কলকাতা, 29 জানুয়ারি: 'ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চেন' (India The Modi Question), প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বিবিসি-র তথ্যচিত্র শুরু থেকেই বিতর্কের শিরোনামে ৷ এই তথ্যচিত্র দেখানোকে কেন্দ্র করে জেএনইউ যেমন অশান্ত হয়ে উঠেছিল ৷ তেমনি কলকাতায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রেসিডেন্সিতে পাওয়ার কাটের মতো ঘটনা ঘটে তথ্য়চিত্র দেখানোর সময় ৷ এ নিয়ে সরগরম রাজ্য-রাজনীতি ৷ সিপিআইএম নেতৃত্ব প্রেসিডেন্সির ঘটনায়, দিদি-মোদি আঁতাতের যোগসূত্রের কথা বললেন ৷ অন্যদিকে, মুখ্য়মন্ত্রীর মন্ত্রিসভার সদস্য বিষয়টিকে দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করেছেন ৷ আর রাজ্য বিজেপির দাবি, তারা বিষয়টিকে পাত্তাই দিচ্ছে না ৷
তবে, সত্যিই কি তাই ? বিজেপি বিষয়টিকে সত্যিই কি পাত্তা দিচ্ছে না ! অন্তত আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনের আগে একথা রাজনৈতিক মহলের হজম হচ্ছে না ৷ সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী যেমন বিষয়টিকে বিজেপির তরফে সত্যিকে ধামাচাপা দেওয়ার প্রয়াস বলে মন্তব্য করেছেন ৷ বিবিসি-র তথ্যচিত্রে দেখানো সকল ঘটনাই সত্যি বলে দাবি করেছেন তিনি ৷ বিষয়টি দেশের সকলের কাছে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট বলে দাবি তাঁর ৷ আর তা জানা সত্ত্বেও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ফুল পাঠান প্রধানমন্ত্রীকে, কটাক্ষ সুজনের ৷
মোদিকে নিয়ে বিবিসি-র তৈরি তথ্যচিত্র দেখানোকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়েছে জেএনইউ ৷ রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় দেশের প্রথমসারির বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ৷ আর কলকাতায় প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই তথ্যচিত্র চলার মাঝেই আলো নিভে যায় বলে অভিযোগ ৷ যে ঘটনার নিন্দায় সুজনের প্রশ্ন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কেন সবসময় প্রধানমন্ত্রীকে নকল করেন ? কেন তাঁকে অনুসরণ করে চলেন ?’’
যদিও, বিবিসি-র তৈরি তথ্যচিত্র নিয়ে তৃণমূলের তরফে সরাসরি কোনও মন্তব্য করা হয়নি ৷ যা সংসদীয় রাজনীতিতে তৃণমূলের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে ৷ তবে, মুখ্যমন্ত্রীর মন্ত্রিসভার সদস্য তাপস রায় এদিন বিষয়টিকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন ৷ তবে, বিশেষ কিছু জানেন না বলে, প্রেসিডেন্সির আলো নিভিয়ে দেওয়ার বিষয়টিকে এড়িয়ে যান তিনি ৷ তাপস রায় বলেন, ‘‘এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, আমার দেশের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে এমন তথ্যচিত্র তৈরি হচ্ছে ৷’’ তবে এই দুর্ভাগ্য কার সেটা স্পষ্ট করেননি তিনি ৷
আরও পড়ুন: কেন ভারত সরকারকে 'হিন্দু জাতীয়তাবাদী' বলা হবে ? সরব বিদেশমন্ত্রী
তবে, রাজ্য বিজেপির শীর্ষনেতৃত্ব বিষয়টিকে গুরুত্ব না-দেওয়ার কথা বলছে ৷ এদিন শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘বিজেপি ওই তথ্য়চিত্র নিয়ে ভাবিত নয় ৷ বিজেপির কোনও অস্বস্তি নেই ৷ আমরা ব্যাপারটাকে ইগনোর করেছি ৷ এটা নিয়ে কিছু সংবাদমাধ্যম ভাবিত ৷ কিছু ভারত বিরোধী লোকের ভাবনা আছে ৷ আমাদের কোনও ভাবনা নেই ৷’’
যতই শুভেন্দু অধিকারী বা অন্যান্য বিজেপি নেতারা বিষয়টিকে ‘ইগনোর’ বলে ইগনোর করে যান, আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের আগে এই তথ্য়চিত্র নরেন্দ্র মোদির ভাবমূর্তিতে কাদা ছেটাবে না ৷ তা কেউ হলফ করে বলতে পারবে না ৷ আর যদি তা নাই হত, তাহলে জেএনইউ বা দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই তথ্যচিত্র প্রদর্শনে বাধা কেন দেওয়া হচ্ছে ? উঠছে সেই প্রশ্নও ৷
তবে, রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বলেছেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদি জনসমুদ্রের মাঝে আছেন এবং তাঁর জনপ্রিয়তা গগনচুম্বী ৷’’ যা কট্টর মোদি-বিরোধীও স্বীকার করবেন ৷ আর এই বিশ্বাসে ভর করে শুভেন্দু দাবি করেছেন, আগামী লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি চারশোর বেশি আসনে জিতবে ৷
তবে, যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিবিসি-র মোদিকে নিয়ে তথ্যচিত্র দেখাতে দেওয়া হয়নি ৷ সেখানকার পড়ুয়াদের মধ্যেও একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পড়ুয়া জানিয়েছেন, তাহলে কি সত্যিই ওই তথ্যচিত্রে এমন কিছু রয়েছে, যা প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তিতে প্রভাব ফেলতে পারে ৷ উল্লেখ্য, এই তথ্যচিত্রটি মূলত কয়েকটি সংবাদপত্রের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করেছে বিবিসি ৷ দু’টি পর্বের এই তথ্যচিত্রের প্রথম পর্বে গোধরা-কাণ্ড এবং দ্বিতীয় পর্বে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন লাগু করা নিয়ে অশান্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, সেগুলিকে তুলে ধরা হয়েছে ৷
ফলে প্রশ্ন উঠছে, লোকসভা নির্বাচনের আগে এই বিষয়গুলি যাতে ফের বিজেপির অস্বস্তি না বাড়ায়, সেই কারণেই কি বিবিসি-র তথ্যচিত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ? এমন একাধিক প্রশ্ন উঠছে ৷ কিন্তু, তার জবাব কারও কাছেই নেই ৷