মালদা, 23 সেপ্টেম্বর : ক্লাব কমিটিতে রয়েছেন BJP-র পঞ্চায়েত সদস্য । তাই সরকারি অনুদান থেকে বঞ্চিত হয়েছে তাঁদের পুজো ৷ এই অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন পুরাতন মালদার মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মহাদেবপুর যুবক সংঘের সদস্যরা । পুজো কমিটির সদস্যরা বলেন, "গত বছর সরকারি অনুদান অনুমোদন মিলেছিল । কিন্তু মালদা থানার তৎকালীন IC জোর করে ক্লাব সম্পাদককে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে সেই অনুমোদন বাতিল করে দেন । সেই অনুদান পরে দেওয়া হয় শাসকদল পরিচালিত একটি ক্লাবকে । এবারও সেই ধারা বজায় রয়েছে । অথচ পুজোর অনুদান পেতে আমরা সমস্ত সরকারি নিয়ম মেনে চলি । রাজনৈতিক রং না দেখে আমাদের ক্লাবকে পুজোর অনুদান দেওয়া উচিত ।"
মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মহাদেবপুরে মালদা-নালাগোলা রাজ্য সড়কের ধারে যুবক সংঘ । এবার এই ক্লাবের পুজো 48 বছরে পা দিচ্ছে । পুজো উদ্যোক্তাদের তরফে রামকৃষ্ণ সরকার বলেন, "গতবছর মুখ্যমন্ত্রী দুর্গাপুজো উপলক্ষ্যে রেজিস্টার্ড ক্লাবগুলিকে সরকারি অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন । সেই ঘোষণা অনুযায়ী গতবছর প্রতিটি ক্লাবকে পুজোর জন্য 10 হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয় । এবার সেই অনুদান বেড়ে 25 হাজার টাকা হয়েছে । গতবছর আমাদের ক্লাবের নাম সরকারি অনুদান পাওয়ার তালিকায় ছিল । কিন্তু পরে সেই নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হয় । এবারও একই অবস্থা । প্রথমে আমরা শুনেছিলাম, আমাদের ক্লাবের নাম তালিকায় রয়েছে । কিন্তু এখনও পর্যন্ত মালদা থানার পুলিশ সেই ব্যাপারে আমাদের কিছু জানায়নি । অথচ আমাদের রেজিস্টার্ড ক্লাব । ক্লাবের নিজস্ব ভবন রয়েছে । দুর্গামন্দিরও রয়েছে । তা সত্ত্বেও আমরা গতবছর টাকা পাইনি ।"
রামকৃষ্ণ সরকার বলেন, "এবার মালদা থানায় একটি রক্তদান শিবির হয় । থানা থেকে সেই শিবিরে আমাদের ডাকা হয়েছিল । আমাদের পাঁচ জন সদস্য সেই শিবিরে রক্তদান করেন । প্রথমে থানা থেকে বলা হয়েছিল, এবার আমরা সরকারি অনুদান পাব । কিন্তু তারপর পুলিশ আর আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি । ক্লাবে বা সংগঠনে বিভিন্ন জাতি কিংবা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা থাকতে পারেন । কিন্তু তার জন্য কি সেই ক্লাবকে সরকারি অনুদান থেকে বঞ্চিত করা হবে? এটা বোধহয় ঠিক নয় । প্রশাসনের কাছে আমাদের আবেদন, তারা আমাদের ক্লাবের সমস্ত নথিপত্র খতিয়ে দেখুক । তারপর যদি আমরা সরকারি অনুদান পাওয়ার যোগ্য হই তবে তা আমাদের দেওয়া হোক । এটা ঠিক, আমাদের ক্লাবের এক সদস্য বরুণ দাস পঞ্চায়েতের BJP সদস্য। কিন্তু ক্লাবে তো সব রাজনৈতিক দলের লোকজনই থাকতে পারে ।"
বরুণ দাস বলেন, "আমাদের ক্লাব রেজিস্টার্ড । গত 48 বছর ধরে এখানে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে । মুখ্যমন্ত্রী গতবার থেকে রেজিস্টার্ড ক্লাবগুলোকে দুর্গাপুজো করার জন্য সরকারি অনুদানের কথা ঘোষণা করেছেন । সেই তালিকায় আমাদের ক্লাবের নামও ছিল । কিন্তু গত বছর ক্লাব সম্পাদককে থানায় ডেকে নিয়ে গিয়ে জোর করে তাঁকে স্বাক্ষর করিয়ে ক্লাবের অনুমোদন বাতিল করা হয় । সেই টাকা নতুন একটি ক্লাবকে দেওয়া হয় । একটি ক্লাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লোকজন থাকতেই পারে । কিন্তু পুজোর অনুদান নিয়ে রাজনৈতিক রং দেখা উচিত নয় । আমি প্রশাসনকে বলতে চাই, এক্ষেত্রে যেন রাজনীতির রং না দেখা হয় । পুজোর যাবতীয় নথিপত্র আমাদের তৈরি রয়েছে । তবে আমার জন্যই ক্লাব সরকারি অনুদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কি না তা আমার জানা নেই ।"
এনিয়ে আজ মালদার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয় । কিন্তু তিনি দপ্তরে আসেননি । ফোনেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি । তবে মালদা থানার পুলিশ জানিয়েছে, গতবছর কী হয়েছে তা জানা নেই । এবার যাতে কোনও যোগ্য ক্লাব সরকারি অনুদান থেকে বঞ্চিত না হয় তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।