মালদা, 27 জানুয়ারি : অমানবিকতা আর মানবিকতার যুগলবন্দি দেখল মালদার রতুয়া । মেয়ে হওয়ায় যখন সদ্যোজাত সন্তানকে পরিত্যাগ করলেন মা, ঠিক তখন সেই কন্যাকেই ঘরে নিয়ে যেতে এগিয়ে এলেন একাধিক ব্যক্তি । যদিও ওই সদ্যোজাতকে জেলা চাইল্ড লাইনের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রতুয়া গ্রামীণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ।
ঘটনাটি ঘটেছে রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের বালুপুর সংলগ্ন বান্নাপাড়া গ্রামে । আজ দুপুরে ওই গ্রামের একটি ভুট্টাখেতের পাশে একটি সদ্যোজাত কন্যাসন্তানকে পড়ে থাকতে দেখা যায় (child recover from ratua agriculture field) । প্রথমে বাচ্চাটিকে দেখতে পায় এলাকারই দু’টি ছোট ছেলে । দীর্ঘক্ষণ বাচ্চাটিকে একাকী পড়ে থাকতে দেখে তারা এক মোটরবাইক আরোহীকে দাঁড় করায় ।
ওই বাইক আরোহী বাচ্চাটিকে তুলে দেন একটি টোটোতে । সেই টোটোয় চেপে রতুয়া যাচ্ছিলেন তিন যুবতী । তাঁরা বাচ্চাটিকে নিয়ে রওনা দিলে, স্থানীয়দের একজন গোটা বিষয়টি রতুয়া থানায় জানান । বালুপুর স্ট্যান্ড থেকেই পুলিশ বাচ্চাটিকে রতুয়া গ্রামীণ হাসপাতাল নিয়ে আসে । এরপরেই ওই বাচ্চাটিকে দত্তক নিতে এগিয়ে আসেন সেই মোটরবাইক আরোহী, টোটোয় থাকা যুবতী-সহ আরও কয়েকজন ।
ইংরেজবাজারের মিলকি গ্রাম পঞ্চায়েতের গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা সুমি খাতুনের দাবি, “গতকাল আমি রতুয়ার বাহিরকাপ গ্রামে মাসির বাড়ি এসেছিলাম । আজ দুপুরে মাসতুতো বোনকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম । টোটোয় আমরা তিনজন ছিলাম । ফুলবান্ধা আর বালুপুরের মাঝামাঝি জায়গায় একটি লোক আমাদের টোটো দাঁড় করায় । তখনই দেখি, ভুট্টাখেতের ধারে একটি শিশু পড়ে রয়েছে। বাচ্চাটি মেয়ে । তার গায়ে একটা চাদর, ওড়না আর জামা ছিল । আমি নিজের ওড়না দিয়ে শিশুটিকে ঢেকে দিই । কোলে নিয়ে দেখি, বাচ্চাটা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে । জানতে পারি, বাচ্চাটি ওই খেতে আধঘণ্টা ধরে পড়ে রয়েছে ।’’
সুমি খাতুনের দাবি, ‘‘আমি একাধিকবার বলা সত্ত্বেও বাচ্চাটিকে কেউ নিতে চায়নি । তখন আমি বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলি । আমার দিদি বাচ্চাটিকে নিতে চাইলে, আমি সেকথা ভুট্টাখেতের কাছে থাকা সবাইকে জানাই । সেখানকার লোক থানায় ফোন করে । এখন বাচ্চাটিকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি । আমরা এই বাচ্চাটিকে চাই । আমরা ওর সব দায়িত্ব নেব । হাসপাতাল থেকে বলা হচ্ছে, বাচ্চাটিকে নাকি আমাদের দেবে না । আমরা যাতে বাচ্চাটা পাই, তার জন্য দয়া করে কোনও ব্যবস্থা করুন ।”
এদিকে বাহিরকাপ গ্রামের বাসিন্দা, সেই মোটরবাইক আরোহী ওবাইদুর রহমানের বক্তব্য, “আমি বাইক নিয়ে বালুপুরের দিকে যাচ্ছিলাম । রাস্তায় বান্নাপাড়া গ্রামে দু'টো ছোট ছেলে আমাকে দাঁড় করায় । তারা জানায়, খেতের ধারে একটা বাচ্চা পড়ে রয়েছে । তখনই টোটোয় এই মেয়েরা আসছিল । আমি টোটো থামিয়ে তাদের কাছে বাচ্চাটিকে দিই । বলি, বালুপুর গিয়ে বাচ্চার ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা হবে । এরই মধ্যে পুলিশে গোটা ঘটনা জানানো হয় । বেলা 12টা নাগাদ বাচ্চাটিকে দেখতে পেয়েছিলাম । যেহেতু আমি প্রথম দেখেছি, তাই বাচ্চাটিকে আমি চাই ।”
যদিও বাচ্চাটিকে কারও হাতে তুলে না-দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রতুয়া গ্রামীণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । সেসময় অন ডিউটিতে থাকা চিকিৎসক সাহারাব মণ্ডল বলেন, “আজ সকালেই বাচ্চাটির জন্ম হয়েছে । বালুপুরের কাছে একটি ভুট্টার জমি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে । বাচ্চাটি মেয়ে । সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে । বাচ্চাটির দায়িত্ব নিতে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন । কিন্তু এভাবে কাউকে বাচ্চা দেওয়া যায় না । তার কিছু সরকারি নিয়মকানুন রয়েছে । আমরা চাইল্ড লাইনে খবর দিয়েছি । তাঁরা এলে আমরা বাচ্চাটিকে তাঁদের হাতে তুলে দেব ।”
আরও পড়ুন : Gambhira Artist: চরম আর্থিক দুরবস্থায় দিন কাটছে মালদার গম্ভীরা শিল্পী মহম্মদ হাফিজের