মালদা, 7 জুলাই : ব্যতিক্রমী বটে। যেখানে রাজ্যজুড়ে পদ্ম থেকে ঘাসফুলে যাওয়ার একাধিক উদাহরণ রয়েছে, সেখানে তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এক বিজেপি সদস্য । ঘটনাটি ঘটেছে চাঁচল 1 নম্বর ব্লকের চাঁচল গ্রাম পঞ্চায়েতে । প্রতিবাদী পঞ্চায়েত সদস্য বিজেপির টুলটুলি দাস মালো । পাহাড়পুর বুথ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি ।
তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপি সদস্য টুলটুলির অভিযোগ, তাঁর এলাকার উন্নয়নে তাঁকে কোনও কাজ করতে দিচ্ছে না শাসকদল পরিচালিত পঞ্চায়েত । তিনি বলেন, "এলাকার মানুষজন কাজের জন্য আমাকে ভোট দিয়ে জিতিয়েছিলেন । কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে গেলেও আমার এলাকায় কোনও উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারিনি ।" তাঁর অভিযোগ বিজেপি সদস্য হওয়ায় তাঁকে তিন বছর ধরে কোনও কাজ দেওয়া হচ্ছে না । পঞ্চায়েতের সভায় ডাকা হলেও তাঁর কথায় গুরুত্ব দেওয়া হয় না । আর এই কথা পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী সরাসরিই বলেন তাঁকে । এদিকে গ্রামে আলো, নর্দমা, রাস্তার প্রচুর সমস্যা রয়েছে । তাঁর কথায়, "এটা আর পঞ্চায়েত নয়, একটি কোম্পানি হয়ে গিয়েছে । আমাকে একাধিকবার শাসকদলের ঝান্ডা ধরতে বলা হয়েছে । তবে নাকি কাজ পাব । বিষয়টি আমি দলের জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েছি । কিন্তু এখনও দলের তরফে কোনও বার্তা পাইনি ৷ এবার আমি পঞ্চায়েত সদস্যের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা ভাবছি ।" হতাশায় শেষ পর্যন্ত বিডিওর কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন তিনি । ব্লক প্রশাসনিক প্রধানকে জানিয়েছেন, এলাকার উন্নয়নে তাঁকে কাজ করতে না দেওয়া হলে তিনি সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেবেন ৷ তাঁর কথায়, "বিডিও যদি 10 দিনের মধ্যে কোন স্টেপ না নেন, তাহলে 10 দিন পরে আমি স্বইচ্ছায় ইস্তফা দেব ৷" তবে অন্য কোনও দলে যাওয়ার ইচ্ছে নেই তাঁর । যদিও দলীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছেন না বিজেপির জেলা সভাপতি ।
আরও পড়ুন : Dilip-Suvendu assembly meeting : বিধায়কদের ধরে রাখতেই কি রুদ্ধদ্বার বৈঠক দিলীপ-শুভেন্দুর ?
খাতায় কলমে চাঁচল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আজমেরি খাতুন হলেও সব কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করেন তাঁর স্বামী মুক্তার হোসেন। শুধু নথিপত্রে স্বাক্ষর ছাড়া আজমেরির উপস্থিতি টের পাওয়া যায় না । টুলটুলির অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধানের স্বামীর মন্তব্য, "পঞ্চায়েত সদস্য পদ থেকে যদি কেউ পদত্যাগ করে, তবে তা ওই সদস্যের ব্যক্তিগত বিষয় । এতে আমাদের কিছু যায় আসে না । তবে ওই সদস্যের বুথে প্রচুর কাজ করা হয়েছে । একাধিক রাস্তা হয়েছে । পানীয় জল, ড্রেনের কাজ হয়েছে ।" তাঁর অভিযোগ ওই সদস্য সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা বলছে আর টুলটুলি নাকি মিটিংয়ে আসেন না । তাঁর দাবি পঞ্চায়েতে বিজেপির অন্যান্য সদস্য, সিপিএমের সদস্যদের বুথেও কাজ হচ্ছে ।
পঞ্চায়েতের উন্নয়নমূলক কাজ প্রসঙ্গে এলাকার বাসিন্দা উত্তম পাণ্ডে অবশ্য জানান যে, পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকে এলাকায় কোনও কাজ হয়নি । তাঁর কথায় "বছর দুয়েক ধরে ড্রেন পরিষ্কার হয় না । রাস্তার পোলগুলিতে আলো জ্বলে না ।" তিনিও টুলটুলি দেবীকে সমর্থন করে বলেন পঞ্চায়েত সদস্য বিজেপি হওয়ায় তাঁকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না । আর তাঁরা বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন বলে পঞ্চায়েত আমাদের ব্রাত্য করে রেখেছে ।
চাঁচল 1 নম্বর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সচ্চিদানন্দ চক্রবর্তীর দাবি চাঁচল গ্রাম পঞ্চায়েতের মাধ্যমে গোটা এলাকায় নানাবিধ কাজ হচ্ছে । তবে কে মিথ্যে কথা বলে নতুন চাল চালছে, তাতে তাদের কোনও মাথাব্যথা নেই । ওই পঞ্চায়েতে তৃণমূলের যথেষ্ট গরিষ্ঠতা রয়েছে । তিনি আরও দাবি করেছেন যে, বিজেপির সদস্যরাও এখন তৃণমূলের ঝান্ডা হাতে নিয়ে নিজেদের এলাকায় ভালোভাবে কাজ করছে ।" বিজেপি সদস্য টুলটুলির বিরুদ্ধে তাঁরও অভিযোগ তিনি পঞ্চায়েতে আসেন না । নিজের এলাকার সমস্যা মিটিংয়ে তোলা কিংবা রেজোলিউশনে তোলেন না । তিনি বলেন, "ওর সদস্যপদ তো এমনিতেই খারিজ হওয়ার কথা ।"
বিজেপির জেলা সভাপতি গোবিন্দচন্দ্র মণ্ডল এই বিতর্কে টুলটুলিকে সমর্থন করলেও বলেন, "আমাদের সদস্য বারবার তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের কাছে নিজের এলাকার উন্নয়নের জন্য কাজের আবেদন করেছেন । কিন্তু তাঁকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না । এতে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন ।" টুলটুলি পঞ্চায়েতের সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা তাঁদের জানিয়েছেন । তবে তিনি যে ইস্তফার ইচ্ছে প্রকাশ করে বিডিওর কাছে চিঠি দিয়েছেন, তা জানতেন না জেলা সভাপতি । ইস্তফায় মত না দিয়ে তিনি বলেন, "আমি এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলব। গণতন্ত্রে বিরোধীদেরও একটা বড় ভূমিকা রয়েছে । তবে ওই সদস্যের বিষয়টি নজিরবিহীন । তবে তাঁর এই সিদ্ধান্তকে দল সমর্থন করে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য আমরা চাঁচলের দলীয় নেতা সুভাষকৃষ্ণ গোস্বামীকে বলেছি ।"