ETV Bharat / state

বিবাহিত মহিলাদের অ্যাকাউন্টে রূপশ্রী প্রকল্পের টাকা, দুর্নীতির অভিযোগ মালদায়

author img

By

Published : Jul 4, 2021, 4:56 PM IST

দুঃস্থ পরিবারের মেয়েদের বিয়েতে আর্থিক সাহায্য করতে রাজ্য সরকার এই প্রকল্প চালু করেছে বেশ কয়েক বছর আগে ৷ অভিযোগ, সেই প্রকল্পের টাকা পকেটে ঢোকানোর নতুন পন্থা নিয়েছেন একশ্রেণির দালালরা ৷ অশিক্ষিত কিংবা অল্প শিক্ষিত মহিলাদের কার্যত অন্ধকারে রেখেই তাঁদের অ্যাকাউন্টে ঢোকানো হচ্ছে রূপশ্রীর টাকা ৷ সেই টাকার সিংহভাগ চলে যাচ্ছে দালালদের পকেটে ৷ মুখ বন্ধ করতে মহিলাদের অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা অবশ্য রেখে দেওয়া হচ্ছে ৷

একাধিক বিবাহিত মহিলার অ্যাকাউন্টে রূপশ্রী প্রকল্পের টাকা
একাধিক বিবাহিত মহিলার অ্যাকাউন্টে রূপশ্রী প্রকল্পের টাকা

মালদা, 4 জুলাই : স্বামী, সন্তান নিয়ে দিব্যি সংসার করছেন ৷ আচমকা জানতে পারলেন তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরকারি একটি প্রকল্পের টাকা ঢুকেছে ৷ কী প্রকল্প ? রূপশ্রী ৷ যে প্রকল্পে রাজ্য সরকার বিবাহযোগ্য মেয়ের বিবাহের সময় খরচ বাবদ 25 হাজার টাকা সাহায্য করে ৷ কিন্তু, সেই প্রকল্পের টাকা বিবাহিত মহিলাদের অ্যাকাউন্টে ঢুকছে বলে অভিযোগ উঠল মালদায় ৷

এই যেমন কালিয়াচক 2 নম্বর ব্লকের পঞ্চানন্দপুর 1 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চানন্দপুর গ্রামের রিনা বিবি ৷ 14 বছর আগে তাঁর বিবাহ হয়েছে ৷ একটি 13 বছরের কন্যাও আছে ৷ কিন্তু তাঁর অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে রূপশ্রী প্রকল্পের 25 হাজার টাকা ৷ একই রকমভাবে পঞ্চানন্দপুর 1 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সুলতানটোলার বছর 30-র চানো বিবি ৷ সাত বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়েছে ৷ তাঁর চারটি সন্তান আছে ৷ তাঁর অ্যাকাউন্টেও এসেছে টাকা ৷ আবিরটোলার আতিকা খানম একাধিক সন্তান-সন্ততি নিয়ে ভরপুর সংসার করেন ৷ তিনিও পেয়েছেন রূপশ্রীর টাকা ৷ তবে শুধু এই তিনজনই নন, পঞ্চানন্দপুরের একাধিক বিবাহিত মহিলার অ্যাকাউন্টেই ঢুকেছে রূপশ্রী প্রকল্পের টাকা ৷

দুঃস্থ পরিবারের মেয়েদের বিয়েতে আর্থিক সাহায্য করতে রাজ্য সরকার এই প্রকল্প চালু করেছে বেশ কয়েক বছর আগে ৷ এখন সেই প্রকল্পের টাকা পকেটে ঢোকানোর নতুন পন্থা নিয়েছেন একশ্রেণির দালালরা ৷ অশিক্ষিত কিংবা অল্প শিক্ষিত মহিলাদের কার্যত অন্ধকারে রেখেই তাঁদের অ্যাকাউন্টে ঢোকানো হচ্ছে রূপশ্রীর টাকা ৷ সেই টাকার সিংহভাগ চলে যাচ্ছে দালালদের পকেটে ৷ মুখ বন্ধ করতে মহিলাদের অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা অবশ্য রেখে দেওয়া হচ্ছে ৷

এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে বেশ কিছু মহিলা, তাঁদের পরিবারের সদস্য, এমনকি কয়েকজন গ্রামবাসী বিডিওকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ৷ সবার অভিযোগ, এই ঘটনায় পঞ্চায়েত কর্মীদের একাংশের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন শাসকদলের প্রতিনিধিরাও ৷ অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিডিও ৷ তাঁর আশ্বাস, ছাড়া হবে না কাউকেই ৷

অর্থ প্রাপক রিনা বিবি বলছেন, “খালেক শেখ নামে পঞ্চায়েতের একজন সুপারভাইজার আমার অ্যাকাউন্টে 25 হাজার টাকা ঢুকিয়েছে ৷ সেটা রূপশ্রী প্রকল্পের টাকা ৷ খালেক আমার কাছ থেকে 12 হাজার টাকা নিয়েছে ৷ তবে ও রূপশ্রীর কথা বলেনি ৷ পরে ব্যাঙ্কের পাশবই আপডেট করালে বিষয়টি আমরা জানতে পারি ৷ এনিয়ে আমার স্বামী ব্লক অফিসে অভিযোগ জানিয়েছে ৷”

আতিকা বলছেন, “100 দিন কাজ প্রকল্পের টাকার কথা বলে পঞ্চায়েতের সুপারভাইজার বাপ্পা শেখ আমার কাছ থেকে যাবতীয় নথিপত্র নিয়ে যায় ৷ তাঁর কিছুদিন পর আমার অ্যাকাউন্টে 25 হাজার টাকা ঢোকে ৷ বাপ্পা আমার কাছ থেকে 22 হাজার টাকা নিয়ে নেয়৷ তিন হাজার টাকা আমার অ্যাকাউন্টে রেখে দেয়৷ পরে পাশবই আপডেট করে দেখি, ওই টাকা রূপশ্রী প্রকল্পের ৷ পরে আমার ভাসুর এনিয়ে বিডিওর কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ৷”

এই দুর্নীতির খবর চাউর হতেই সরব হয়েছেন এলাকার মানুষজন ৷ তাঁরা বিডিওকে অভিযোগ জানিয়েছেন ৷ তাঁদের একজন নয়াটোলার রাকিব শেখ ৷ তিনি বলেন, “পঞ্চায়েতের সুপারভাইজার খালেক শেষ আমার বন্ধু রিন্টু শেখের বউয়ের অ্যাকাউন্টে বেআইনিভাবে রূপশ্রী প্রকল্পের টাকা ঢুকিয়ে সেই টাকা আত্মসাৎ করেছে ৷ এই দুর্নীতি কিছুতেই মানতে পারছি না ৷ এতে গরিব পরিবারের মেয়েরা বঞ্চিত হচ্ছে ৷ শুধু খালেক কিংবা বাপ্পা নয়, এর সঙ্গে পঞ্চায়েত প্রধান থেকে শুরু করে আরও অনেকে জড়িত ৷ কারণ, বিয়ের শংসাপত্র একমাত্র প্রধানই দিতে পারেন ৷ এই ভ্রষ্টাচারের জন্য গরিব আরও গরিব হচ্ছে, নেতারা বড়লোক হচ্ছে৷ তাই আমরা এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি ৷’’

গোটা ঘটনায় মূল অভিযুক্ত বাপ্পা শেখ কিংবা খালেক শেখের সন্ধান পাওয়া যায়নি ৷ সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে গিয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধান রিজিয়া বিবিও ৷ অবশ্য তাঁকে ঢাল করে পঞ্চায়েতের যাবতীয় কাজকর্ম পরিচালনা করেন তাঁর স্বামী মুকুল হোসেন ৷ সেই মুকুলবাবুর বক্তব্য, “রূপশ্রী প্রকল্পে প্রধানের কোনও ভূমিকা নেই ৷ পঞ্চায়েত সদস্যরাই সব কিছু করেন ৷ ব্লক থেকে উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে প্রকল্পের টাকা ঢোকে ৷ তাই এক্ষেত্রে কে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তা আমরা বলতে পারব না ৷ অভিযোগের কপিও আমি দেখিনি ৷ এই পঞ্চায়েতে তিন হাজার লোকের বসবাস ৷ কার বিয়ে হয়েছে, কার হয়নি, তা প্রধানের পক্ষে দেখা সম্ভব নয় ৷”

একাধিক বিবাহিত মহিলার অ্যাকাউন্টে রূপশ্রী প্রকল্পের টাকা

অভিযোগ পেয়েই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন কালিয়াচ 2 নম্বর ব্লকের বিডিও অনির্বাণ সেনগুপ্ত ৷ তিনি বলেন, “এই অভিযোগের তদন্তে বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে ৷ তদন্তের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে৷ আশা করা যাচ্ছে, কয়েকদিনের মধ্যেই অপরাধীদের চিহ্নিত করা যাবে ৷ এমন ঘটনায় দোষীদের কিছুতেই ছাড়া হবে না ৷ কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷”

মালদা, 4 জুলাই : স্বামী, সন্তান নিয়ে দিব্যি সংসার করছেন ৷ আচমকা জানতে পারলেন তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরকারি একটি প্রকল্পের টাকা ঢুকেছে ৷ কী প্রকল্প ? রূপশ্রী ৷ যে প্রকল্পে রাজ্য সরকার বিবাহযোগ্য মেয়ের বিবাহের সময় খরচ বাবদ 25 হাজার টাকা সাহায্য করে ৷ কিন্তু, সেই প্রকল্পের টাকা বিবাহিত মহিলাদের অ্যাকাউন্টে ঢুকছে বলে অভিযোগ উঠল মালদায় ৷

এই যেমন কালিয়াচক 2 নম্বর ব্লকের পঞ্চানন্দপুর 1 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চানন্দপুর গ্রামের রিনা বিবি ৷ 14 বছর আগে তাঁর বিবাহ হয়েছে ৷ একটি 13 বছরের কন্যাও আছে ৷ কিন্তু তাঁর অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে রূপশ্রী প্রকল্পের 25 হাজার টাকা ৷ একই রকমভাবে পঞ্চানন্দপুর 1 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সুলতানটোলার বছর 30-র চানো বিবি ৷ সাত বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়েছে ৷ তাঁর চারটি সন্তান আছে ৷ তাঁর অ্যাকাউন্টেও এসেছে টাকা ৷ আবিরটোলার আতিকা খানম একাধিক সন্তান-সন্ততি নিয়ে ভরপুর সংসার করেন ৷ তিনিও পেয়েছেন রূপশ্রীর টাকা ৷ তবে শুধু এই তিনজনই নন, পঞ্চানন্দপুরের একাধিক বিবাহিত মহিলার অ্যাকাউন্টেই ঢুকেছে রূপশ্রী প্রকল্পের টাকা ৷

দুঃস্থ পরিবারের মেয়েদের বিয়েতে আর্থিক সাহায্য করতে রাজ্য সরকার এই প্রকল্প চালু করেছে বেশ কয়েক বছর আগে ৷ এখন সেই প্রকল্পের টাকা পকেটে ঢোকানোর নতুন পন্থা নিয়েছেন একশ্রেণির দালালরা ৷ অশিক্ষিত কিংবা অল্প শিক্ষিত মহিলাদের কার্যত অন্ধকারে রেখেই তাঁদের অ্যাকাউন্টে ঢোকানো হচ্ছে রূপশ্রীর টাকা ৷ সেই টাকার সিংহভাগ চলে যাচ্ছে দালালদের পকেটে ৷ মুখ বন্ধ করতে মহিলাদের অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা অবশ্য রেখে দেওয়া হচ্ছে ৷

এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে বেশ কিছু মহিলা, তাঁদের পরিবারের সদস্য, এমনকি কয়েকজন গ্রামবাসী বিডিওকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ৷ সবার অভিযোগ, এই ঘটনায় পঞ্চায়েত কর্মীদের একাংশের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন শাসকদলের প্রতিনিধিরাও ৷ অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিডিও ৷ তাঁর আশ্বাস, ছাড়া হবে না কাউকেই ৷

অর্থ প্রাপক রিনা বিবি বলছেন, “খালেক শেখ নামে পঞ্চায়েতের একজন সুপারভাইজার আমার অ্যাকাউন্টে 25 হাজার টাকা ঢুকিয়েছে ৷ সেটা রূপশ্রী প্রকল্পের টাকা ৷ খালেক আমার কাছ থেকে 12 হাজার টাকা নিয়েছে ৷ তবে ও রূপশ্রীর কথা বলেনি ৷ পরে ব্যাঙ্কের পাশবই আপডেট করালে বিষয়টি আমরা জানতে পারি ৷ এনিয়ে আমার স্বামী ব্লক অফিসে অভিযোগ জানিয়েছে ৷”

আতিকা বলছেন, “100 দিন কাজ প্রকল্পের টাকার কথা বলে পঞ্চায়েতের সুপারভাইজার বাপ্পা শেখ আমার কাছ থেকে যাবতীয় নথিপত্র নিয়ে যায় ৷ তাঁর কিছুদিন পর আমার অ্যাকাউন্টে 25 হাজার টাকা ঢোকে ৷ বাপ্পা আমার কাছ থেকে 22 হাজার টাকা নিয়ে নেয়৷ তিন হাজার টাকা আমার অ্যাকাউন্টে রেখে দেয়৷ পরে পাশবই আপডেট করে দেখি, ওই টাকা রূপশ্রী প্রকল্পের ৷ পরে আমার ভাসুর এনিয়ে বিডিওর কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ৷”

এই দুর্নীতির খবর চাউর হতেই সরব হয়েছেন এলাকার মানুষজন ৷ তাঁরা বিডিওকে অভিযোগ জানিয়েছেন ৷ তাঁদের একজন নয়াটোলার রাকিব শেখ ৷ তিনি বলেন, “পঞ্চায়েতের সুপারভাইজার খালেক শেষ আমার বন্ধু রিন্টু শেখের বউয়ের অ্যাকাউন্টে বেআইনিভাবে রূপশ্রী প্রকল্পের টাকা ঢুকিয়ে সেই টাকা আত্মসাৎ করেছে ৷ এই দুর্নীতি কিছুতেই মানতে পারছি না ৷ এতে গরিব পরিবারের মেয়েরা বঞ্চিত হচ্ছে ৷ শুধু খালেক কিংবা বাপ্পা নয়, এর সঙ্গে পঞ্চায়েত প্রধান থেকে শুরু করে আরও অনেকে জড়িত ৷ কারণ, বিয়ের শংসাপত্র একমাত্র প্রধানই দিতে পারেন ৷ এই ভ্রষ্টাচারের জন্য গরিব আরও গরিব হচ্ছে, নেতারা বড়লোক হচ্ছে৷ তাই আমরা এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি ৷’’

গোটা ঘটনায় মূল অভিযুক্ত বাপ্পা শেখ কিংবা খালেক শেখের সন্ধান পাওয়া যায়নি ৷ সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে গিয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধান রিজিয়া বিবিও ৷ অবশ্য তাঁকে ঢাল করে পঞ্চায়েতের যাবতীয় কাজকর্ম পরিচালনা করেন তাঁর স্বামী মুকুল হোসেন ৷ সেই মুকুলবাবুর বক্তব্য, “রূপশ্রী প্রকল্পে প্রধানের কোনও ভূমিকা নেই ৷ পঞ্চায়েত সদস্যরাই সব কিছু করেন ৷ ব্লক থেকে উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে প্রকল্পের টাকা ঢোকে ৷ তাই এক্ষেত্রে কে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তা আমরা বলতে পারব না ৷ অভিযোগের কপিও আমি দেখিনি ৷ এই পঞ্চায়েতে তিন হাজার লোকের বসবাস ৷ কার বিয়ে হয়েছে, কার হয়নি, তা প্রধানের পক্ষে দেখা সম্ভব নয় ৷”

একাধিক বিবাহিত মহিলার অ্যাকাউন্টে রূপশ্রী প্রকল্পের টাকা

অভিযোগ পেয়েই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন কালিয়াচ 2 নম্বর ব্লকের বিডিও অনির্বাণ সেনগুপ্ত ৷ তিনি বলেন, “এই অভিযোগের তদন্তে বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে ৷ তদন্তের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে৷ আশা করা যাচ্ছে, কয়েকদিনের মধ্যেই অপরাধীদের চিহ্নিত করা যাবে ৷ এমন ঘটনায় দোষীদের কিছুতেই ছাড়া হবে না ৷ কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷”

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.