হরিশচন্দ্রপুর, 7 এপ্রিল : সপ্তম দফার জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর্ব চলছে ৷ বুধবার শেষ হবে সেই পর্ব ৷ এরই মধ্যে মঙ্গলবার হরিশচন্দ্রপুর কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী নিয়ে নতুন করে ক্ষোভের আগুন জ্বলল দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ৷ বিক্ষুব্ধ কর্মীরা ওই কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করানোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ৷
পুরোনো একটি খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নয়া বিতর্কের সূত্রপাত ৷ বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীদের দাবি, একটি খুনের ঘটনায় এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী মতিবুর রহমানের দাদা জড়িত ৷ বিষয়টি জানতে পেরে আজ বাড়ির সামনে লাগানো মতিবুর রহমানের সমর্থনে লাগানো প্রচারের ফ্লেক্স, দলীয় পতাকা খুলে রাস্তায় ফেলে দেন নিহতের ভাই তথা এলাকার সক্রিয় বিজেপি কর্মী সবরমল আগরওয়াল ৷ দাদা কানাইয়ালাল আগরওয়ালের ছবি নিয়ে মঙ্গলবার রাস্তায় নামেন তিনি ৷ তাঁর সঙ্গে ছিলেন এলাকার একাধিক বিজেপি নেতা ও কর্মী ৷ যদিও গোটা বিষয়টিকে তৃণমূলের ছক বলে দাবি করেছেন হরিশচন্দ্রপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী মতিবুর রহমান এবং তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট ৷
গত 18 ফেব্রুয়ারি মালদা জেলার 12টি কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে বিজেপি ৷ তারপরেই জেলার বিভিন্ন জায়গায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন দলীয় কর্মীরা ৷ পার্টি অফিস ভাঙচুর, আগুন জ্বালিয়ে পথ অবরোধের মতো ঘটনাও ঘটে ৷ তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সেই ক্ষোভ অনেকটাই প্রশমিত হয় ৷ নিজেদের ক্ষোভ চাপা রেখে হরিশচন্দ্রপুরে প্রার্থী মতিবুর রহমানের সমর্থনে প্রচারে নামেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা ৷ এরই মধ্যে মঙ্গলবার ফের নতুন করে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে ৷
প্রসঙ্গত, 2012 সালের 2 ডিসেম্বর খুন হয়েছিলেন এলাকার ব্যবসায়ী কানাইয়ালাল আগরওয়াল ৷ তাঁর ভাই সবরমল আগরওয়ালের দাবি, সেই ঘটনায় খুনি কালাম নামে এক ব্যক্তি ৷ সে বিজেপি প্রার্থী মতিবুর রহমানের দাদা ৷ এমন একজন প্রার্থীকে তাঁরা কিছুতেই মেনে নিচ্ছেন না ৷
সবরমল আরও বলেন, “ আমি বিজেপিকে ভালোবাসি ৷ প্রার্থী হওয়ার পর মতিবুরকে অভিনন্দন জানাতেও যাই ৷ কিন্তু জানতে পারি, তাঁর দাদা কালাম আমার দাদাকে খুন করে জগন্নাথপুর ফরেস্টে ফেলে দিয়েছিল ৷ এই খবর জানার পর আমি মতিবুরকে কিছুতেই প্রার্থী হিসাবে মানতে পারছি না ৷ এলাকার বিজেপি নেতা-কর্মীরাও আমার সঙ্গে রয়েছেন ৷ আমরা এই কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়ে মানুষের কাছে ভোট চাইব ৷”
বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক বলেন, “ প্রথমে খানিকটা ক্ষোভ বিক্ষোভ থাকলেও আমরা মতিবুরকে প্রার্থী হিসাবে মেনে নিয়েছিলাম ৷ কিন্তু পরে জানতে পারি, তার দাদা এলাকারই একজন ব্যবসায়ীকে খুন করেছিল ৷ এরপর আমরা কিছুতেই মতিবুরকে প্রার্থী হিসাবে মানতে পারছি না ৷ আমরা বিজেপিকে মন থেকে ভালোবাসি ৷ কিন্তু এই প্রার্থীকে নয় ৷ তাই আমরা এই কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি ৷”
আরও পড়ুন : সমস্যা না মিটলে ভোট নয়, মালদার গ্রামে ভোট বয়কটের হুমকি
এ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে মতিবুর সাহেব প্রথমে কোনও কথা বলতে রাজি হননি ৷ একসময় সংবাদমাধ্যমের উপরেও কার্যত ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি ৷ শেষে তিনি শুধু বলেন, “ আমার কোনও দাদা নেই ৷ তৃণমূলের দালালরা এসব করছে ৷” এদিকে তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট ও এই কেন্দ্রের দলীয় পর্যবেক্ষক অনিরুদ্ধ সাহা বলেন, “বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বলে যারা দলের পতাকা ছিড়ছে, তাদের কীভাবে বিজেপি বলব ৷ প্রার্থী নিয়ে যাদের ক্ষোভ ছিল, তারা বসে আলোচনা করে মতিবুরকে প্রার্থী হিসাবে মেনে নিয়েছে ৷ মতিবুরও সব মিটিয়ে নিয়েছে ৷ আজ যারা এসব করছে, তারা অন্য দলের হয়ে খেলছে কিনা কীভাবে বলব ৷ কানাইয়ালালের বিষয় তো আজকের নয় ৷ এরা সব তৃণমূলের হয়ে খেলছে ৷”