মালদা, ১২ জুন : বছরের পর বছর পঞ্চায়েত কিংবা ব্লক প্রশাসনের কাছে বার বার জানিয়েও যে কাজ হয়নি, দিদিকে বলো নম্বরে ফোন করে তিনমাসের মধ্যেই তার সুফল মিলল ৷ পুরাতন মালদায় আজ থেকে শুরু হয়েছে বেহুলা নদী সংস্কারের কাজ ৷ ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পেই এই কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী ৷
পুরাতন মালদায় মহানন্দা নদী থেকে বেরিয়ে কিছুদূর গিয়ে ফের মহানন্দায় মিশেছে বেহুলা নদী ৷ দীর্ঘদিন ধরে এই নদী হয়ে উঠেছে এলাকাবাসীর ডাস্টবিন ৷ নদীখাত প্রায় বুজে গিয়েছে ৷ স্থানীয় নারায়ণপুরের বেশ কয়েকটি কারখানার বর্জ্যও এই নদীতে ফেলা হয় ৷ এদিকে এই নদীর উপর নির্ভর করে মঙ্গলবাড়ি ও সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তত ১০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ৷ নদীতে স্নান কিংবা অন্য কাজ করতে গিয়ে তাঁদের অনেকেই চর্মরোগ কিংবা পেটের অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে প্রায়শই ৷ এনিয়ে তারা কয়েক বছর ধরে দুই পঞ্চায়েত সহ ব্লক প্রশাসনের কাছে নদী সংস্কারের আর্জি জানিয়ে আসছিল ৷ কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি৷ শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার এক বাসিন্দা কিছুদিন আগে দিদিকে বলোতে ফোন করে গোটা ঘটনা জানান৷ সেখান থেকেই তাঁকে আশ্বাস দেওয়া হয়, খুব দ্রুত ওই নদী সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হবে ৷
ওই গ্রামবাসী রবিউল ইসলাম বলেন, "আমাদের বেশ কয়েকটি গ্রামের ভরসা এই নদী ৷ কিন্তু এই নদীর জলপ্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে কিছু মানুষ ৷ নদীতে বিষাক্ত জিনিসপত্র ফেলা হচ্ছে ৷ এতে আমাদের অনেকেই চর্মরোগ কিংবা পেটের অসুখে বছরভর ভুগতে হচ্ছে ৷ এনিয়ে অনেক জায়গায় অভিযোগ জানিয়েছি ৷ নদী সংস্কারের আবেদন জানিয়েছি ৷ সব জায়গায় প্রত্যাখ্যাত হয়ে শেষ পর্যন্ত দিদিকে বলোতে ফোন করে বেহুলার পরিস্থিতি জানিয়েছিলাম ৷ সব শুনে সেখান থেকে আমাকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, খুব তাড়াতাড়ি বেহুলা সংস্কার করা হবে ৷ অবশেষে আজ থেকে সেই কাজ শুরু হয়েছে ৷ আজ ১০০ মিটার এলাকায় কচুরিপানা সাফ করা হয়েছে ৷ শুনেছি শুধু কচুরিপানা সাফ করাই নয়, এই নদীতে যাতে কোনও কারখানার বর্জ্য না মেশে তারও ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷ আমরা এতে খুব খুশি ৷"
এলাকার আরেক বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষক হেপজুর রহমান বলেন, "এই সমস্যা গত ৩০ বছর ধরে চলে আসছে ৷ নদী দূষিত হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে চাষি ও মৎস্যজীবীরাও প্রবল সমস্যায় রয়েছে ৷ আমরা বারবার জেলা পরিষদ ও BDO-কেও বিষয়টি জানিয়েছি ৷ কিন্তু কাজ হয়নি ৷ শেষ পর্যন্ত রবিউল ইসলামের চেষ্টায় সেই সমস্যা মিটতে চলেছে ৷ তবে নদী সুস্থ রাখতে হলে মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে৷ আমরা এই নদীর পুনরুজ্জীবন চাইছি ৷ এনিয়ে আমরা রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ৷"
পুরাতন মালদা পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী মৃণালিনী মণ্ডল মাইতি বলেন, "রাজ্য সরকারের নির্দেশে জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে ৷ প্রথমে বেহুলা নদীতে থাকা কচুরিপানা সহ অন্য আবর্জনা পরিষ্কার করা হবে ৷ পরবর্তীতে নদীখাত গভীর করার কাজ হওয়ার কথা রয়েছে ৷ একইসঙ্গে ওই নদীতে যাতে কোনও কারখানার বর্জ্য না মেশে তারও ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷'