মালদা, 14 এপ্রিল : একুশে মালদা জেলায় সম্ভবত সবচেয়ে জটিল অঙ্কের নির্বাচন হতে চলেছে রতুয়া বিধানসভা কেন্দ্রে । এই কেন্দ্রে তৃণমূলের সমর মুখোপাধ্যায়, মোর্চার কংগ্রেস প্রার্থী নাজেমা খাতুন, বিজেপির অভিষেক সিংহানিয়া যেমন লড়াইয়ের ময়দানে রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন নির্দল প্রার্থী পায়েল খাতুন । পায়েল খাতুনকে সমরবাবুর গোঁজ হিসাবে ধরে নিয়েছে রাজনৈতিক মহল । এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষায় উতরে দিতে পারে ফুলহর নদীর উপর নির্মিত নাককাটি ব্রিজ। স্থানীয় মানুষের অনেকের অনুমান সেটাই। কিন্তু সত্যিই কি তাই? সেটাই জানার চেষ্টা করেছে ইটিভি ভারত ।
রতুয়া কেন্দ্রের চারবারের বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায় । 1982, 1996, 2011 ও 2016 সালের নির্বাচনে জয় পান তিনি । প্রতিবারই কংগ্রেসের টিকিটে । প্রয়াত কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলেন । সেই সুবাদেই প্রণববাবু অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর মাধ্যমে ফুলহর নদীর উপর ব্রিজের অর্থ বরাদ্দ করতে পেরেছিলেন তিনি । তেমনটাই খবর জেলার রাজনৈতিক মহলে । 1.056 কিলোমিটার লম্বা এই ব্রিজের জন্য 2012 সালে প্রায় 450 কোটি টাকা বরাদ্দ হয় । পরবর্তীতে অবশ্য খরচ আরও বাড়ে । এই ব্রিজ দিয়ে বিহারের সঙ্গে মালদার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে । তবে এখনও সরকারিভাবে ব্রিজের উদ্বোধন হয়নি । চলছে জাতীয় সড়ক নির্মাণের কাজ ।
ফুলহরের ওপারে রয়েছে রতুয়া এক নম্বর ব্লকের দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত মহানন্দটোলা ও বিলাইমারি । তারপর বিহারের আমদাবাদ থানা এলাকা । মহানন্দটোলার অন্যদিকে গঙ্গা । এই গ্রামেই সমরবাবুর পৈতৃক বাড়ি । ব্রিজ নির্মাণের আগে এই দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের মানুষকে মালদা জেলার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য নৌকার উপরেই ভরসা করতে হত । শুখা মরসুমে তেমন সমস্যা না হলেও বর্ষায় ভয়ঙ্কর ফুলহর পেরিয়ে জেলার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করাটা সমস্যা হয়ে দাঁড়াত । সময় লেগে যেত দুই থেকে তিন ঘণ্টা । খরচও হত বেশ ভালো । রাতবিরেতে রোগী নিয়ে ঝামেলায় পড়তেন গ্রামবাসীরা । তবে এখনও তাঁদের প্রধান সমস্যা আরও একটি । গঙ্গা-ফুলহরের ভাঙন । এনিয়ে বিধায়ক কিছু করতে পারেননি বলেও অভিযোগ রয়েছে অনেকের ।
ফুলহরের ব্রিজ কি এবারের ভোটে সমরবাবুকে উতরে দিতে পারবে? মহানন্দটোলা থেকেই পাওয়া গেল মিশ্র প্রতিক্রিয়া । এলাকার বাসিন্দা নিখিলচন্দ্র মণ্ডল বলছেন,"ব্রিজ না থাকায় আগে আমাদের ভীষণ সমস্যা হত। ওপারে গিয়ে ফিরতে রাত হয়ে গেলে সেখানেই থেকে যেতে হত। নৌকায় নদী পার করতেও অনেক সময় লাগত । শুনেছি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের আত্মীয় হিসাবে সমর মুখোপাধ্যায় নাকি এই ব্রিজ করেছেন । এবারের ভোটে ব্রিজের সুবিধে পাবেন সমরবাবু ।"
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা সীতাংশু মণ্ডল আবার মনে করছেন, এই ব্রিজের সুফল সমরবাবুর খুব একটা পাবেন না । তিনি বলেন, "আমরা গরিব মানুষ । আগে নদী পারাপার করতে 20 টাকা লেগে যেত । রাত হয়ে গেলে নদীপাড়েই থেকে যেতে হত এখন সেসব ঝামেলা নেই । শুনেছি সমরবাবু নাকি এই ব্রিজ নিয়ে এসেছেন । কিন্তু এর সুফল তিনি খুব একটা পাবেন বলে মনে হয় না । এখনও ভাঙন সমস্যা মেটেনি । তাই এবার কেন্দ্র ও রাজ্যে একই সরকার হলে ভাঙনের সমস্যা মিটতে পারে । তবে এলাকার কেউ খুন করে সমরবাবুর কাছে চলে গেলে তার ব্যবস্থা বিধায়ক করে দেন । এলাকার মানুষের সাহায্যে আসেন তিনি ।"
আরও পড়ুন : রতুয়ায় বড় ধাক্কা তৃণমূলে, প্রায় দেড়শো জনকে নিয়ে বিজেপিতে জেলা সাধারণ সম্পাদক
নদীর এপারে ভালোয়ারা গ্রামের শাহজাহান শেখ বলেন, "ফুলহারের উপর ব্রিজ হওয়ায় এলাকার মানুষের অনেক সুবিধে হয়েছে । 22 বছর ধরে মহানন্দটোলায় আসছি । আগে সমস্যায় পড়তে হত । নদী পেরোতে অনেক খরচ হয়ে যেত । এখন সেসব নেই । বন্যা কিংবা ভাঙনের সমস্যা এখনও মেটেনি । ব্রিজের জন্য সমরবাবু কিছুটা সুবিধা পেলেও খুব বেশি পাবেন না । কারণ, একদিকে যেমন তাঁর দল পরিবর্তন করা অনেকে ভালোভাবে নেয়নি, তেমনই তিনি এলাকার বাকি সমস্যাগুলি মেটাতে কোনও উদ্যোগ নেননি ।"