ETV Bharat / state

"মাই হার্ট, ইয়োর হার্ট", হিরো হওয়ার বার্তা দিচ্ছে বিশ্ব হৃদয় দিবস - কলকাতা

ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে'তে এবারের থিম "মাই হার্ট, ইয়োর হার্ট" ৷

ছবিটি প্রতীকী
author img

By

Published : Sep 29, 2019, 7:00 AM IST

Updated : Oct 1, 2019, 6:06 AM IST

কলকাতা, 29 সেপ্টেম্বর : হার্টের অসুখ যখন থাবা বসায়, তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরোটা ধরা যায় না । তাই ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হওয়ার পরেও বাঁচানো যায় না রোগীকে । ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে'র আগে এই কথা বললেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শুভানন রায় । চলতি বছরের ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে'র থিম হল - "মাই হার্ট, ইয়োর হার্ট"। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে বন্ধু, পরিবারের সদস্য সহ যে কোনও মানুষের কাছে হার্টের হিরো হয়ে ওঠার বার্তা দিচ্ছে এই থিম ৷

গোটা পৃথিবীতে যদি অসুখের জেরে মৃত্যুর হার দেখা হয়, তাহলে প্রথম দিকেই থাকবে হার্টের অসুখ ৷ শুভাননবাবু বলেন, "মুশকিল হল, এই অসুখ একবার যখন থাবা বসাবে, তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসা পুরোটা ধরতে পারে না । ঠিক সময়ে চিকিৎসা করেও আমরা মানুষকে বাঁচাতে পারি না । সেজন্য সচেতনভাবে কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত । যেমন প্রতিরোধ । এটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি । কারণ, প্রিভেনশন ইজ় বেটার দ্যান কিয়োর । যাঁরা হার্টের অসুখের চিকিৎসা করেন, তাঁদের সকলের এটা মনে রাখা উচিত, হার্টের অসুখকে প্রতিরোধ করতে গেলে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে এগোতে হবে । মানুষকে বোঝাতে হবে । সচেতনতা আনতে হবে‌ । এখনও দেখি হার্টের অসুখ সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষের সচেতনতা নেই।"

এখন পরিস্থিতি কেমন ? শুভাননবাবু বলেন, "একটা দেশ যখন উন্নয়নশীল থেকে উন্নতের দিকে যায়, তখন হার্টের অসুখ বাড়ে । আমরা দেখেছি 1960 সালে অ্যামেরিকার যখন আর্থিক জোয়ার এসেছিল, তখন হার্টের অসুখ সবথেকে বেশি হয়েছিল ৷ যখন কোনও দেশ উন্নত হয়ে যায়, তখন হার্টের অসুখ কমে । তারা বুঝতে পারে, কোন কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত । জাঙ্ক ফুড খাওয়া উচিত নয় ৷ নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত, ওজন কম রাখা উচিত । সচেতনভাবে এগুলি করলে হার্টের অসুখ কমে যায় ।" অ্যামেরিকায় কেন এমন হয়েছিল? শুভাননবাবু বলেন, "বৃদ্ধারা দেখতেন, তাঁদের নাতি-নাতনিরা রুটির সঙ্গে মাখন খেতে পারছে না, দেখা গেল আর্থিক জোয়ার আসার পর মাখন সহজলভ্য হয়ে উঠল । যতটা দেওয়া উচিত, তার থেকে বেশি খাওয়া শুরু হল । জাঙ্ক ফুডের প্রচলন তখন থেকেই শুরু হল । মানুষের হাতে হঠাৎ টাকা এসে গেলে, সেটা খাওয়া-দাওয়ায় বেশি খরচ হয় ৷ কম হাঁটা-চলা হয়, কায়িক শ্রম কমে যায় ৷"

Heart
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শুভানন রায়

শুভাননবাবু বলেন, "হার্টের অসুখ হওয়ার দুটো কারণ আছে । একটা হচ্ছে কায়িক শ্রম কমে যাওয়া । দ্বিতীয়ত, জাঙ্ক ফুড খাওয়া । অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে সঙ্গে এরকম পরিস্থিতি আসে। আমাদের দেশ উন্নয়নশীল থেকে উন্নতের দিকে যাচ্ছে । এই কারণে আমাদের দেশে হার্টের অসুখ বেড়েছে । ভয়ঙ্করভাবে বেড়েছে । আমরা দেখেছি, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানুষেরও হার্টের অসুখ অনেক বেশি ৷ অনেক কম বয়সেই হয় । 30 বছর বয়সিরাও এখন হার্টের অসুখ নিয়ে আমাদের কাছে আসছেন । আমাদের দেশে প্রতিরোধের বিষয়টি আরও গভীর ও আন্তরিকভাবে ভাবতে হবে ৷ মানুষকে বোঝাতে হবে । প্রতিরোধের উপায় তো ছোটোবেলা থেকেই শুরু করতে হয় । ছোটোরাও আজকাল ওভারওয়েট । তাদের খেলার সময় নেই । খেলার মাঠ নেই, সুযোগ নেই । ব্যায়াম করে না ৷ দিনরাত প্রতিযোগিতার মধ্যে দৌড়াচ্ছে । সেজন্য হার্টের অসুখ অনেক তাড়াতাড়ি হচ্ছে । ডায়াবেটিস হচ্ছে ৷ রক্ত চাপ বেড়ে যাচ্ছে । এগুলি ছোটোবেলা থেকেই সচেতনভাবে প্রতিরোধ করা উচিত।" কোন বয়সিদের মধ্যে হার্টের অসুখ বেশি দেখা যাচ্ছে ? শুভাননবাবু বলেন, "আগে 50-60 বছরের আগে হার্টের অসুখ খুব কম হত । এখন 30 বছরেও হচ্ছে । কলকাতার অবস্থা কেমন? শুভাননবাবু বলেন, "কলকাতার অবস্থা ভালো নয় । কারণ, কলকাতা সহ ভারতের শহরগুলিতে জনসংখ্যার চাপ খুব বেশি ।"

প্রতিরোধে কী উপায় ? শুভাননবাবু বলেন, "একেবারে কম বয়স থেকেই শিশুদের খেলার জায়গা দিতে হবে ৷ বইয়ের ভার কমাতে হবে ৷ আনহেলথি কম্পিটিশন থেকে বাইরে আনতে হবে ৷ শিশুদের শেখানো হোক, সব পেশার মানুষের জন্যই সমাজে স্থান রয়েছে ৷ সবসময় যে চিকিৎসক হতে হবে, তার মানে নেই । একজন ফ্যাশন ডিজ়াইনার হলেও সমান রোজগার করতে পারবে । অভিনেতা হলে তার থেকেও বেশি রোজগার করতে পারবে । যার যেদিকে ইচ্ছা আছে, সেদিকে উৎসাহ দিতে হবে । ছোটোবেলা থেকেই এটা শুরু করলে বড় হয়ে ওভারওয়েট হবে না। ডায়াবেটিক হয়ে পড়বে না । নিয়মিত ব্যায়াম করলে ও সুষম খাবার খেলে হার্টের অসুখ কমে যাবে । যে কোনও বয়সেই এটা শুরু করা যায় । কিন্তু, ছোটো থেকেই শুরু করলে ভালো । সেজন্যই বলেছে হার্টের অসুখের ক্ষেত্রে আন্তরিকতা চাই । মাই হার্ট, ইয়োর হার্ট । আমি যদি অন্যের দুঃখকে বুঝতে না পারি, তা হলে চলবে না ।"

ভিডিয়োয় শুনুন বক্তব্য

থিমটি কতটা উপকারি হতে পারে ?শুভাননবাবু বলেন, "শঙ্খ ঘোষ একটি কবিতায় বলেছিলেন, কথা শুধু থেকে যায় কথার মনে । কঠোর পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই । স্লোগানগুলিকে যদি আমরা নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করতে পারি, তাহলে তা উপকারি হবে । তাই স্লোগনটা বাস্তবে আনতে হবে ।"

কলকাতা, 29 সেপ্টেম্বর : হার্টের অসুখ যখন থাবা বসায়, তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরোটা ধরা যায় না । তাই ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হওয়ার পরেও বাঁচানো যায় না রোগীকে । ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে'র আগে এই কথা বললেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শুভানন রায় । চলতি বছরের ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে'র থিম হল - "মাই হার্ট, ইয়োর হার্ট"। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে বন্ধু, পরিবারের সদস্য সহ যে কোনও মানুষের কাছে হার্টের হিরো হয়ে ওঠার বার্তা দিচ্ছে এই থিম ৷

গোটা পৃথিবীতে যদি অসুখের জেরে মৃত্যুর হার দেখা হয়, তাহলে প্রথম দিকেই থাকবে হার্টের অসুখ ৷ শুভাননবাবু বলেন, "মুশকিল হল, এই অসুখ একবার যখন থাবা বসাবে, তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসা পুরোটা ধরতে পারে না । ঠিক সময়ে চিকিৎসা করেও আমরা মানুষকে বাঁচাতে পারি না । সেজন্য সচেতনভাবে কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত । যেমন প্রতিরোধ । এটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি । কারণ, প্রিভেনশন ইজ় বেটার দ্যান কিয়োর । যাঁরা হার্টের অসুখের চিকিৎসা করেন, তাঁদের সকলের এটা মনে রাখা উচিত, হার্টের অসুখকে প্রতিরোধ করতে গেলে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে এগোতে হবে । মানুষকে বোঝাতে হবে । সচেতনতা আনতে হবে‌ । এখনও দেখি হার্টের অসুখ সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষের সচেতনতা নেই।"

এখন পরিস্থিতি কেমন ? শুভাননবাবু বলেন, "একটা দেশ যখন উন্নয়নশীল থেকে উন্নতের দিকে যায়, তখন হার্টের অসুখ বাড়ে । আমরা দেখেছি 1960 সালে অ্যামেরিকার যখন আর্থিক জোয়ার এসেছিল, তখন হার্টের অসুখ সবথেকে বেশি হয়েছিল ৷ যখন কোনও দেশ উন্নত হয়ে যায়, তখন হার্টের অসুখ কমে । তারা বুঝতে পারে, কোন কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত । জাঙ্ক ফুড খাওয়া উচিত নয় ৷ নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত, ওজন কম রাখা উচিত । সচেতনভাবে এগুলি করলে হার্টের অসুখ কমে যায় ।" অ্যামেরিকায় কেন এমন হয়েছিল? শুভাননবাবু বলেন, "বৃদ্ধারা দেখতেন, তাঁদের নাতি-নাতনিরা রুটির সঙ্গে মাখন খেতে পারছে না, দেখা গেল আর্থিক জোয়ার আসার পর মাখন সহজলভ্য হয়ে উঠল । যতটা দেওয়া উচিত, তার থেকে বেশি খাওয়া শুরু হল । জাঙ্ক ফুডের প্রচলন তখন থেকেই শুরু হল । মানুষের হাতে হঠাৎ টাকা এসে গেলে, সেটা খাওয়া-দাওয়ায় বেশি খরচ হয় ৷ কম হাঁটা-চলা হয়, কায়িক শ্রম কমে যায় ৷"

Heart
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শুভানন রায়

শুভাননবাবু বলেন, "হার্টের অসুখ হওয়ার দুটো কারণ আছে । একটা হচ্ছে কায়িক শ্রম কমে যাওয়া । দ্বিতীয়ত, জাঙ্ক ফুড খাওয়া । অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে সঙ্গে এরকম পরিস্থিতি আসে। আমাদের দেশ উন্নয়নশীল থেকে উন্নতের দিকে যাচ্ছে । এই কারণে আমাদের দেশে হার্টের অসুখ বেড়েছে । ভয়ঙ্করভাবে বেড়েছে । আমরা দেখেছি, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানুষেরও হার্টের অসুখ অনেক বেশি ৷ অনেক কম বয়সেই হয় । 30 বছর বয়সিরাও এখন হার্টের অসুখ নিয়ে আমাদের কাছে আসছেন । আমাদের দেশে প্রতিরোধের বিষয়টি আরও গভীর ও আন্তরিকভাবে ভাবতে হবে ৷ মানুষকে বোঝাতে হবে । প্রতিরোধের উপায় তো ছোটোবেলা থেকেই শুরু করতে হয় । ছোটোরাও আজকাল ওভারওয়েট । তাদের খেলার সময় নেই । খেলার মাঠ নেই, সুযোগ নেই । ব্যায়াম করে না ৷ দিনরাত প্রতিযোগিতার মধ্যে দৌড়াচ্ছে । সেজন্য হার্টের অসুখ অনেক তাড়াতাড়ি হচ্ছে । ডায়াবেটিস হচ্ছে ৷ রক্ত চাপ বেড়ে যাচ্ছে । এগুলি ছোটোবেলা থেকেই সচেতনভাবে প্রতিরোধ করা উচিত।" কোন বয়সিদের মধ্যে হার্টের অসুখ বেশি দেখা যাচ্ছে ? শুভাননবাবু বলেন, "আগে 50-60 বছরের আগে হার্টের অসুখ খুব কম হত । এখন 30 বছরেও হচ্ছে । কলকাতার অবস্থা কেমন? শুভাননবাবু বলেন, "কলকাতার অবস্থা ভালো নয় । কারণ, কলকাতা সহ ভারতের শহরগুলিতে জনসংখ্যার চাপ খুব বেশি ।"

প্রতিরোধে কী উপায় ? শুভাননবাবু বলেন, "একেবারে কম বয়স থেকেই শিশুদের খেলার জায়গা দিতে হবে ৷ বইয়ের ভার কমাতে হবে ৷ আনহেলথি কম্পিটিশন থেকে বাইরে আনতে হবে ৷ শিশুদের শেখানো হোক, সব পেশার মানুষের জন্যই সমাজে স্থান রয়েছে ৷ সবসময় যে চিকিৎসক হতে হবে, তার মানে নেই । একজন ফ্যাশন ডিজ়াইনার হলেও সমান রোজগার করতে পারবে । অভিনেতা হলে তার থেকেও বেশি রোজগার করতে পারবে । যার যেদিকে ইচ্ছা আছে, সেদিকে উৎসাহ দিতে হবে । ছোটোবেলা থেকেই এটা শুরু করলে বড় হয়ে ওভারওয়েট হবে না। ডায়াবেটিক হয়ে পড়বে না । নিয়মিত ব্যায়াম করলে ও সুষম খাবার খেলে হার্টের অসুখ কমে যাবে । যে কোনও বয়সেই এটা শুরু করা যায় । কিন্তু, ছোটো থেকেই শুরু করলে ভালো । সেজন্যই বলেছে হার্টের অসুখের ক্ষেত্রে আন্তরিকতা চাই । মাই হার্ট, ইয়োর হার্ট । আমি যদি অন্যের দুঃখকে বুঝতে না পারি, তা হলে চলবে না ।"

ভিডিয়োয় শুনুন বক্তব্য

থিমটি কতটা উপকারি হতে পারে ?শুভাননবাবু বলেন, "শঙ্খ ঘোষ একটি কবিতায় বলেছিলেন, কথা শুধু থেকে যায় কথার মনে । কঠোর পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই । স্লোগানগুলিকে যদি আমরা নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করতে পারি, তাহলে তা উপকারি হবে । তাই স্লোগনটা বাস্তবে আনতে হবে ।"

Intro:কলকাতা, ২৮ সেপ্টেম্বর: হার্টের অসুখ যখন থাবা বসায়, চিকিৎসা তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সবটা ধরতে পারে না। ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হওয়ার পরেও বাঁচানো যায় না রোগীকে। ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে-তে এমনই বললেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শুভানন রায়। ২৯ সেপ্টেম্বর ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে। এই বছরের থিম, 'মাই হার্ট, ইওর হার্ট'। প্রতিজ্ঞা নিয়ে বন্ধু, পরিবারের সদস্য সহ যে কোনও মানুষের কাছে অন্য এক মানুষের পক্ষে হার্টের হিরো হয়ে ওঠার কথা বলছে এই বছরের থিম। আরও বেশি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া, কায়িক শ্রম বাড়ানো, ধূমপান নিষেধের প্রতিজ্ঞার কথা বলা হচ্ছে এ বারের ওয়াল্ড হার্ট ডে-তে।


Body:গোটা পৃথিবীতে যদি অসুখে মৃত্যুর হার দেখা হয়, মেজর কিলার হিসেবে যাদের বলা হয়, তাদের মধ্যে হার্টের অসুখ প্রথম দিকে রয়েছে। সব থেকে আগে আছে, এটা বললেও ভুল বলা হবে না। এ কথা জানিয়ে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শুভানন রায় বলেন, "এই অসুখটার মুশকিল হল এই যে, এই অসুখ একবার যখন থাবা বসাবে, তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের চিকিৎসা কিন্তু সবটা ধরতে পারে না। ঠিক সময়ে চিকিৎসা করেও আমরা মানুষকে বাঁচাতে পারি না। এজন্য সচেতনভাবে কতগুলি পদ্ধতিকে অবলম্বন করা উচিত। যেমন প্রতিরোধ। এটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি ব্যবস্থা।" তিনি বলেন, "আমরা সবাই জানি, প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর। প্রিভেনশন করতে গেলে যে আন্তরিকতা লাগে, যে সচেতনতা লাগে, যে ধৈর্য লাগে, যে স্হৈর্য লাগে, এগুলোর জন্য খুব আন্তরিক হওয়া দরকার। প্রত্যেক ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, যাঁরা হার্টের অসুখ ডিল করেন, তাঁদের সকলের এটা মনে রাখা উচিত, হার্টের অসুখকে প্রিভেন্ট করতে গেলে আমাদের সবাইকে নেমে পড়তে হবে। এবং, মানুষকে বোঝাতে হবে। সচেতনতা আনতে হবে‌। কারণ, এখনও দেখি যে, হার্টের অসুখ সম্পর্কে বেশির ভাগ মানুষের সচেতনতা নেই।"

পরিস্থিতি এখন কোন অবস্থায় রয়েছে? হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শুভানন রায় বলেন, "একটা দেশ যখন ডেভলপিং থেকে ডেভেলপড-এর দিকে যায়, তখন হার্টের অসুখ বাড়ে। আমরা দেখেছি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন ১৯৬০-এ ইকোনমিক বুম হয়েছিল, তখন হার্টের অসুখ সবথেকে বেশি বেড়েছিল। কিন্তু যখন দেশটা ডেভেলপড হয়ে উঠেছিল, তখন হার্টের অসুখ কমে। তারা বুঝতে পারে কোন কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। জাঙ্ক ফুড খাওয়া উচিত নয়, রেগুলার এক্সারসাইজ করা উচিত, ওজন কম করা উচিত। এসব যখন সচেতনভাবে নিতে শুরু করে, তখন হার্টের অসুখ কমে যায়।" আমেরিকায় কেন এমন।হয়েছিল? তিনি বলেন, "আমেরিকায় হঠাৎ করে দেখা গেল ইকোনমিক একটা বুম হয়েছে। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়েছিল। যে ঠাকুরমারা দেখতেন তাদের নাতি-নাতনিরা রুটির সঙ্গে মাখন খেতে পারছে না, দেখা গেল যখন ইকনমিক বুম হল তখন মাখন অ্যাভেলেবেল হয়ে গেল। যতটা দেওয়া উচিত, তার থেকে বেশি খাওয়া শুরু হল। জাঙ্ক ফুডের প্রচলন তখন থেকেই হল। ইকোনমিক বুম হয়েছিল। মানুষের হাতে হঠাৎ টাকা এসে গেলে, সেটা খাওয়া-দাওয়ায় বেশি খরচ হয়, কম হাঁটা-চলা হয়, কায়িক শ্রম কমে যায়, এগুলি কারণ‌।"

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শুভানন রায় বলেন, "হার্টের অসুখ হওয়ার জন্য দুটো কারণ আছে। একটা হচ্ছে কায়িক শ্রম কমে যাওয়া। দু নম্বর হচ্ছে, জাঙ্ক ফুড খাওয়া। এই পরিস্থিতি এই রকম অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে সঙ্গে আসে।" তিনি বলেন, "আমাদের দেশ হয়তো ডেভেলপিং থেকে ডেভেলপড-এর দিকে যাচ্ছে। এই কারণে আমাদের দেশে হার্টের অসুখ বেড়েছে। ভয়ংকরভাবে বেড়েছে। আমরা দেখি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার লোকদেরও হার্টের অসুখ অনেক বেশি এবং প্রবলভাবে হয়। অনেক আর্লি হয়। ৩০ বছর বয়সিরাও এখন হার্টের অসুখ নিয়ে আসছেন। অনেক ক্ষেত্রে এতটাই বেড়ে যায় যে আমরা সঠিক চিকিৎসা দেখতে পাই না। আমাদের দেশে অন্ততপক্ষে প্রতিরোধের বিষয়টি আরও গভীরভাবে, আন্তরিকভাবে ভাবতে হবে এবং মানুষকে বোঝাতে হবে।"

কলকাতার অবস্থা কেমন? তিনি বলেন, "কলকাতার অবস্থা ভালো নয়। এই কারণে ভালো নয়, কলকাতা কেন গোটা ভারতের জনসংখ্যার চাপে শহরগুলোর অবস্থা খুব খারাপ।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "এই প্রতিরোধের ব্যবস্থা তো ছোটবেলা থেকেই শুরু করতে হয়। ছোটরা আজকাল ওভারওয়েট। তাদের খেলার সময় নেই। খেলার মাঠ নেই, সুযোগ নেই। এর ফলে এক্সারসাইজটা তারা ছোটবেলা থেকে করে না। দিন-রাত কম্পিটিশনের মধ্যে দৌড়ে যাচ্ছে। এর ফলে তাদের হার্টের অসুখ অনেক তাড়াতাড়ি হচ্ছে। তাদের ডায়াবেটিস হচ্ছে, ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাচ্ছে। এগুলো আমরা জানি। এগুলোর প্রতিরোধ করতে হলে সচেতনভাবে একদম শিশু বয়স থেকে প্রতিরোধ করা উচিত।" কোন বয়সিদের মধ্যে বেশি দেখা যাচ্ছে? তিনি বলেন, "আগে ৫০-৬০ বছর বয়সের আগে হার্টের অসুখ রেয়ার ছিল। এখন ৩০ বছরেও হচ্ছে। বেড়ে চলেছে এই অসুখ।"

প্রতিরোধে কোনও উপায় আছে? হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শুভানন রায় বলেন, "আছে। একদম শিশু বয়স থেকেই শিশুদের খেলার জায়গা করে দিলে, বইয়ের ভার কমিয়ে দিলে, আনহেলদি কম্পিটিশন থেকে বাইরে আনা হলে সম্ভব।" তিনি বলেন, "শিশুদের অন্যরকম ভাবে শেখানো হোক, সব মানুষের জন্য জায়গা থাকে। সব সময় যে ডাক্তার হতে হবে তার কোনও মানে নেই। একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হলেও সমান রোজগার করতে পারবে। অভিনেতা হলে তার থেকেও বেশি রোজগার করতে পারবে। যার যে দিকে ন‍্যাক রয়েছে, সেদিকে চালিত করতে হবে।" তিনি বলেন, "শিশু বয়স থেকেই শুরু করলে বড় হয়ে ওভারওয়েট হবে না। ডায়াবেটিক হয়ে পড়বে না। নিয়মিত এক্সারসাইজ যদি থাকে, সুষম খাবার যদি নেওয়া হয়, তাহলে হার্টের অসুখ কমে যাবে। যে কোনও বয়সেই এটা শুরু করা যায়। কিন্তু শৈশব থেকে শুরু করলেই ভালো।" তিনি বলেন, "এ জন্যই বলেছে হার্টের অসুখে আন্তরিকতা চাই। মাই হার্ট, ইওর হার্ট। আমি যদি অন্যের দুঃখকে বুঝতে না পারি, তা হলে চলবে না।"


Conclusion:থিম কতটা উপকারী হয়ে চলেছে? হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শুভানন রায় বলেন, "শঙ্খ ঘোষ একটি কবিতায় বলেছিলেন, কথা শুধু থেকে যায় কথার মনে।" তিনি বলেন, "কঠোর পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই। স্লোগানগুলিকে জীবনে যদি আমরা ট্রান্সলেট করতে পারি, তাহলে উপকারী হবে।" তাঁর কথায়, "স্লোগানটা, শ্লোগানের মধ্যে রাখলে হবে না। সেটা ট্রান্সলেট করে বাস্তবে আনতে হবে।"
_______


বাইট:
wb_kol_01a_world_heart_day_bite_7203421
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শুভানন রায়ের বক্তব্য

Last Updated : Oct 1, 2019, 6:06 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.