মালদা, ২২ ডিসেম্বর : এই নদীর নামের সঙ্গে জড়িত মনসামঙ্গল ৷ কথিত আছে, লখিন্দরের শবদেহ ভেলায় চাপিয়ে এই নদী দিয়েই ভেসে যেতে দেখা গিয়েছিল বেহুলাকে ৷ তাই নদীর নামও বেহুলা ৷ মহানন্দা নদী থেকে বেরিয়ে কয়েক কিলোমিটার গিয়ে বেহুলা মিশেছে টাঙনে ৷ কিন্তু মানুষের ক্ষোভ স্রোতস্বিনী বেহুলার গতিপথ রুদ্ধ হয়েছে অনেকদিন আগেই ৷ নদীর বুকে তৈরি হয়েছে একাধিক ইটভাটা ৷ কারখানার বর্জ্য মিশছে নদীতে ৷ নদীতে জলজ প্রাণী তো দূরের কথা, মানুষও নামতে ভয় করে ৷ এই পরিস্থিতিতে 35 বছর ধরে বেহুলা সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন এলাকার মানুষ ৷ তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন মালদা জেলা পরিষদের তৎকালীন পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ সামাউন ৷ এলাকায় শিক্ষকতা করার সুবাদে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এই নদীর গুরুত্ব । কিন্তু তিনি উদ্যোগ নিলেও বেহুলা সংস্কারের কাজ শুরু করাতে পারেননি । লাল ফিতের ফাঁসেই বারবার আটকে গিয়েছে সেই প্রকল্প ৷ শেষ পর্যন্ত পুরাতন মালদার বর্তমান বিডিও’র উদ্যোগে আজ থেকে সেই কাজ শুরু হয়েছে ৷ এ-নিয়ে প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এলাকার মানুষ ৷
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরাতন মালদায় কাজে যোগ দেওয়ার পরেই বিডিও ইরফান হাবিব বেহুলা সংস্কার নিয়ে উদ্যোগ নেন। একাধিকবার এ-নিয়ে তিনি জেলা প্রশাসনের কাছে দরবার করেন ৷ 100 দিনের প্রকল্প তৈরি করে জমা দেন জেলাশাসকের দপ্তরে ৷ শেষ পর্যন্ত তাঁর সেই প্রকল্প অনুমোদন করে জেলা প্রশাসন ৷ চারটি পর্যায়ে এই কাজ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয় ৷ প্রথম পর্যায়ে মঙ্গলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের জলঙ্গা থেকে বেহুলা শ্মশান পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় কাজের সিদ্ধান্ত হয়েছে ৷ এর জন্য প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ হয়েছে প্রায় 88 লাখ টাকা ৷ আজ মঙ্গলবাড়ির নলডুবি এলাকায় বেহুলা নদীর ব্রিজের নীচ থেকে নদী সংস্কারের কাজ শুরু হয় ৷ উপস্থিত ছিলেন বিডিও ইরফান হাবিব, পুরাতন মালদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মৃণালিনী মণ্ডল মাইতি, মঙ্গলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সুরাইয়া বিবি সহ অন্যান্যরা ৷ এ-বিষয়ে এদিন বিডিও বলেন, “আজ থেকে বেহুলা সংস্কারের কাজ শুরু হল ৷ এই নদীর সংস্কার নিয়ে এখানকার মানুষ প্রায় 35 বছর ধরে সামাজিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে । এই নদী নিয়ে বেহুলা বার্তা নামে একটি ম্যাগাজিনও প্রকাশ হত ৷ এই নদী এবং স্থানীয় মানুষের অভিযোগ ও দুঃখ নিয়েই সেই ম্যাগাজিন বের হত ৷ মানুষের সেই দাবিকে মান্যতা দিতে প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলেন জেলা পরিষদের প্রাক্তন পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সামাউন সাহেব ৷ বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন ধরনের প্রচেষ্টার পর অবশেষে আমরা সফল হয়েছি ৷ জেলাশাসক, মঙ্গলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতকে এই কাজ করার অনুমোদন দিয়েছেন ৷ তবে এই কাজ করতে কিছু সমস্যা হবে ৷ বিশেষত কারখানার বর্জ্য এই নদীতে মেশায় এর জল দূষিত হয়ে পড়েছে ৷ ফলে কাজ করার ক্ষেত্রে একটু সমস্যায় পড়তে হবে ৷ তাই আমরা জল শুকিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি ৷ এটা যে শুধু 100 দিনের কাজ, তা নয় ৷ এই প্রকল্পে যেমন স্থানীয় মানুষ কাজ পাচ্ছেন, তেমনই এলাকার পরিবেশও বসবাসযোগ্য হবে ৷”
পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী বলেন, “আজ থেকে মঙ্গলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বেহুলা সংস্কারের কাজ শুরু হল ৷ প্রায় 35 বছর ধরে মানুষ এই নদী সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন ৷ আমাদের সরকার আসার পর শেষ পর্যন্ত এই কাজ আমরা শুরু করতে পারলাম ৷ এতে আমাদের খুব ভালো লাগছে ৷”