কলকাতা, 29 সেপ্টেম্বর : হার্টের অসুখ যখন থাবা বসায়, তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরোটা ধরা যায় না । তাই ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হওয়ার পরেও বাঁচানো যায় না রোগীকে । ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে'র আগে এই কথা বললেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শুভানন রায় । চলতি বছরের ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে'র থিম হল - "মাই হার্ট, ইয়োর হার্ট"। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে বন্ধু, পরিবারের সদস্য সহ যে কোনও মানুষের কাছে হার্টের হিরো হয়ে ওঠার বার্তা দিচ্ছে এই থিম ৷
গোটা পৃথিবীতে যদি অসুখের জেরে মৃত্যুর হার দেখা হয়, তাহলে প্রথম দিকেই থাকবে হার্টের অসুখ ৷ শুভাননবাবু বলেন, "মুশকিল হল, এই অসুখ একবার যখন থাবা বসাবে, তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসা পুরোটা ধরতে পারে না । ঠিক সময়ে চিকিৎসা করেও আমরা মানুষকে বাঁচাতে পারি না । সেজন্য সচেতনভাবে কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত । যেমন প্রতিরোধ । এটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি । কারণ, প্রিভেনশন ইজ় বেটার দ্যান কিয়োর । যাঁরা হার্টের অসুখের চিকিৎসা করেন, তাঁদের সকলের এটা মনে রাখা উচিত, হার্টের অসুখকে প্রতিরোধ করতে গেলে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে এগোতে হবে । মানুষকে বোঝাতে হবে । সচেতনতা আনতে হবে । এখনও দেখি হার্টের অসুখ সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষের সচেতনতা নেই।"
এখন পরিস্থিতি কেমন ? শুভাননবাবু বলেন, "একটা দেশ যখন উন্নয়নশীল থেকে উন্নতের দিকে যায়, তখন হার্টের অসুখ বাড়ে । আমরা দেখেছি 1960 সালে অ্যামেরিকার যখন আর্থিক জোয়ার এসেছিল, তখন হার্টের অসুখ সবথেকে বেশি হয়েছিল ৷ যখন কোনও দেশ উন্নত হয়ে যায়, তখন হার্টের অসুখ কমে । তারা বুঝতে পারে, কোন কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত । জাঙ্ক ফুড খাওয়া উচিত নয় ৷ নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত, ওজন কম রাখা উচিত । সচেতনভাবে এগুলি করলে হার্টের অসুখ কমে যায় ।" অ্যামেরিকায় কেন এমন হয়েছিল? শুভাননবাবু বলেন, "বৃদ্ধারা দেখতেন, তাঁদের নাতি-নাতনিরা রুটির সঙ্গে মাখন খেতে পারছে না, দেখা গেল আর্থিক জোয়ার আসার পর মাখন সহজলভ্য হয়ে উঠল । যতটা দেওয়া উচিত, তার থেকে বেশি খাওয়া শুরু হল । জাঙ্ক ফুডের প্রচলন তখন থেকেই শুরু হল । মানুষের হাতে হঠাৎ টাকা এসে গেলে, সেটা খাওয়া-দাওয়ায় বেশি খরচ হয় ৷ কম হাঁটা-চলা হয়, কায়িক শ্রম কমে যায় ৷"
শুভাননবাবু বলেন, "হার্টের অসুখ হওয়ার দুটো কারণ আছে । একটা হচ্ছে কায়িক শ্রম কমে যাওয়া । দ্বিতীয়ত, জাঙ্ক ফুড খাওয়া । অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে সঙ্গে এরকম পরিস্থিতি আসে। আমাদের দেশ উন্নয়নশীল থেকে উন্নতের দিকে যাচ্ছে । এই কারণে আমাদের দেশে হার্টের অসুখ বেড়েছে । ভয়ঙ্করভাবে বেড়েছে । আমরা দেখেছি, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানুষেরও হার্টের অসুখ অনেক বেশি ৷ অনেক কম বয়সেই হয় । 30 বছর বয়সিরাও এখন হার্টের অসুখ নিয়ে আমাদের কাছে আসছেন । আমাদের দেশে প্রতিরোধের বিষয়টি আরও গভীর ও আন্তরিকভাবে ভাবতে হবে ৷ মানুষকে বোঝাতে হবে । প্রতিরোধের উপায় তো ছোটোবেলা থেকেই শুরু করতে হয় । ছোটোরাও আজকাল ওভারওয়েট । তাদের খেলার সময় নেই । খেলার মাঠ নেই, সুযোগ নেই । ব্যায়াম করে না ৷ দিনরাত প্রতিযোগিতার মধ্যে দৌড়াচ্ছে । সেজন্য হার্টের অসুখ অনেক তাড়াতাড়ি হচ্ছে । ডায়াবেটিস হচ্ছে ৷ রক্ত চাপ বেড়ে যাচ্ছে । এগুলি ছোটোবেলা থেকেই সচেতনভাবে প্রতিরোধ করা উচিত।" কোন বয়সিদের মধ্যে হার্টের অসুখ বেশি দেখা যাচ্ছে ? শুভাননবাবু বলেন, "আগে 50-60 বছরের আগে হার্টের অসুখ খুব কম হত । এখন 30 বছরেও হচ্ছে । কলকাতার অবস্থা কেমন? শুভাননবাবু বলেন, "কলকাতার অবস্থা ভালো নয় । কারণ, কলকাতা সহ ভারতের শহরগুলিতে জনসংখ্যার চাপ খুব বেশি ।"
প্রতিরোধে কী উপায় ? শুভাননবাবু বলেন, "একেবারে কম বয়স থেকেই শিশুদের খেলার জায়গা দিতে হবে ৷ বইয়ের ভার কমাতে হবে ৷ আনহেলথি কম্পিটিশন থেকে বাইরে আনতে হবে ৷ শিশুদের শেখানো হোক, সব পেশার মানুষের জন্যই সমাজে স্থান রয়েছে ৷ সবসময় যে চিকিৎসক হতে হবে, তার মানে নেই । একজন ফ্যাশন ডিজ়াইনার হলেও সমান রোজগার করতে পারবে । অভিনেতা হলে তার থেকেও বেশি রোজগার করতে পারবে । যার যেদিকে ইচ্ছা আছে, সেদিকে উৎসাহ দিতে হবে । ছোটোবেলা থেকেই এটা শুরু করলে বড় হয়ে ওভারওয়েট হবে না। ডায়াবেটিক হয়ে পড়বে না । নিয়মিত ব্যায়াম করলে ও সুষম খাবার খেলে হার্টের অসুখ কমে যাবে । যে কোনও বয়সেই এটা শুরু করা যায় । কিন্তু, ছোটো থেকেই শুরু করলে ভালো । সেজন্যই বলেছে হার্টের অসুখের ক্ষেত্রে আন্তরিকতা চাই । মাই হার্ট, ইয়োর হার্ট । আমি যদি অন্যের দুঃখকে বুঝতে না পারি, তা হলে চলবে না ।"
থিমটি কতটা উপকারি হতে পারে ?শুভাননবাবু বলেন, "শঙ্খ ঘোষ একটি কবিতায় বলেছিলেন, কথা শুধু থেকে যায় কথার মনে । কঠোর পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই । স্লোগানগুলিকে যদি আমরা নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করতে পারি, তাহলে তা উপকারি হবে । তাই স্লোগনটা বাস্তবে আনতে হবে ।"