মালদা, 29 জুন : রাজ্যে বর্ষা প্রবেশ করতেই উত্তরবঙ্গ জুড়ে শুরু হয়েছে ভারী বৃষ্টিপাত। বৃষ্টির জলে ক্রমাগত বাড়ছে নদী গুলির জলস্তর। বিশেষত, ফুঁসতে শুরু করেছে ফুলহর নদী, বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে এলাকায় জল ঢুকতে শুরু করেছে। সেচ দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, আপাতত বিপদ সীমার নিচে রয়েছে নদীর জলস্তর, তবে পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে।
গত বছর অক্টোবর মাসে রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের কাহালা গ্রাম পঞ্চায়েতের সূর্যাপুর এলাকায় ফুলহরের বাঁধের প্রায় 500 মিটার অংশ ভেঙে যায় ৷ ভাঙা বাঁধ দিয়ে জল ঢুকে রতুয়া 1 নম্বর ও হরিশ্চন্দ্রপুর 2 ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয় ৷ বহু বাড়িঘর ভেঙে পড়ে, পাশাপাশি কয়েক হাজার একর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েক লাখ মানুষ৷
জেলার সেচ দপ্তর ভাঙা বাঁধ অস্থায়ীভাবে মেরামতের উদ্যোগ নেয় ৷ গরমের মরশুমে সেই কাজ শুরু হয়েছিল, ভাঙা বাঁধ থেকে প্রায় 50মিটার ভিতরে বালির বস্তা দিয়ে নতুন একটি অস্থায়ী বাঁধ তৈরির কাজ শুরু হয় ৷ কিন্তু কয়েকদিন কাজ চলার পরেই লকডাউন হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় বাঁধ তৈরীর কাজ ৷ লকডাউন শিথিল হতেই ফের সেই কাজ শুরু হয় ৷ কিন্তু ততদিনে বর্ষা শুরু হয়ে যাওয়ায় প্রবল গতিতে বাড়তে শুরু করে গঙ্গা, ফুলহর ও মহানন্দা নদীর জলস্তর ৷
দু’দিন আগেই ফুলহর নদীর জল বাঁধ ছুঁয়ে ফেলে ৷ আজ সকালে নদীর জল নির্মীয়মান বাঁধের অংশ দিয়ে এলাকায় ঢুকতে শুরু করে ৷ খবর পেয়ে দুপুরে ঘটনাস্থানে ছুটে আসেন বাঁধের দায়িত্বে থাকা মহানন্দা এমব্যাঙ্কমেন্ট ডিভিশনের চিফ ইঞ্জিনিয়ার মহম্মদ বদিরুদ্দিন ৷
এলাকার বাসিন্দা শেখ মাইজুল বলেন, “লকডাউনে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ফের 15-20 দিন আগে বাঁধ সারাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে ৷ বর্ষার মধ্যে কাজ শুরু হওয়ায় নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। বাঁধের মুখ খোলা থাকলে নদীর জল অল্প অল্প করে ভিতরে ঢুকত৷ সেই জল কাছেই থাকা একটি ক্যানেলের মাধ্যমে মহানন্দায় চলে যেতে পারত ৷ কিন্তু বালির বস্তা ভেদ করে জল ঢুকতে শুরু করায় সমস্যা বেড়েছে ৷ যেকোনও মুহূর্তে জলের তোড়ে বালির বস্তার বাঁধ ভেঙে যেতে পারে ৷ তখন নদীর জলে রতুয়া, দেবীপুর, কাহালা, বাহারাল সহ বিভিন্ন এলাকা ভেসে যাবে ৷ এই সময় বাঁধের কাজ করে মানুষের কিছু লাভ হচ্ছে না, লাভ হচ্ছে কেবল ঠিকাদার আর নেতা-মন্ত্রীদের৷”
এলাকার আরেক বাসিন্দা সুকান্ত সিংহ বলেন, “গত বছরের অক্টোবর মাসে ফুলহরের বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল ৷ নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসেই বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু হওয়া উচিত ছিল৷ কিন্তু সেচ দপ্তর সেই সময় বাঁধ মেরামতির কোনও উদ্যোগ নেয়নি ৷ 20-25 দিন আগে তারা বালির বস্তা দিয়ে ভাঙা বাঁধের কিছুটা ভিতরে নতুন একটি বাঁধ তৈরি করার কাজ শুরু করে ৷ কিন্তু বালির বাঁধ কি নদীর জল আটকাতে পারে? নদীর জল বালির বাঁধ পেরিয়ে গ্রামের ভিতরে ঢুকতে শুরু করেছে ৷ এখন প্রশাসন কিছু তৎপরতা দেখাচ্ছে ৷
তিনি আরও বলেন, "এই বাঁধ তৈরীর জন্য এক কোটি 88 লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে ৷ কিন্তু কী কাজ হচ্ছে, বুঝতে পারছি না ৷ কিছু ঠিকাদাররাই কেবলএতে লাভবান হচ্ছে ৷ রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের সেচ দপ্তরের কাছে তিনি আবেদন জানিয়ে বলেন, "ফুলহরের বন্যায় প্রতি বছর এলাকার লক্ষাধিক মানুষ বানভাসি হচ্ছে ৷ কয়েক লক্ষ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে ৷ তাই স্থায়ীভাবে এই বাঁধ মেরামত করা হোক ৷ নাহলে আমরা প্রতি বছরই আমাদের বন্যার জলে ভাসতে হবে৷” তার বক্তব্যে সমর্থন জানান গ্রামের বাসিন্দা ইশা খান, সুশান্ত মণ্ডলরাও ৷
সেচ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, সূর্যাপুর এলাকায় ফুলহরের ভাঙা বাঁধের পাশে আরেকটি অস্থায়ী বাঁধ তৈরির জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে ৷ বাঁধ নির্মাণের বরাত পেয়েছে স্থানীয় এক ঠিকাদার সংস্থা ৷ যদিও বাঁধের দায়িত্বে থাকা মহানন্দা এমব্যাঙ্কমেন্ট ডিভিশনের চিফ ইঞ্জিনিয়ার মহম্মদ বাদিরুদ্দিন শেখ জানান, এই কাজের জন্য এক কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে৷ তিনি বলেন, “পরিস্থিতি এখনও আমাদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে৷ লকডাউন শিথিল হওয়ার পর আমরা কাজ শুরু করেছি ৷ নতুন মাটি ফেলার জন্য নির্মীয়মান বাঁধে কিছুটা কংস থেকে জল ঢুকছে, তবে আমরা সেই জল ঢোকা বন্ধ করার চেষ্টা করছি ৷ এই কাজ অনেক আগেই হওয়ার কথা ছিল ৷ জমির সমস্যা এবং লকডাউনের কারণে কাজ শুরু করতে দেরি হয় ৷ বর্ষার সময় নদীর জল যাতে গ্রামের ভিতরে ঢুকতে না পারে, আপাতত আমরা সেই চেষ্টা করছি৷ পরবর্তীতে বাঁধের স্থায়ী কাজ হবে৷”
জেলা সেচ দপ্তর থেকে জানানো হয়, আজ সকালে ফুলহর নদীর জলস্তর ছিল 26.43 মিটার, যা বিপদসীমা থেকে এক মিটার নীচে অবস্থান করছে ৷ অন্যদিকে গঙ্গার জলস্তর ছিল 23.05 মিটার, গঙ্গা নদীর বিপদসীমা 24.69 মিটার ৷ মহানন্দা নদী আজ সকালে 19.30 মিটার উচ্চতায় বয়েছে, এই নদীর বিপদসীমা 21 মিটার।