মালদা, 7 সেপ্টেম্বর : রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে দুয়ারে সরকার প্রকল্পের ক্যাম্প । প্রতিটি ক্যাম্পে ভিড় আছড়ে পড়ছে মানুষ । মহিলাদের ভিড়ই বেশি । কারণ, মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত "লক্ষ্মীর ভাণ্ডার" প্রকল্প । কিন্তু সেই প্রকল্পের সুবিধে নিতে পারছেন না হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রসূতিরা । এই সরকারি প্রকল্পের সুবিধে পাইয়ে দিতে সেই মহিলাদের পাশে দাঁড়াল চাঁচল মহকুমা প্রশাসন । সরকারি প্রকল্পের ফর্ম নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে গেলেন খোদ মহকুমাশাসক । সঙ্গে ছিলেন বিডিও, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এবং হাসপাতাল সুপার । চিকিৎসাধীন প্রসূতিদের ফর্ম বিলি করলেন তাঁরা । সেই ফর্ম ফিল আপ করে জমাও দেবেন তাঁরাই ।
এই মুহূর্তে রাজ্যের অধিকাংশ মহিলার যেন একটাই গন্তব্য, দুয়ারে সরকার ক্যাম্প । শুধু যে দুঃস্থ মহিলারা সেই ক্যাম্পে ভিড় করছেন তা নয়, দেখা মিলছে মধ্যবিত্ত, এমনকি উচ্চ মধ্যবিত্ত মহিলাদেরও । প্রত্যেকেই সরকারের প্রকল্পের তালিকায় নাম তুলতে চান । ফর্ম সংগ্রহ ও জমা দিতে একাধিক ক্যাম্পে হুড়োহুড়িতে আহত হয়েছেন বহু মহিলা । তবু উৎসাহে ভাটা পড়েনি । কিন্তু সেই ক্যাম্পে গিয়ে ফর্ম সংগ্রহ ও জমা দিতে সমস্যায় পড়ছেন গর্ভবতীরা । গর্ভস্থ সন্তানের সুরক্ষার কথা ভেবে তাঁরা সাধারণত ক্যাম্পমুখো হচ্ছেন না । এবার সেদিকে নজর দিয়েছে চাঁচল মহকুমা প্রশসান । প্রাথমিকভাবে আজ চাঁচল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রসূতিদের ফর্ম বিলি করা হয়েছে । প্রসূতিদের জানানো হয়েছে, তাঁরা যেন পরিবারের লোকজন মারফৎ বাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় নথিপত্র আনিয়ে রাখেন । সেই নথি এলে তাঁরাই ফর্ম পূরণ করে জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন ।
আরও পড়ুন : Malda Duare Sarkar : নিরক্ষর গ্রামবাসীদের সরকারি প্রকল্পের ফর্ম পূরণ কন্যাশ্রীদের, অভিভূত বিডিও
আজ সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের ফর্ম নিয়ে হাসপাতাল যান মহকুমাশাসক কল্লোল রায় । সঙ্গে ছিলেন চাঁচল 1 নম্বর ব্লকের বিডিও সমীরণ ভট্টাচার্য ও ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অসিত মাহাতো । হাসপাতাল সুপার জয়ন্ত বিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে তাঁরা চিকিৎসাধীন প্রসূতিদের ফর্ম বিলি করেন । মহকুমাশাসক বলেন, "এই হাসপাতালে কয়েকজন মহিলা ভর্তি রয়েছেন । চিকিৎসাধীন থাকায় তাঁরা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে আবেদন করতে পারেননি । তাঁরা যাতে এই প্রকল্পের সুবিধে থেকে বঞ্চিত না হন, তার জন্য আমরা এখানেই তাঁদের ফর্ম ফিল আপ করাব । সেই ফর্ম জমা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে । দু’তিনদিনের মধ্যে সেই ফর্ম জমা হবে । সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধে নিতে মানুষের মধ্যে যথেষ্ট উৎসাহ রয়েছে । আমরাও চাই, প্রত্যেক মানুষ সেই সুবিধে পান। সরকারও সেটাই চাইছে ।"
মহকুমা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন হাসপাতাল সুপার জয়ন্ত বিশ্বাস। তিনি বলেন, "প্রসূতি ও গর্ভবতী মহিলাদের অনেকে হাসপাতালে ভর্তি থাকায় সরকারি প্রকল্পের ফর্ম ফিল আপ কিংবা জমা দিতে পারছেন না । তাঁদের কথা চিন্তা করে প্রশাসনিক কর্তারা হাসপাতালে এসে তাঁদের ফর্ম বিলি ও পূরণ করে জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন । এটা সত্যিই খুব ভালো পদক্ষেপ । আমাদেরও খুব ভাল লাগল । মহকুমা প্রশাসনকে এর জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি । আজ থেকে ফর্ম বিলি শুরু হল । প্রসূতি বিভাগে খুব তাড়াতাড়ি সংক্রমণ ছড়ায়। তাই আজ ফর্ম বিলি করে চলে যাওয়া হচ্ছে ।"
আরও পড়ুন : Malda Cut money : কাটমানি না দেওয়ায় আবাস যোজনার টাকা অন্যের অ্যাকাউন্টে, প্রশাসনের দ্বারস্থ রাজমিস্ত্রি
প্রশাসনের এই উদ্যোগে ভীষণ খুশি চিকিৎসাধীন সোমা দাস । রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের সামসীতে শ্বশুরবাড়ি তাঁর । সন্তান প্রসবের জন্য চাঁচলে বাবার বাড়িতে এসেছেন । আপাতত হাসপাতালে ভর্তি । তিনি বলেন, "আমার মতো আরও কয়েকজন গর্ভবতী এই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন । চিকিৎসাধীন থাকায় আমরা কেউ লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের ফর্ম ফিল আপ করে জমা দিতে পারিনি । আজ মহকুমাশাসক নিজে এসে আমাদের সেই ফর্ম দিয়েছেন । তাঁরা আমাদের বাড়ি থেকে নথিপত্র আনিয়ে রাখতে বলেছেন । পরে তাঁরাই ফর্ম ফিল আপ করে তা জমা দেওয়ার জন্য নিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন । প্রশাসনের এই উদ্যোগ আমার খুব ভাল লেগেছে ।"