মালদা, 12 জুলাই: তৃণমূলের সবুজ ঝড়ে, কার্যত তছনছ উত্তরের সাজানো পদ্মবন ৷ জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে বিজেপি ৷ উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদেও গেরুয়া রঙয়ের কোনও দাগ নেই ৷ একমাত্র কোচবিহারে দু'টি এবং মালদায় চারটি আসন পেয়ে গঙ্গার এপারে কিছুটা হলেও নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রেখেছে তারা ৷
পঞ্চায়েত সমিতি কিংবা গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে অল্পবিস্তর আসন দখল করলেও উত্তরের গড়ে বিজেপির যে ধস নেমেছে, 24-এর লোকসভা ভোটের আগে কি, তা ফের পুনরুদ্ধার করা যাবে ? বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিতভাবেই চিন্তার ভাঁজ গেরুয়া নেতৃত্বের কপালে ৷ মালদার নেতৃত্বও এর ব্যতিক্রম নয় ৷ তবে এই মুহূর্তে তাঁরা পঞ্চায়েত ভোটে শাসকের সন্ত্রাস নিয়েই বলতে ব্যস্ত ৷ ওয়াকিবহল মহলের মতে, নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতা কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন নীতির বিষয়টি পুরোপুরি এড়িয়ে যাচ্ছে বিজেপি নেতৃত্ব ৷
পঞ্চায়েত নির্বাচনের বেশকয়েক মাস আগে থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক নীতির বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করে দিয়েছিল তৃণমূল ৷ নবজোয়ার, তারপর পঞ্চায়েতের প্রচারেও 100 দিনের কাজ এবং বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছিল তৃণমূল ৷ পেট্রোপণ্য, রান্নার গ্যাস, প্রতিদিনের ব্যবহার্য জিনিসপত্রের অভাবনীয় মূল্যবৃদ্ধি, এসবের পিছনে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের হাত এই বলে প্রচারও করেছে তৃণমূল ৷ তাদের মূল অভিযওগই ছিল, কেন্দ্রের বর্তমান সরকার গরিব মানুষের কথা ভাবে না ৷ আর সে কারণেই বাংলা 100 দিনের কাজের টাকা থেকে বঞ্চিত ৷ এই রাজ্যের গরিব মানুষের ঘরের টাকাও কেন্দ্র দিচ্ছে না বলেও নীচুস্তরে প্রচার চালিয়েছে তৃণমূল ৷ প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, এসব প্রচারই সম্ভবত মানুষের মনে গেঁথে বসে গিয়েছে ৷
প্রচারে বিজেপিও অবশ্য তৃণমূলের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা চুরির অভিযোগ করেছে ৷ তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারকে 'কাটমানির সরকার' বলে সম্বোধনও করেছে ৷ একাধিক দুর্নীতি ইস্যু গড়িয়েছে হাইকোর্টেও । তবে সেই প্রচার যে আদপে গ্রাম বাংলার আপামর মানুষের কাছে সেভাবে গ্রাহ্য হয়নি, তা ফল থেকেই স্পষ্ট । আর তার মূল কারণ হিসাবে অধিকাংশ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে যেখানে 500 টাকা প্রতি মাসে পাচ্ছেন মহিলারা । সুতরাং সেই দিকেই যে তাদের মন ঝুঁকবে, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত থাকতে পারে না ৷ এর উপর রয়েছে বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা ৷ অন্তত মালদা জেলা নেতৃত্বকে নিজেদের মতো করে কোনও কর্মসূচি নিতে দেখা যায় না বলে চাপা ক্ষোভ রয়েছে দলেরই অন্দরে ৷
দিল্লির সবুজ সংকেত না পেলে এই জেলার নেতৃত্বের কিছু করার ক্ষমতা নেই বলেও জানাচ্ছেন জেলা বিজেপি নেতারা ৷ কিন্তু দিল্লিতে থেকে বাংলার রাজনীতির স্রোতে বয়ে যাওয়া শুধু কঠিনই নয়, বড্ড কঠিন বলেও জানান তারা ৷ উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু আবার দলের তফশিলি জাতি ও উপজাতি সেলের রাজ্য সভাপতি ৷ তিনি বলেন, “মালদা জেলায় বামনগোলা, হবিবপুর, পুরাতন মালদা আর গাজোল বিজেপির গড়৷ প্রতি ভোটে এই চারটি ব্লকে বিজেপির ফল খুব ভালো হয় ৷ এবারও আমরা এই চার ব্লকে ভালো ফল করেছি ৷ সেটা অনুমান করেছিল জেলা প্রশাসনও ৷ তাই বিজেপিকে আটকাতে ভোটের আগে জেলাশাসকের পৌরোহিত্যে এই চারটি ব্লকের বিডিওদের নিয়ে গোপন বৈঠক হয় ৷ ওই বৈঠকেই ঠিক হয়, এই চারটি ব্লকের জন্য অতিরিক্ত ব্যালট পেপার ছাপাতে হবে ৷ ডিআরসিতে জমা হওয়া ব্যালট বাক্স সরানো হয়েছে ৷ সেখানে নতুন ব্যালট বাক্স রেখে দেওয়া হয়েছে ৷ প্রশাসনের এই চালাকি গাজোলে ধরাও পড়ে গিয়েছে ৷"
আরও পড়ুন: সবকটি জেলাপরিষদ আসনেই জয়ী তৃণমূল, আলিপুরদুয়ার হাতছাড়া বিজেপির
খগেন মুর্মুর অভিযোগ, 83 নম্বর বুথের ব্যালট বাক্স ডিসিআরসি সেন্টার থেকে স্ট্রং রুমে যাওয়ার পথে উধাও হয়ে গিয়েছে ৷ গণনার দিন পর্যন্ত ওই বাক্স পাওয়া যায়নি ৷ সেগুলি কোথায় গেল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি সাংসদ । তিনি বলেন, "তাছাড়া গতকাল প্রশাসন সুকৌশলে দুপুরের পর থেকে গণনা শুরু করেছে ৷ যাতে রাত বেশি হয়ে যাওয়ার পর তারা সবরকম কৌশলে বিরোধীদের হারাতে পারে ৷ এভাবেই প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে তৃণমূল এমন ফল করতে পেরেছে ৷ তবে লোকসভা কিংবা বিধানসভা নির্বাচনে প্রশাসনের এই কৌশল খাটবে না৷ মানুষ বিজেপির পাশে রয়েছে ৷”