মালদা, 10 জানুয়ারি : সুজাপুরের পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় CID তদন্ত নিয়ে মন্তব্য করলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোস্তাক আলম৷ তিনি বলেন " CID কিংবা বিচারবিভাগীয় তদন্তের উপর আমাদের বিশ্বাস নেই৷ কারণ, তাঁদের এখানে পাওয়া যাবে না ৷ তাছাড়া এই ধরনের তদন্তে রাজ্য সরকার প্রভাবিত করতে পারে ৷ সুজাপুরে যে ঘটনা ঘটেছে, তাঁর তদন্ত এমন কিছু বড় ঘটনা নয়৷ আমরা বর্তমান পুলিশ সুপারের অধীনেই তদন্ত দাবি করছি৷ "
সুজাপুরের ঘটনার প্রেক্ষিতে আজ পুলিশ সুপারকে ডেপুটেশন দেয় বাম-কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল ৷ সেই দলে মোস্তাক আলম ছাড়াও ছিলেন CPI(M)-র জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র, বাম নেতা বিশ্বনাথ ঘোষ, সর্বানন্দ পাণ্ডে, জামিল ফিরদৌস, সুজাপুরের কংগ্রেস বিধায়ক ইশা খান চৌধুরি, মানিকচকের বিধায়ক মোত্তাকিন আলম সহ আরও অনেকে ৷ সেখানে অম্বরবাবু দাবি করেন, তাঁদের হাতে ওই দিনের ঘটনার আরেকটি ভিডিয়ো ফুটেজ এসেছে ৷ সেখানে দেখা যাচ্ছে, আগুনে পুড়ে যাওয়া পুলিশেরই একটি গাড়ি থেকে পেট্রলের বোতল ও তলোয়ার উদ্ধার হয়েছে ৷ তবে ওই গাড়িটি কার, কীভাবে সেই গাড়িতে পেট্রল কিংবা ডিজ়েলের বোতল এবং তরোয়াল এল, তা পুলিশকে তদন্ত করে দেখতে হবে ৷ তাঁর আরও দাবি, পুলিশ ডিসিপ্লিনড্ বাহিনী ৷ কার নির্দেশে পুলিশকর্মীরা সাধারণ মানুষের গাড়ি ভাঙচুর করল তার তদন্তও করতে হবে ৷ এরসঙ্গে ওই বেসরকারি গাড়িগুলি ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষতিপূরণও দাবি করছে প্রতিনিধি দল ৷
প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকা জেলা কংগ্রেস সভাপতি বলেন, " সুজাপুরে যে ঘটনা ঘটেছে তার দায় বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে ৷ সেদিন বেলা সাড়ে ১২ নাগাদ বনধের সমর্থনে থাকা বাম ও কংগ্রেস কর্মীরা কালিয়াচক থানার IC-র কথায় দলীয় পতাকা নিয়ে সেখান থেকে চলে যায় ৷ কিন্তু কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা সেখান থেকে সরতে অস্বীকার করে ৷ আমরা দেখেছি, CAA আইন প্রণয়নের পর ১৪ ডিসেম্বর যেভাবে RSS-এর লোকজন মুর্শিদাবাদে ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল আর তার দায় মুসলমানদের উপর দায় চাপিয়েছিল, একইভাবে সুজাপুরেও সেই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে ৷ আজ আমরা পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি, এই ঘটনায় যদি কোনও রাজনৈতিক দলের লোকজন জড়িত থাকে তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক ৷ কিন্তু এই ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে যে মিথ্যে FIR করা হয়েছে তাতে বাম ও কংগ্রেসের অনেকের নাম দেওয়া হয়েছে ৷ যদি বন্ধ ডাকা অপরাধ হয়ে থাকে তবে আমরা সেই অপরাধ করেছি৷ কিন্তু বন্ধে যদি আমরা কিছু না করে থাকি, তবে কেন FIR আমাদের নাম দেওয়া হল? পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে বলা হচ্ছে৷ আমরা ভিডিয়ো ফুটেজে গাড়িতে থাকা বোতল আর তলোয়ারও দেখলাম ৷ যে বা যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, আমরা তার নিন্দা করছি ৷ তবে এই ঘটনায় যাতে কোনও নিরীহ মানুষকে ফাঁসিয়ে না দেওয়া হয় তার জন্যও আবেদন জানাচ্ছি ৷ আমাদের দাবি, জেলা পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে এই ঘটনা যথাযথ তদন্ত করা হোক ৷ আমাদের কেউ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকলে তার মুখোমুখি হতেও আমরা তৈরি ৷ কিন্তু আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, এই ঘটনায় বামফ্রন্ট কিংবা কংগ্রেসের কোনও নেতা জড়িত নয় ৷ তবে CID কিংবা বিচারবিভাগীয় তদন্তের উপর আমাদের আস্থা নেই ৷ কারণ, রাজ্যসরকার সেই তদন্তকে প্রভাবিত করতে পারে ৷ পুলিশের যথার্থ পরিকল্পনার অভাবেই সেদিন এই ঘটনা ঘটেছে ৷ আমরা সুজাপুরে শান্তি চাই ৷ কিন্তু সেখানে অশান্তি ছড়ানোর চক্রান্ত চলছে ৷ যারা এই চক্রান্তের সঙ্গে যুক্ত, আমরা তাদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি ৷”
উল্লেখ্য, CID সূত্রে খবর, সুজাপুরের ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করবে জেলা পুলিশ ৷ তবে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনার তদন্ত করবে CID ৷ আজ সুজাপুরের ঘটনা নিয়ে পুলিশ সুপার ও দুই অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন মালদার দায়িত্বপ্রাপ্ত SS CID (নর্থ) ডেভিড ইভান লেপচা ৷ গতকাল রাতেই তিনি সুজাপুরে ঘটনাস্থান পরিদর্শন করেন৷ তবে রাতে তাঁর এলাকা পরিদর্শন নিয়ে প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে ৷
গত বুধবার বাম-কংগ্রেসের ডাকা ভারত বন্ধের দিন পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় সুজাপুর ৷ উত্তেজিত জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুড়তে থাকে৷ পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমাও ছোড়া হয় বলে অভিযোগ ৷ পুড়িয়ে দেওয়া হয় পুলিশের গাড়ি৷ আগুনে পুড়ে যায় মোট ৯টি গাড়ি৷ সেদিন ভিডিয়ো ফুটেজে ধরা পড়ে, কয়েকজন পুলিশকর্মী সাধারণ মানুষের গাড়ি ভাঙচুর করছে৷ মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায় সেই ভিডিয়ো ৷ এরপরেই ঘটনার তদন্তভার দেওয়া হয় CID-র হাতে৷ দায়িত্ব পেয়ে গতকাল বিকেলেই মালদায় চলে আসেন এই জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত SS CID (নর্থ) ডেভিড ইভান লেপচা ৷ প্রথমে জানা গিয়েছিল, আজ সকালে তিনি সুজাপুর নয়মৌজা সংলগ্ন মাঠ এবং ওই এলাকা পরিদর্শনে যাবেন ৷ কিন্তু বেলা ১২টা পর্যন্ত তাঁর দেখা মেলেনি৷ শেষ পর্যন্ত ফোন করা হলে তিনি ETV ভারতকে জানান, গতকাল রাতেই তিনি এলাকা পরিদর্শন করেছেন৷ ঘটনাস্থলের তদন্ত শেষ৷ তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গতকাল রাতে CID র কেউ এলাকার কাউকে কোনও জিজ্ঞাসাবাদ করেনি৷ CID আধিকারিকরা কখন এলাকায় এসেছিলেন, তাও কারও জানা নেই ৷
এদিকে আজ বেলা ১২.১০ নাগাদ পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার সঙ্গে বৈঠকে বসেন ডেভিড ইভান লেপচা ৷ দীর্ঘ বৈঠকের মধ্যে ডাক পড়ে দুই DSP সহ কয়েকজন পুলিশ আধিকারিকের ৷ এরপর পুলিশ সুপারের ঘর থেকে বেরিয়ে তিনি অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের ঘরে ঢুকে পড়েন৷ সেখানে দুই অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সঙ্গেও দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন তিনি৷ বেলা ৩টে নাগাদ শেষ হয় বৈঠক৷ সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনও কথা বলতে রাজি হননি৷ তবে CID সূত্রে জানা গিয়েছে, সুজাপুরের ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত জেলা পুলিশের উপরেই দেওয়া হয়েছে ৷ CID শুধু পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনার তদন্ত করবে ৷ আজ পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া এখনও পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হননি ৷ তবে জানা গিয়েছে, সুজাপুর কাণ্ডে গতকাল রাতে আরও দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ আজ তাদের জেলা আদালতে তোলা হয়েছে৷ এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৩৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে পুলিশ৷ তার মধ্যে বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নামও রয়েছে৷ তবে অভিযুক্তদের তালিকায় নামের সংখ্যা আরও বাড়বে৷ এদিকে বুধবারের ঘটনার রেশ কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে সুজাপুর৷ আজ সেখানে জীবনযাত্রা ছিল স্বাভাবিক৷