মালদা, 3 মে: কল আছে, জল নেই ৷ গ্রামের পুকুরে জল আছে ৷ কিন্তু দূষিত হওয়ায় তা কাজে লাগে না ৷ যদিও ঠেলায় পড়ে এখন সেই জলই ব্যবহার করছেন গ্রামের বউরা ৷ কয়েকটি পরিবারের স্ত্রী-পুত্রবধূ জলের সংকট সহ্য করতে না-পেরে বাপের বাড়ি ফিরে গিয়েছেন ৷ অনেকে বাপের বাড়ি পাঠানোর জন্য স্বামীর কাছে আর্জি জানাচ্ছেন ৷ গরম পড়তেই এই জল সংকট দেখা দিয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের মুড়াগাছি গ্রামে ৷ সংকটের কথা স্বীকার করে নিচ্ছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও ৷ সংকট মেটাতে তাঁরা দ্রুত বিডিও'র হস্তক্ষেপ দাবি করছেন ৷
মুড়াগাছি গ্রামে প্রায় 400 পরিবারের বাস ৷ স্থানীয়রা বলছেন, এবার গরম পড়তেই গ্রামের ভূগর্ভস্থ জলস্তর অনেক নীচে নেমে গিয়েছে ৷ বেশিরভাগ বাড়িতে নলকূপ থাকলেও তা দিয়ে জল উঠছে না ৷ ফলে পুরুষরা অনেক দূরে চাষের ক্ষেতে থাকা সাবমার্সিবল পাম্প থেকে পানীয় জল আনতে বাধ্য হচ্ছেন ৷ গ্রামের পুকুরের দূষিত জল দিয়ে বাড়ির কাজকর্ম সারতে হচ্ছে সবাইকে ৷ অনেকে আবার সেই জলেই ভাত রান্না করছেন ৷ এভাবেই চলছে প্রায় দু'মাস ৷
প্রায় প্রতি বছরই গরমের সময় পানীয় জলের এমন সংকট দেখা দেয় ৷ কিন্তু এখনও গ্রামে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পাইপ লাইন বসেনি ৷ বছর চারেক আগে প্রশাসনের তরফে দুটো সাবমার্সিবল পাম্প বসানো হয়েছিল বটে ৷ কিন্তু মাসখানেক যেতে না-যেতেই দুষ্কৃতীরা পাম্প দুটি চুরি করে নিয়ে যায় ৷ তারপর থেকে এই গ্রামের দিকে আর কেউ মুখ তুলে তাকায়নি ৷ এমনকী স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যও নির্বিকার ৷
অনেকটা দূরে ক্ষেতের সাবমার্সিবল পাম্প থেকে পানীয় জল আনছিলেন গ্রামের বাসিন্দা সাদ্দাক আলি ৷ তিনি বলেন, "দু’মাইল দূরের জমিতে থাকা সাবমার্সিবল পাম্প থেকে পানীয় জল আনছি ৷ গ্রামের কোনও নলকূপ থেকে পানি উঠছে না ৷ কেউ পানি খেতে পারছে না ৷ বাচ্চারা পানির জন্য কান্নাকাটি করছে ৷ সরকার আমাদের কোনও কথা শুনছে না ৷ আমরা চাই, গ্রামে দ্রুত সাবমার্সিবল পাম্প বসানো হোক ৷" আরেক গ্রামবাসী মহম্মদ ওয়াজুদ্দিন বলেন, "গ্রামে পানির বড্ড অভাব ৷ পানির জ্বালায় বউ, ছেলের বউ, সবাই বাপের বাড়ি চলে যেতে চাইছে ৷ মাঠ থেকে শ্যালোর পানি আনতে হচ্ছে ৷ পানির জ্বালায় এখন সংসারে অশান্তি ৷ সমস্যার কথা সবাইকে বলেছি ৷ কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না ৷ মেম্বার নিজের বাড়িতে পাম্প বসিয়ে নিয়েছে ৷ আমাদের পানি দেয় না ৷"
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যকে না পাওয়া গেলেও হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ কেরামুদ্দিন আহমেদ মুড়াগাছি গ্রামে পানীয় জলের সংকটের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ৷ তিনি বলেন, "গোটা রমজান মাস এই গ্রামের বাসিন্দা প্রবল জলকষ্টে কাটিয়েছেন ৷ প্রায় দু'মাস ধরে গ্রামে জলের সংকট ৷ ভূগর্ভস্থ জলস্তর অনেক নীচে নেমে গিয়েছে ৷ পানীয় জলের অভাবে গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে মিড-ডে মিল রান্না করা যায় না ৷ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেও রান্না বন্ধ রয়েছে ৷ বিষয়টি বিডিও অনির্বাণ বসুকে জানিয়েছি ৷ তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ৷"
আরও পড়ুন: কল আছে কিন্তু জল নেই, গরমে জলকষ্টে মজিলপুরের বাসিন্দারা