মালদা, 10 জানুয়ারি : বামনগোলায় বিএসএফ জওয়ানের দেহ উদ্ধারে চাঞ্চল্য ৷ নদীতে বুক সমান জল থেকে ওই বিএসএফ জওয়ানের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে ৷ আজ ভোরে ওই জওয়ানের দেহ নদীতে ভেসে থাকতে দেখেন সীমান্তরক্ষী বাহিনী ৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় বামনগোলা থানার পুলিশ ৷ বিএসএফ জওয়ানের দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে ৷ এনিয়ে এখনও পর্যন্ত বিএসএফ কিংবা পুলিশের তরফে কোনও বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি ৷ তবে স্থানীয়দের দাবি, গরুপাচারে বাধা দেওয়ায় পাচারকারীরাই ওই জওয়ানকে নদীর জলে ডুবিয়ে খুন করেছে (BSF Jawans Body Recover from Haria River in Malda) ৷
শীত ও কুয়াশার সুযোগ নিয়ে মালদা হবিবপুর ও বামনগোলা এলাকা দিয়ে গরুপাচারের চেষ্টা চালায় ভারত ও বাংলাদেশের পাচারকারীরা ৷ গত শুক্রবার ভোরে হবিবপুরের লাঙলভাঙা এলাকায় গরুপাচার করতে গিয়ে বিএসএফ’র 159 নং ব্যাটেলিয়নের জওয়ানদের গুলিতে আহত হয় এক বাংলাদেশি পাচারকারী ৷ সেদিন গরুপাচারে বাধা দেওয়ায় বাংলাদেশি পাচারকারীরা হাঁসুয়া ও লাঠিসোঁটা নিয়ে বিএসএফ জওয়ানদের উপর হামলা চালিয়েছিল বলে অভিযোগ ৷ পাল্টা আত্মরক্ষার জন্য জওয়ানরা সেদিন গুলি চালিয়ে ছিল ৷ ঠিক তার পরেরদিনই একই ঘটনা ঘটে হবিবপুর-বামনগোলার মাঝামাঝি পান্নাপুর সীমান্ত চৌকির বিষমপুর এলাকায় ৷ সেদিন সকাল ছ’টা নাগাদ সীমান্তের কাঁটাতারের জাল কেটে মোষ পাচারের চেষ্টা করছিল পাচারকারীরা ৷ সেদিনও পাচারে বাধা দেওয়ায় জওয়ানদের উপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানোর চেষ্টা করে বাংলাদেশি পাচারকারীরা ৷ ফের গুলি চালাতে বাধ্য হন জওয়ানরা ৷ মৃত্যু হয় মকবুল হোসেন নামে 25 বছরের এক বাংলাদেশি পাচারকারীর ৷
আরও পড়ুন : Sitai BSF firing : গুলিতে মৃত তিনজনই গরু পাচারের সঙ্গে জড়িত, প্রাথমিক তদন্তে দাবি কোচবিহার পুলিশের
আজ সেই 159 নং ব্যাটেলিয়নের এক জওয়ানের দেহ উদ্ধার হয়েছে (BSF Jawans Body Recover) ৷ পুলিশ ও বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিনের মতো আজ ভোরে সীমান্ত পাহারায় জওয়ানদের ডিউটি বদল হচ্ছিল ৷ খুটাদহ এলাকার সীমান্তে হাড়িয়া নদীর ব্রিজের কাছে গতকাল রাতে ডিউটি ছিল বিবেককুমার তিওয়ারি নামে ওই জওয়ানের ৷ আজ সকালে রিলিভার সেখানে গিয়ে তাঁর কোনও খোঁজ পাননি ৷ এর পরেই শুরু হয় খোঁজাখুঁজি ৷ তখনই নজরে আসে, ছোট লোহার ব্রিজের নীচে হাড়িয়া নদীতে পড়ে রয়েছে বিবেকের দেহ (Cattle Smugglers Murder BSF Jawan) ৷ এর পরেই সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে শোরগোল পড়ে যায় ৷ ঘটনাস্থলে যায় কোম্পানি কম্যান্ডার সহ অন্যান্য কর্তারা ৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসে বামনগোলা থানার পুলিশও ৷ বিবেকের দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে ৷
আরও পড়ুন : গবাদি পশু, ফেন্সিডিল-সহ গ্রেপ্তার ছয় পাচারকারী
বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত জওয়ানের বয়স 29 বছর ৷ বাড়ি উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ে ৷ 2017 সালে তিনি সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে যোগ দেন ৷ ঘটনার খবর তাঁর বাড়িতে দেওয়া হয়েছে ৷ তবে, স্থানীয় মানুষজনের বক্তব্য, এটা চোরাকারবারীদের কাজ ৷ হাড়িয়া নদীতে জল খুব কম ৷ কোথাও বুকজলের বেশি গভীরতা নেই ৷ কোনও কারণে নদীতে পড়ে গেলেও মারা যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই ৷ আজ ভোরেও এলাকায় চোরাকারবারীদের উপস্থিতি টের পেয়েছেন অনেকেই ৷ সম্ভবত পাচারে বাধা দেওয়ায় দুষ্কৃতীরা ওই জওয়ানকে নদীর জলে ডুবিয়ে খুন করেছে ৷
যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানকার সাংসদ ও বিধায়ক, দু’জনেই বিজেপির ৷ তাঁরা আজ জেলার বাইরে থাকায় যোগাযোগ করা যায়নি ৷ তবে, বিজেপির উত্তর মালদার সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত ইটিভি ভারতকে বলেন, “ঘটনাটি সঠিক ৷ বিবেক তিওয়ারি নামে বিএসএফের ওই কনস্টেবলের বাড়ি উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ে ৷ গতকাল রাতে দু’দেশের পাচারকারীরা তাঁকে খুটাদহ হাড়িয়া ব্রিজের নীচে ডুবিয়ে খুন করেছে বলে আমাদের অনুমান ৷ কারণ, তাঁর শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি ৷ আর যেখান থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে সেখানে ডুবে যাওয়ার মতো জলও নেই ৷ ওই এলাকার সাংসদ ও বিধায়ক আমাদেরই দলের ৷ আমরা তাঁদের মাধ্যমে বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি ৷ ওই এলাকায় কয়েকদিন ধরেই পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য দেখা যাচ্ছে ৷ যেভাবেই হোক, এসব বন্ধ করতে হবে ৷’’