মালদা, 24 অগস্ট: রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফিরে চপ, ঘুগনি, মদ বিক্রির পরামর্শ দেন ৷ এহেন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনায় মুখর হলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর ৷ বৃহস্পতিবার মিজোরামে সেতু দুর্ঘটনায় মৃতদের বাড়িতে যাওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর মন্তব্যের জন্য নিশানা করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী ৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "শেষে তো মদের দোকান আছেই ৷ মদ বেচবে ৷ তোমাদের অভাব হবে না ৷” রাজ্যের শ্রমজীবী মানুষের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর এই অমানবিক মন্তব্য মেনে নেওয়া যায় না বলে এদিন মন্তব্য করেন অধীর ৷ একই সঙ্গে তিনি বলেন, "আমি তাঁর এমন মন্তব্যের নিন্দা জানাই ৷"
এদিন মৃত শ্রমিকদের বাড়ি যাওয়ার আগে কোতোয়ালি ভবনে অধীর বলেন, “দেশের প্রতিটি রাজ্যে এখন বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিড় ৷ তাঁদের মধ্যে মুর্শিদাবাদ আর মালদা জেলার বাসিন্দা সবচেয়ে বেশি ৷ মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে এই শ্রমিকদের নিরাপত্তা, আর্থিক নিশ্চয়তার ব্যবস্থা করতে একজন মন্ত্রীকে নিয়োগ করতে বলেছিলাম ৷ রাজ্যের বহু পরিযায়ী শ্রমিক আরবে কর্মরত ৷ তাঁরা আরও দুর্দশায় রয়েছেন ৷ সেখানে কেউ মারা গেলে তাঁদের দেহও বাড়িতে ফিরবে না ৷ দালালদের ফাঁদে পা দিয়ে তাঁদের অনেকেই দেশ ছেড়েছেন ৷ কিন্তু এলাকায় কাজ না-থাকলে মানুষকে বাইরে যেতেই হবে ৷ তাই কোথাও পরিযায়ী শ্রমিকরা মারা গেলে তালিকায় বাংলার নামই আগে চলে আসে ৷" তাঁর অভিযোগ, এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সবসময় পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফিরে আসতে বলেন ৷ মুখ্যমন্ত্রী কেন বলতে পারছেন না, ফিরে আসলে তিনি শ্রমিকদের জন্য উন্নত কাজের ব্যবস্থা করে দেবেন এমন পরামর্শ দিতে পারেন না বলে অভিযোগ অধীরের ৷
এদিন অধীর চৌধুরী বলেন, "শ্রমিকরা কেন রাজ্যে ফিরে আসবেন! আসলে মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন, এই শ্রমিকরা ফিরে এসে চপ-ঘুগনি বিক্রি করুক ৷ আর শেষে তো মদ রয়েছেই ৷ মদ বিক্রি করে খাও ৷ ডিএ দেওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, টাকা নেই ৷ আবার তিনিই পরিযায়ী শ্রমিকদের বলছেন, ফিরে এস, টাকার অভাব নেই ৷ আসলে তিনি জানেনই না, এ রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা কত ৷ তাঁর কাছে এনিয়ে কোনও পরিসংখ্যানই নেই ৷ অথচ এই শ্রমিকদের টাকাতেই রাজ্যের অর্থনীতি চলে ৷ কিন্তু এই শ্রমিকদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কোনও ভাবনা নেই ৷"
আরও পড়ুন: খেজুরিতে শুভেন্দুর সভা আটকানোর প্রচেষ্টা, রাজ্যকে ভর্ৎসনা হাইকোর্টের
বুধবার পর্যন্ত অখ্যাত ছিল কোকলামারি চৌদুয়ার গ্রাম ৷ রাতারাতি এই গ্রামই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ৷ মিজোরামে নির্মীয়মান রেল ব্রিজ ভেঙে শ্রমিকদের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের বেশিরভাগই এই গ্রামের বাসিন্দা ৷ লোকসভার বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরী আসেন এদিন ৷ মৃতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে অধীর সেখান থেকেই ফোনে কথা বলেন মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাংগার সঙ্গে ৷ কথা বলেন রেল বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গেও ৷ সবার কাছেই আবেদন রাখেন, মৃতদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণের পরিমাণ যেন বাড়িয়ে দেওয়া হয় ৷ সেখানে তিনি বলেন, “রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ব্যস্ত থাকায় তাঁর সঙ্গে আজ কথা হল না ৷ তবে রেলবোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বললাম ৷ জানালাম, দু’লাখ টাকা ক্ষতিপূরণে মৃতদের পরিবারের কিছু হবে না ৷ ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়ানো হোক ৷ আমি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকেও বলছি, আপনি পুজো কমিটিকে 70 হাজারের জায়গায় 70 লাখ টাকা দিন ৷ কিন্তু এই শ্রমিকদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন ৷ মৃতদের বাড়ির লোকজন কাল কী খাবেন, জানেন না ৷ এঁদের পাশে কেউ নেই ৷ আমি ফোন করলে মুখ্যমন্ত্রী ধরবেন না ৷ তাই আমি সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে তাঁকে এই বার্তা দিচ্ছি ৷ দু’লাখ টাকা দিয়ে এই পরিবারগুলির সঙ্গে উপহাস করবেন না ৷ মালদাবাসীর কাছেও আমার আবেদন, এই দুঃস্থ মানুষগুলোকে যথাসাধ্য সাহায্য করুন ৷”