মহালয়ার সঙ্গে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সম্পর্ক জানা বাঙালির, এমনকী আকাশবাণীর পরবর্তী মহালয়ার সঙ্গে উত্তমকুমারের 'ব্যর্থ সম্পর্কে'র কথাও অনেকের জানা, তাই বলে মহাবীর কর্ণ ! জানা, যে মহালয়ায় পিতৃপক্ষের শেষ আর দেবীপক্ষের শুরু ৷ শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্নেরও শুরু আজ থেকে ৷ মহালয়ার মধ্য দিয়েই মা দুর্গা আজ পা রাখলেন মর্ত্যলোকে ৷ এ হল গিয়ে আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের অন্যতম তিথি ৷ কিন্তু, এর মধ্যে মহাভারত-পুরুষ কর্ণ কোথা থেকে এল ?
রাজ্য তথা দেশজুড়ে মা গঙ্গার ঘাটে ঘাটে আজ পুরোহিত আর যজমান ৷ আর ফুল, মালা, ধূপ, চন্দন ৷ নত মস্তকে উত্তর পুরুষ ৷ ঠোঁটে বৈদিক মন্ত্র ৷ পিতৃপক্ষে স্বর্গত পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা ও তর্পণের দিন আজ ৷ এ সময় যমালয় থেকে মর্ত্যলোকে আসেন পিতৃপুরুষেরা ! নিয়ম অনুযায়ী তাঁদেরকে তৃপ্ত করতে তিল, জল দান করা হয় ৷ তাঁদের যাত্রাপথকে আলোকিত করার জন্য হয় উল্কাদান ! এই সবের সঙ্গে না কি আসল যোগ প্রকৃত প্রথম পাণ্ডব কর্ণেরই !
মহাভারত অনুযায়ী, মৃত্যুর পর মহাবীর কর্ণের আত্মা স্বর্গে গেলে তাঁকে খেতে দেওয়া হয় সোনাদানা, ধনরত্ন ৷ কর্ণ অবাক হন ৷ তিনি দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে জানতে চান, ব্যাপার কী ? ইন্দ্র জানান, তুমি সারাজীবন সোনাদানা, ধনরত্নই দান করে এসেছ, পিতৃপুরুষকে জল দাওনি ৷ তাই তোমার জন্য এমন খাবারের ব্যবস্থা ৷ উত্তরে কর্ণ বলেন, এতে আমার দোষটা কোথায় ! পিতৃপুরুষের কথা তো জানতে পারলাম কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর আগের রাতে ৷ মা কুন্তি কিন্তু এসে জানালেন, যে আমি না কি তাঁরই ছেলে ৷ তারপর তো যুদ্ধ ৷ আপন ভাইয়ের হাতে মৃত্যু হল আমার ! পিতৃতর্পণের সময়টা পেলাম কোথায় !
দেবরাজ ইন্দ্র বুঝলেন, প্রকৃতই কর্ণের দোষ নেই ৷ এরপরই তিনি কর্ণকে পনেরো দিনের জন্য মর্ত্যে ফিরে পিতৃপুরুষকে জল ও অন্ন দিতে অনুমতি দেন ৷ ইন্দ্রের কথা মতো মর্ত্যে ফেরেন কর্ণও ৷ এক পক্ষকাল অবস্থান করেন, কথা মতো পিতৃপুরুষকে অন্নজল দানও করেন ৷ যার পর পাপস্খালন হয় কর্ণের ৷
কর্ণ মর্ত্যে এসে যে পক্ষকাল থেকে পিতৃপুরুষকে অন্নজল দিলেন, তারই নাম হল পিতৃপক্ষ ৷ অর্থাৎ কি না কর্ণই পিতৃপুরুষের প্রতি তর্পণ করা প্রথম উত্তরপুরুষ ৷