মালদা, 23 জুন : একটাই আফসোস ৷ দাদা বেঁচে গিয়েছিল ৷ দাদাকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্যও করেছিল সে ৷ সেই দাদাই কাল হল তার ৷ তদন্তকারীদের সামনে এই নিয়ে আফসোসও করেছে আসিফ মহম্মদ ৷ এছাড়া তার আর কোনও বিষয়ে হেলদোল দেখা যায়নি ৷ তবে পরিবারের সকলকে খুনের পরিকল্পনা যে দীর্ঘদিন ধরেই আসিফ করেছিল, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই তদন্তকারীদের ৷
দফায় দফায় জেরা করে, তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, খুনের পরিকল্পনাকে বাস্তব রূপ দিতেই বাড়ি লাগোয়া গুদামঘর তৈরি করেছিল আসিফ ৷ তারই নকশাতেই সেই ঘর তৈরি হয় ৷ কিন্তু তদন্তকারীদের প্রশ্ন অন্য জায়গায় ৷ আসিফের বাবা জাওয়াদ আলি ওরফে রুনু একসময় পুলিশের গাড়ির চালক ছিলেন ৷ একাধিক ঘটনায় পুলিশি তদন্তের সাক্ষীও থেকেছেন তিনি ৷ তিনি কেন ছোট ছেলের জেদের কাছে মাথা নোয়ালেন ? কেনই বা অদ্ভুত নকশায় গুদামঘর তৈরি করা হয়েছিল ? আরও একটি বিষয় প্রশ্ন তুলছে তদন্তকারীদের মনে ৷ যেভাবে আসিফ নিজেকে বাড়িতে আলাদা করে রেখেছিল, যেভাবে দোতলার ঘরে সে নিজস্ব সাইবার ল্যাব বানিয়েছিল, তাতে তার বাবার কোনও সন্দেহ হয়নি ছোট ছেলের উপর ? তবে কী ছেলে তাঁকেও কোনও কারণে ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করেছিল ? সেটাই ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের ৷
তবে তদন্তকারীরা নিশ্চিত হয়েছেন, খুনের ঘটনায় আসিফের দাদা আরিফের কোনও হাত নেই ৷ ছোট ভাইয়ের পরিকল্পনা সম্পর্কে সে অবগত ছিল না ৷ আরিফ কলকাতায় থেকে পড়াশোনা করতেন ৷ খুব কমই বাড়িতে আসত সে ৷ যদিও করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাড়ি ফিরে আসেন তিনি ৷ ছোট ভাইয়ের পরিকল্পনার শিকার হয়েছিলেন তিনিও ৷ কিন্তু সম্ভবত ঘুমের ওষুধ মেশানো ঠান্ডা পানীয় কম খাওয়ার জন্যই, তাঁর জ্ঞান ফিরে আসে ৷
আরও পড়ুন : Kaliachak Murder Case : আসিফের ফাঁসি চায় গ্রামবাসী
কিন্তু আসিফ ঘুমের ওষুধ পেল কোথা থেকে ? পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানিয়েছেন, অত্যন্ত কড়া ঘুমের ওষুধ খেয়েই নেশা করত সে ৷ খুন করার আগে সেই ওষুধই ঠান্ডা পানীয়ের সঙ্গে মিশিয়েছিল সে ৷ জানা গিয়েছে, ওষুধ পেতে ভুয়ো প্রেসক্রিপশন তৈরি করেছিল আসিফ ৷ পুলিশকে আরিফ জানিয়েছে, ভাই বাড়ি থেকেই বেরোত না ৷ তাহলে সেই ওষুধ তাকে কে এনে দিত? এখন সেটাই জানার চেষ্টা করছে পুলিশ ৷ এনিয়েই জেরা করা হচ্ছে, দুই বন্ধু সাবির আলি ও মহম্মদ মাফুজকে ৷ দুই বন্ধুকে আগেই আগ্নেয়াস্ত্র সহ গ্রেফতার করে পুলিশ ৷
আরও পড়ুন : Kaliachak Murder Case : কীভাবে খুন-কীভাবেই বা বাঁচল দাদা, ঘটনার পুনর্নির্মাণে দেখাল আসিফ
খুনের পর মৃতদেহ থেকে যাতে কোনও দুর্গন্ধ না বেরোয়, তার জন্য রীতিমতো পড়াশোনা করেছিল আসিফ ৷ সম্ভবত কিছু রায়াসনিক ব্যবহার করেছিল সে ৷ বাড়ি থেকে রাসায়নিক স্প্রেয়ার উদ্ধার করেছে পুলিশ ৷ গুদামঘর থেকে মিলেছে রাসায়নিক রাখার জারও ৷ তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, একদিনে নয়, অন্তত পাঁচদিন ধরে মৃতদেহগুলিকে গুদামঘরের মেঝের নীচে পুঁতেছে আসিফ ৷ পাঁচদিনে মৃতদেহ থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানোর সম্ভাবনা ছিল ৷ তার জন্যই কী মৃতদেহে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছিল ? এনিয়ে পুলিশ সুপার জানান, উদ্ধার হওয়া রায়াসনিকের জার পরীক্ষা করে দেখবেন বিশেষজ্ঞরা ৷ সব মিলিয়ে যত সময় যাচ্ছে, 19 বছর বয়সী ঠান্ডা চোখের আসিফের অপরাধের ধরন চমকে দিচ্ছে দুঁদে পুলিশকর্তাদের ৷