজ, মহকুমা প্রশাসনিক ভবন, আদালতসহ একাধিক সরকারি দপ্তর । তবে রাজবাড়ির একাংশে থাকা ঠাকুরবাড়ি এখনও আগের মতোই রয়ে গিয়েছে । বর্তমানে চাঁচলরাজ ট্রাস্টি বোর্ড রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়ি এবং রাজাদের প্রবর্তিত বিভিন্ন পুজো, স্কুল, মন্দির সংস্কার ইত্যাদি দেখাশোনা করে । ট্রাস্টি বোর্ডের সুপারভাইজ়ার পিনাকী জয় ভট্টাচার্য জানান, "এই পুজো অন্তত 300 বছর পেরিয়ে গিয়েছে । কথিত আছে, ওই জায়গায় মহানন্দার তীরে এই রাজ পরিবারের একজন সতী হয়েছিলেন। তখন থেকেই জায়গাটি সতীঘাটা নামে পরিচিত । মা চণ্ডীর স্বপ্নাদেশে মহারাজ রামচন্দ্র রায়চৌধুরি নদী থেকে অষ্টধাতুর চণ্ডীমূর্তি পান । তখন থেকেই পাহাড়পুরে দুর্গাপুজো শুরু হয় । পরবর্তীতে ঈশ্বরচন্দ্র রায়চৌধুরি, শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরি এখানে রাজত্ব করেন । তারপর শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরির রাজত্বে ভাগবাটোয়ারা হয়ে যায় । কলকাতা হাইকোর্টের আদেশে শরৎচন্দ্রের রাজত্বের অংশ আসে রাজ্য সরকারের অফিশিয়াল ট্রাস্টির মালিকানায় । এই ট্রাস্টি বোর্ডের একটি লোকাল ম্যানেজিং কমিটি রয়েছে । এই কমিটি রাজত্বের আয়ব্যয়ের হিসাব সরকারকে পাঠায় । তার ভিত্তিতে এখানে একটি বাজেট পাঠানো হয় । সেই বাজেট মেনেই এখন রাজ পরিবারের সমস্ত খরচ বহন করা হয় । বাজেটে রাজত্বের সমস্ত ব্যয়ের জন্য বছরে 2 লাখ 25 হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । এর মধ্যে রয়েছে রাজাদের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন পুজো, রাজবাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ, ঠাকুরবাড়ির নিত্যপূজা প্রভৃতি । বাজেট অনুযায়ী 2013 সাল থেকে পাহাড়পুর দুর্গাপুজোর জন্য নয় হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । তবে এই বাজারে এত কম টাকায় পুজো সম্ভব নয় । গ্রামবাসীরা আমাদের অনুমতি নিয়ে ওই পুজোয় অর্থ সাহায্য করে । এই পুজোর বৈশিষ্ট্য, কৃষ্ণা নবমী তিথিতে দুর্গাদালানে কল্পারম্ভ হয় । এবার মল মাসের জন্য একমাস আগেই সেই পুজো শুরু হয়েছে । সপ্তমীর দিন মিছিল সহকারে মা চণ্ডী ঠাকুরবাড়ি থেকে দুর্গাদালানে পুজো নিতে যান । অষ্টমীতে কুমারী পুজো প্রথম থেকেই হয়ে আসছে । দশমীর পুজো শেষে পাহাড়পুর থেকে ঠাকুরবাড়ি চলে আসেন সিংহবাহিনী । সেখানেই তাঁর ভোগ রান্না হয় । কথিত আছে, একসময় সতীঘাটায়, মহানন্দার পশ্চিম পাড়ে মহামারী দেখা দিয়েছিল । তখন দেবী সেখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন, গোধূলিলগ্নে বিসর্জনের সময় তাঁরা যেন মাকে আলো হাতে পথ দেখায় । তখন থেকেই প্রতিবছর বিসর্জনের সময় সেখানকার মুসলমানরা হাতে লণ্ঠন, মোমবাতি, এখন মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে মাকে ঘাটের পথ দেখায় । আমিও গত 50 বছর ধরে এই প্রথা দেখে আসছি ।"

পাহাড়পুর দুর্গাদালানের পুরোহিত অচিন্ত্যকুমার মিশ্র বলেন, "350 বছর আগে এই পুজো শুরু হয়েছে । কথিত আছে, তৎকালীন রাজমাতা স্বপ্নাদেশে সতীঘাটায় একটি চণ্ডীমূর্তি পেয়েছিলেন । ওই মূর্তি রাজবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় । তখন থেকেই পাহাড়পুরে দুর্গাপুজোর প্রবর্তন হয় । আগে এখানে একটি কুঁড়েঘর ছিল । পরবর্তীতে এখানে দুর্গাদালান তৈরি হয় । সপ্তমীতে বহু ভক্তের উপস্থিতিতে মা সিংহবাহিনী এখানে আসেন । দশমী পর্যন্ত মা এখানেই থাকেন । সেদিন মা ফের রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়িতে ফিরে যান । পুজোর কয়েকদিন প্রচুর মানুষ এখানে উপস্থিত হয় । তবে এবার কোরোনার জন্য কিছু বিধিনিষেধ থাকবে ।"

এদিকে রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়ির নিত্যপূজারি ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, "রাজা রামচন্দ্র রায়চৌধুরির রাজত্বকালে রাজমাতা সতীঘাটায় নদী থেকে অষ্টধাতুর এই মূর্তি পান । যতদূর জানা আছে, প্রথমে সেখানেই একটি কুঁড়ে নির্মাণ করে মূর্তিটি রাখা হয়েছিল । পরে মাকে রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়িতে নিয়ে আসা হয় । প্রতি বছর সপ্তমীতে মাকে পাহাড়পুর দুর্গাদালানে চারদিনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় । আগে হাতিতে চাপিয়ে মাকে নিয়ে যাওয়া হত । এখন আমি মাকে মাথায় চাপিয়ে সেখানে নিয়ে যাই । একইভাবে দশমীতে ফের মাকে ঠাকুরবাড়িতে নিয়ে আসি । এবার কোরোনার জন্য নিয়ম কিছু বদলানো হয়েছে । পাহাড়পুরে এবার সমস্ত কোরোনা বিধি মেনেই পুজো হবে ।"

মালদা, 18 অক্টোবর : সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগ । সেই সময় উত্তর মালদার বিস্তীর্ণ এলাকার রাজা ছিলেন রামচন্দ্র রায়চৌধুরি । শুধু বাংলা নয়, বিহারের কিছু অংশও তাঁর রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল । দোর্দণ্ডপ্রতাপ হলেও প্রজাদরদী এবং ধর্মপ্রাণ হিসেবে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়েছিল পূর্ব ভারত জুড়ে । ঘরে বসে নয়, হাতির পিঠে চেপে তিনি নিয়মিত বেরিয়ে পড়তেন রাজত্ব দেখাশোনা করতে । গঙ্গা-মহানন্দা দু'পাড়ের উর্বরা জমির চাষ পরিদর্শন, প্রজাদের সুখ-দুঃখের খবরাখবর নেওয়া ছিল তাঁর রোজনামচা । রাজবাড়ি থেকে বেরোনোর পর কখনও কয়েকদিন কখনও বা মাসাধিককাল পেরিয়ে ঘরে ফিরতেন । কথিত আছে, একবার তিনি যখন এভাবেই রাজত্ব দেখতে বেরিয়ে বাইরে রাত কাটাচ্ছিলেন, তখন তাঁকে স্বপ্নাদেশ দেন দেবী চণ্ডী । রাজাকে তিনি আদেশ দিয়েছিলেন, মহানন্দার সতীঘাটায় তাঁর চতুর্ভূজা অষ্টধাতু নির্মিত মূর্তি রয়েছে । রাজমাতাকে দিয়ে সেই মূর্তি নদী থেকে তুলে রাজাকে তা প্রতিষ্ঠা করতে হবে । শুরু করতে হবে দুর্গাপুজো । আদেশ পেয়ে পরদিন সকালেই সতীঘাটায় চলে যান রাজা । স্বপ্নাদেশে বর্ণিত জায়গায় নদীতে নেমে রাজমাতা তুলে আনেন দেবী চণ্ডীর মূর্তি । সেবার থেকেই শুরু হয় রাজবাড়ির দুর্গাপুজো । এই পুজোর বয়স প্রায় 350 বছর হতে চলল ।

দেবী চণ্ডীর অষ্টধাতুর মূর্তি সতীঘাটা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে রাজবাড়িতে এনে প্রতিষ্ঠা করেন চাঁচলের রাজা রামচন্দ্র । সেদিন থেকেই রাজবাড়িতে শুরু হয় দেবীর নিত্যপুজো । পরবর্তীতে ফের দেবীর স্বপ্নাদেশ পান রাজা । আদেশ অনুযায়ী সতীঘাটায় দেবীর আর একটি মন্দির নির্মাণ করেন তিনি । তবে প্রথমে সেখানে মাটির ঘর ও খড়ের ছাউনি দিয়ে মন্দির তৈরি করা হয় । পরবর্তীতে রাজবংশের অন্যতম রাজা শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরির নির্দেশে তৎকালীন ম্যানেজার সতীরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে সেখানে পাকা দুর্গাদালান নির্মিত হয় । ততদিনে জায়গাটির নাম পরিবর্তিত হয়ে পাহাড়পুর হয়েছে । এখনও সেখানে রয়েছে ওই দুর্গাদালান । প্রতিবছর এখানেই রাজবাড়ির দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয় । পাকা মন্দির নির্মাণের পর রাজা শরৎচন্দ্র দুর্গাপুজোর জন্য সেই সময় সাত হাজার টাকা বছরে বরাদ্দ করেন । সেই সময় টাকার অঙ্কটি নেহাত কম নয় । প্রাচীন প্রথা মেনে এখনও সপ্তমী তিথিতে রাজবাড়ি থেকে দুর্গা দালানে নিয়ে আসা হয় অষ্টধাতুর চতুর্ভূজা মা চণ্ডীকে । দশমীতে তিনি ফের রাজবাড়িতে ফিরে যান ।

17 দিন ধরে চলে 350 বছরের চাঁচলের রাজবাড়ির পুজো

সময় বয়ে গিয়েছে অনেকটাই । এখন সেই রাজা নেই, রাজ্যপাটও নেই । চাঁচল রাজবাড়িতে এখন স্থাপিত হয়েছে কলেজ, মহকুমা প্রশাসনিক ভবন, আদালতসহ একাধিক সরকারি দপ্তর । তবে রাজবাড়ির একাংশে থাকা ঠাকুরবাড়ি এখনও আগের মতোই রয়ে গিয়েছে । বর্তমানে চাঁচলরাজ ট্রাস্টি বোর্ড রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়ি এবং রাজাদের প্রবর্তিত বিভিন্ন পুজো, স্কুল, মন্দির সংস্কার ইত্যাদি দেখাশোনা করে । ট্রাস্টি বোর্ডের সুপারভাইজ়ার পিনাকী জয় ভট্টাচার্য জানান, "এই পুজো অন্তত 300 বছর পেরিয়ে গিয়েছে । কথিত আছে, ওই জায়গায় মহানন্দার তীরে এই রাজ পরিবারের একজন সতী হয়েছিলেন। তখন থেকেই জায়গাটি সতীঘাটা নামে পরিচিত । মা চণ্ডীর স্বপ্নাদেশে মহারাজ রামচন্দ্র রায়চৌধুরি নদী থেকে অষ্টধাতুর চণ্ডীমূর্তি পান । তখন থেকেই পাহাড়পুরে দুর্গাপুজো শুরু হয় । পরবর্তীতে ঈশ্বরচন্দ্র রায়চৌধুরি, শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরি এখানে রাজত্ব করেন । তারপর শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরির রাজত্বে ভাগবাটোয়ারা হয়ে যায় । কলকাতা হাইকোর্টের আদেশে শরৎচন্দ্রের রাজত্বের অংশ আসে রাজ্য সরকারের অফিশিয়াল ট্রাস্টির মালিকানায় । এই ট্রাস্টি বোর্ডের একটি লোকাল ম্যানেজিং কমিটি রয়েছে । এই কমিটি রাজত্বের আয়ব্যয়ের হিসাব সরকারকে পাঠায় । তার ভিত্তিতে এখানে একটি বাজেট পাঠানো হয় । সেই বাজেট মেনেই এখন রাজ পরিবারের সমস্ত খরচ বহন করা হয় । বাজেটে রাজত্বের সমস্ত ব্যয়ের জন্য বছরে 2 লাখ 25 হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । এর মধ্যে রয়েছে রাজাদের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন পুজো, রাজবাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ, ঠাকুরবাড়ির নিত্যপূজা প্রভৃতি । বাজেট অনুযায়ী 2013 সাল থেকে পাহাড়পুর দুর্গাপুজোর জন্য নয় হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । তবে এই বাজারে এত কম টাকায় পুজো সম্ভব নয় । গ্রামবাসীরা আমাদের অনুমতি নিয়ে ওই পুজোয় অর্থ সাহায্য করে । এই পুজোর বৈশিষ্ট্য, কৃষ্ণা নবমী তিথিতে দুর্গাদালানে কল্পারম্ভ হয় । এবার মল মাসের জন্য একমাস আগেই সেই পুজো শুরু হয়েছে । সপ্তমীর দিন মিছিল সহকারে মা চণ্ডী ঠাকুরবাড়ি থেকে দুর্গাদালানে পুজো নিতে যান । অষ্টমীতে কুমারী পুজো প্রথম থেকেই হয়ে আসছে । দশমীর পুজো শেষে পাহাড়পুর থেকে ঠাকুরবাড়ি চলে আসেন সিংহবাহিনী । সেখানেই তাঁর ভোগ রান্না হয় । কথিত আছে, একসময় সতীঘাটায়, মহানন্দার পশ্চিম পাড়ে মহামারী দেখা দিয়েছিল । তখন দেবী সেখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন, গোধূলিলগ্নে বিসর্জনের সময় তাঁরা যেন মাকে আলো হাতে পথ দেখায় । তখন থেকেই প্রতিবছর বিসর্জনের সময় সেখানকার মুসলমানরা হাতে লণ্ঠন, মোমবাতি, এখন মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে মাকে ঘাটের পথ দেখায় । আমিও গত 50 বছর ধরে এই প্রথা দেখে আসছি ।"

পাহাড়পুর দুর্গাদালানের পুরোহিত অচিন্ত্যকুমার মিশ্র বলেন, "350 বছর আগে এই পুজো শুরু হয়েছে । কথিত আছে, তৎকালীন রাজমাতা স্বপ্নাদেশে সতীঘাটায় একটি চণ্ডীমূর্তি পেয়েছিলেন । ওই মূর্তি রাজবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় । তখন থেকেই পাহাড়পুরে দুর্গাপুজোর প্রবর্তন হয় । আগে এখানে একটি কুঁড়েঘর ছিল । পরবর্তীতে এখানে দুর্গাদালান তৈরি হয় । সপ্তমীতে বহু ভক্তের উপস্থিতিতে মা সিংহবাহিনী এখানে আসেন । দশমী পর্যন্ত মা এখানেই থাকেন । সেদিন মা ফের রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়িতে ফিরে যান । পুজোর কয়েকদিন প্রচুর মানুষ এখানে উপস্থিত হয় । তবে এবার কোরোনার জন্য কিছু বিধিনিষেধ থাকবে ।"

এদিকে রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়ির নিত্যপূজারি ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, "রাজা রামচন্দ্র রায়চৌধুরির রাজত্বকালে রাজমাতা সতীঘাটায় নদী থেকে অষ্টধাতুর এই মূর্তি পান । যতদূর জানা আছে, প্রথমে সেখানেই একটি কুঁড়ে নির্মাণ করে মূর্তিটি রাখা হয়েছিল । পরে মাকে রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়িতে নিয়ে আসা হয় । প্রতি বছর সপ্তমীতে মাকে পাহাড়পুর দুর্গাদালানে চারদিনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় । আগে হাতিতে চাপিয়ে মাকে নিয়ে যাওয়া হত । এখন আমি মাকে মাথায় চাপিয়ে সেখানে নিয়ে যাই । একইভাবে দশমীতে ফের মাকে ঠাকুরবাড়িতে নিয়ে আসি । এবার কোরোনার জন্য নিয়ম কিছু বদলানো হয়েছে । পাহাড়পুরে এবার সমস্ত কোরোনা বিধি মেনেই পুজো হবে ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.