মালদা, 22 অগস্ট: “পুলিশ আর তৃণমূল নেতাদের অত্যাচারে দেড় মাস বাড়ির বাইরে ছিলাম ৷ এবার বাড়িতে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারব ৷” কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে মঙ্গলবার বোর্ড গঠনের সভা থেকে বেরিয়ে এই মন্তব্য করলেন হবিবপুর পঞ্চায়েত সমিতির নতুন সভাপতি সুখিরানি সাহা ৷ বোর্ড গঠনের আনন্দে কথা বলতে বলতে আবেগে কেঁদে ফেলেন তিনি ৷ নিরাপত্তার অজুহাতে হবিবপুর পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া পিছিয়ে দিয়েছিল প্রশাসন ৷ এই সভা হওয়ার কথা ছিল 14 অগস্ট ৷ তা পিছিয়ে যায় ৷
প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, পঞ্চায়েত ভোটে যেসব জায়গায় শাসকদল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি, সেখানে তৃণমূলকে সাহায্য করতেই নিরাপত্তার ধুয়ো তুলে বোর্ড গঠনের সভা পিছিয়ে দিয়েছে প্রশাসন, যাতে শাসকদল অন্য দল থেকে নির্বাচিত সদস্যদের ভাঙিয়ে আনতে পারে ৷ বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে মামলা হয় ৷ আদালতের নির্দেশে এদিন মালদার যে দুই পঞ্চায়েত সমিতিতে বোর্ড গঠিত হয়েছে, দু’জায়গাতেই মুখ পুড়েছে শাসকদলের ৷ অভিযোগ, নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করতে প্রয়োজনীয় সদস্য জোগাড় করার চেষ্টা শুরু করেছিল তৃণমূল ৷ বিজেপির সদস্যরা দলের গোপন ডেরায় থাকলেও তাঁদের সঙ্গে ঘাসফুলের তরফে যোগাযোগ করা হয় বলে দাবি পদ্ম শিবিরের ৷
মঙ্গলবার বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই টানটান উত্তেজনা ছিল পঞ্চায়েত সমিতি সংলগ্ন এলাকায় ৷ একসময় দলীয় 13 জন সদস্যকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বকসি ৷ খানিক পর দলের উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত, সাংসদ খগেন মুর্মু, এলাকার বিধায়ক জয়েল মুর্মুর নেতৃত্বে উপস্থিত হন বিজেপির 16 জন সদস্য ৷ সভায় হাজির হননি সিপিআইএমের দুই সদস্য ৷ তবে কংগ্রেসের নির্বাচিত সদস্য সভায় অংশ নেন ৷ ভোটাভুটিতে পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গড়ে বিজেপি ৷
আরও পড়ুন: শুভেন্দুর গড়ে পঞ্চায়েত সমিতি গঠনের আগেই উলটপুরাণ, বোর্ড গঠন তৃণমূলের !
সভাপতি হন সুখিরানি সাহা, সহকারী সভাপতি হয়েছেন সুনীল সোরেন৷ বিজেপি এদিন 17-13 ভোটে তৃণমূলকে পরাস্ত করে ৷ কংগ্রেসের নির্বাচিত সদস্য বিজেপির পক্ষে ভোট দেন ৷ সভা থেকে বেরিয়ে নবনির্বাচিত সভাপতি বলেন, “আমরা খুব অসুবিধার মধ্যে ছিলাম ৷ পুলিশ ও তৃণমূল নেতাদের অত্যাচারে বাড়িতে থাকতে পারছিলাম না ৷ আজ খুব ভালো লাগছে ৷ এই জয় বিজেপির জয়, এলাকার মানুষের জয়৷ সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ৷”
অন্যদিকে, বিজেপির উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত জানান, “হবিবপুর বরাবরই বিজেপির শক্ত মাটি৷ এবার গণনাকেন্দ্রে কারচুপি করে আমাদের ছ’জন জয়ী প্রার্থীকে হারানো হয়েছে ৷ গোটা চক্রান্তটাই বিডিও করেছেন ৷ তা সত্ত্বেও তিনি বিজেপিকে রুখতে পারেননি ৷ আমরা তাঁর বিরুদ্ধেও আদালতে যাব ৷ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও তৃণমূল এখানে আমাদের বোর্ড গড়তে দিতে চায়নি ৷ তাই একের পর এক চক্রান্ত করেছে ৷ বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ আমাদের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে ৷ তাই আমরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলাম ৷ আদালতের নির্দেশে আজ পুলিশি নিরাপত্তায় আমাদের সদস্যরা পঞ্চায়েত সমিতিতে ঢুকেছেন৷ এই জয় হবিবপুরবাসীর জয় ৷”
আরও পড়ুন: বিজেপি থেকে নির্দল, বিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে বোর্ড গঠন শাসকদলের
এদিকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বকসি বলছেন, “আজ যে দু’জায়গায় পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠিত হল, তার কোনওটিতেই আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাইনি ৷ ফলে আমাদের বোর্ড হওয়ার কথাও নয় ৷ তবে এবার আমরা হবিবপুরে ভালো ফল করেছি ৷ সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েতের সঙ্গে জেলা পরিষদের একটি আসনে জিতেছি ৷ পঞ্চায়েত সমিতিতে আমাদের 13 জন জিতেছেন ৷ তাঁদের পাশে থাকতেই আজ এখানে এসেছিলাম ৷ নির্বাচনেই আমরা হেরে গিয়েছিলাম ৷ তাই আজ জেতার জন্য আসিনি ৷ আমার কোনও বক্তব্যও নেই ৷”