মালদা, 10 জুলাই : শুধু কলকাতা পুলিশে সাধারণ কনস্টেবল নয়, ভুয়ো পুলিশ সেজে প্রতারণায় ধৃত গাজোলের রবি মুর্মু কাজ করেছে সিআইডি বিভাগেও । কলকাতা পুলিশে চাকরি করার সময় সে ক্যারাটেতে ব্ল্যাক বেল্টও পেয়েছিল । শুধু লোভের বশে সে ধীরে ধীরে অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে ।
রবি মুর্মু সম্পর্কে প্রতিদিনই উঠে আসছে নতুন নতুন তথ্য । দীর্ঘদিন পরিবার কিংবা গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলেও তার সম্পর্কে জানেন গ্রামের বহু মানুষ । তবে তাঁরা কেউ ক্যামেরার সামনে মুখ খুলতে রাজি নন । একটাই ভয়, ক্যামেরায় মুখ দেখালে তদন্তের স্বার্থে পুলিশ তাঁদের ডাকতে পারে ।
গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, পুলিশে চাকরি পাওয়ার কিছুদিন পর থেকেই রবির আচরণে অসঙ্গতি ধরা পড়ছিল । তখন সে গ্রামেও আসত। তার জীবনযাত্রার মান বদলাতে থাকে । কথায় কথায় পকেট থেকে টাকার তোড়া বের করত । সে ভাল ক্যারাটে জানত । কলকাতা পুলিশের তরফে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ নিতে তাকে পাঠানো হয়েছিল থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় ।
থাইল্যান্ডেই সে ক্যারাটেতে ব্ল্যাক বেল্ট লাভ করে । সেখানে সে কিক বক্সিংও শিখেছিল । পরে ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে সে বাংলাদেশ যায় । সেখানে পদকও পেয়েছিল । এরপরই কলকাতা পুলিশে তার একটা ভাল জায়গা তৈরি হয়েছিল । তাকে নিয়ে নেওয়া হয় সিআইডি বিভাগে । প্রথমদিকে সে সেখানে ভালই কাজ করছিল ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রবির ছোটবেলার এক বন্ধু বলেন, " সিআইডিতে থাকাকালীন রবি সাপের বিষ পাচারে জড়িত আন্তর্জাতিক চোরাকারবারীদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে । বিষ পাচার করতে গিয়ে রবি ধরাও পড়ে । তারপরই তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় । সম্ভবত সেটা 2011 সাল । সেবারই গ্রামে শেষ দেখা গিয়েছিল রবিকে । তবে চাকরি চলে গেলেও আর গ্রামে ফিরে আসেনি রবি । "
তিনি আরও বলেন , কিছুদিন পর সে ফোন মারফত তাঁকে জানায়, কলকাতা পুলিশে বেশ কিছু ছেলের চাকরি করে দিয়েছে সে। গ্রামের কেউ পুলিশে চাকরি করতে চাইলে সে ব্যবস্থা করে দিতে পারে । তবে তার জন্য মোটা টাকা লাগবে । শুধু তাঁকেই নয়, গ্রামের একাধিক মানুষকে সে এভাবে ফোন করেছিল । তার ফাঁদে পা দিয়ে টাকা খুইয়েছেন অনেকে । ঘাকশোল গ্রাম ছাড়াও সে প্রতারণার ফাঁদে ফেলেছিল গাজোল, বাগসরাই থেকে শুরু করে বামনগোলা, পাকুয়াহাট, কেন্দপুকুর গ্রামেও ।
আরও পড়ুন : চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণায় গ্রেফতার রবি মুর্মু, হতাশ পরিবার
এহেন রবির ভবিষ্যৎ কী, তা জানতে মুখিয়ে রয়েছে গোটা গাজোল । সবারই এক প্রশ্ন, যে ছেলে লেখাপড়া ও ব্যবহারের জন্য সবার কাছের মানুষ ছিল, সে কীভাবে এতটা বদলে যেতে পারে?