কলকাতা, 7 জুলাই : বিধানসভায় পেশ হল 2021-22 অর্থবর্ষের বাজেট ৷ দেশের অর্থনীতি যেখানে নিম্মগামী সেখানে রাজ্যের জিডিপি বৃদ্ধি হয়েছে 1.2 শতাংশ ৷ "মানুষের হাতে টাকা গেলে বাড়বে পণ্যের চাহিদা " ক্ষুদ্র অর্থনীতির এই মডেলেই বাজেট পেশ করল রাজ্য সরকার ৷ আগামী 5 বছরের মধ্যে দেড় কোটি কর্মসংস্থান তৈরী করতে পারবে রাজ্য সরকার ৷ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বাজেটের 58.26 শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছে সামাজিক সুরক্ষা যোজনায় ৷ যার মধ্যমে সরাসরি টাকা পৌঁছাবে সাধারণ মানুষের হাতে ৷ মুখ্যমন্ত্রীর ভাষায় এই বাজেট প্রত্যাশা পূরণের বাজেট ৷ নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেস তাদের ইস্তাহারে যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল , মানুষের ভরসা পাওয়ার পর তা পূরণ করার পদক্ষেপ করা হল ৷ চলতি বছরের অগস্ট-সেপ্টেম্বর এবং 2021 সালের ডিসেম্বর ও 2022 সালের জানুয়ারি মাসে দুয়ারে সরকার প্রকল্প অনুষ্ঠিত হবে ৷
রাজ্য বাজেটের 58.26 শতাংশ সামাজিক সুরক্ষা , 26.29 শতাংশ কৃষি ও কৃষি বিপণন , 5 শতাংশ উন্নয়ন , 10 শতাংশ অন্যান্য খাতে ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছে । একাধিক সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে ৷ দুয়ারে সরকার প্রকল্পে বারোশো কোটি , দুয়ারে রেশন প্রকল্পে চোদ্দোশো কোটি , স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পে উনিশশো 70 কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে ৷ করোনা মোকাবিলায় আঠারোশো 30 কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত দুয়ারে রেশন প্রকল্পে 4 লাখ আবেদন জমা পড়েছে । এছাড়াও 62 লাখ নতুন কৃষক 'কৃষক বন্ধু' প্রকল্পের আওতায় আসার সুযোগ ৷ তিনি আরও জানিয়েছেন, প্রতিশ্রুতি মত স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড প্রকল্প শুরু করা হয়েছে ৷ এই প্রকল্পে 250 কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে ৷
2021 বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাড়া জাগানো প্রতিশ্রুতি ছিল 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' প্রকল্প । মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই প্রকল্পে 10 হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । তপশিলি জাতি ও উপজাতি মহিলারা মাসে 1 হাজার ও সাধারণ জাতির মহিলারা মাসে পাঁচশো টাকা করে পাবেন । যাঁরা সরকারি কর্মচারী বা যাঁরা অবসর ভাতা পান তাঁরা এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন না । মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলিতে মোট 18 হাজার 650 কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে । অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের মতে মুখ্যমন্ত্রীর এই যুগান্তকারী পরিকল্পনা রাজ্যের অর্থনীতিকে মডেল হিসেবে তুলে ধরবে ।
এদিকে ফের কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী । তাঁর দাবি, কেন্দ্রের কাছে জিএসটি বাবদ রাজ্যের প্রায় 60 হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে । মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, 2020-21 অর্থবর্ষে রাজ্যের প্রাপ্য ছিল 58 হাজার 952.55 কোটি টাকা । সেখানে রাজ্যকে দেওয়া হয়েছে 44 হাজার 737.1 কোটি টাকা । অর্থাৎ প্রায় 14 হাজার 225.54 কোটি টাকা কম দেওয়া হয়েছে । এদিকে 2019-20 অর্থবর্ষে 11 হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে । এছাড়াও কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের প্রায় 35 হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে । অর্থাৎ সব মিলিয়ে কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের বকেয়া রয়েচে 60 হাজার কোটি টাকারও বেশি । আমফানের সময় রাজ্যকে দেওয়া হয় বাইশশো 50 কোটি টাকা , অর সাম্প্রতিক যশ ঘূর্ণিঝড়ের পর দেওয়া হয় 350 কোটি টাকা । মুখ্যমন্ত্রীর দাবি দুটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর পরিকাঠামো উন্নয়ন ও পুনর্বাসনের জন্য কেন্দ্র যে পরিমাণ টাকা দিয়েছে তার থেকে বহু গুণ বেশি রাজ্যের খরচ হয়েছে ।
আরও পড়ুন : নন্দীগ্রাম মামলা : 5 লাখ টাকা জরিমানা মমতার, সরে দাঁড়ালেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ
করোনা সংক্রমণের জেরে দেশের অর্থনীতি তলানিতে ৷ এর প্রবাব পড়েছে বাংলাতেও ৷ লকডাউন ও করোনার বিধিনিষেধের গেরোয় কর্মহীন বহুমানুষ ৷ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমার ফলে বাজারে পণ্য থাকলেও চাহিদা সেরকম নেই ৷ ফলে অর্থনৈতিক মন্দার মত পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে ৷ এই পরিস্থিতি থেকে বাংলার মানুষকে পরিত্রাণ দিতে রাজ্যসরকার জোর দিয়েছে সামাজিক সুরক্ষায় ৷ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সরাসরি টাকা পৌঁছে যাবে বাংলার সাধারণ মানুষের হাতে ৷ একদিকে যেমন তাদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে তেমনি উৎসাহ বাড়বে পণ্য উৎপাদনে ৷ ক্ষুদ্র অর্থনীতিতে জোর দিয়েই পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ্মীর ভাঁড়ারে জোয়ার আনতে চায় রাজ্য সরকার ৷