ETV Bharat / state

তিনে তিন! উপনির্বাচন জয়ে অক্সিজেন তৃণমূলে, কারণ খুঁজছে গেরুয়া শিবির

উপ নির্বাচনের তিন আসনে জয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর সদর, নদিয়ার করিমপুর এবং উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে বিরোধীদের কার্যত উড়িয়ে দিল তৃণমূল কংগ্রেস । বিধানসভা ভোটের আগে নিঃসন্দেহে বাড়তি অক্সিজেন পেল তৃণমূল ।

মমতা
ছবি
author img

By

Published : Nov 28, 2019, 4:02 PM IST

Updated : Nov 28, 2019, 4:30 PM IST

কলকাতা, 28 নভেম্বর : ইতিহাস বার বার সাক্ষী থেকেছে । হাজারো ঝড়ঝাপটা সামলে তিনি স্বমহিমায় ফিরে এসেছেন বার বার । বিনা যুদ্ধে তিল পরিমাণ জমিও যে তিনি প্রতিপক্ষকে ছাড়েন না, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে এ কথা বহু চর্চিত-বহু জনবিদিত । আজ পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর সদর, নদিয়ার করিমপুর এবং উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে যে ভাবে মমতার জয়জয়কার, তা নিঃসন্দেহে আগামী বিধানসভা ভোটের আগে বাড়তি অক্সিজেন দিল দলকে । শুধু বিধানসভা কেন, আগামী বছর পৌর ভোটের আগে গেরুয়া শিবিরের কাছে এই ফল বড় ধাক্কা বলেই মনে করা হচ্ছে ।

লড়াইটা শুরু হয়েছিল বছর দুয়েক আগে পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকে । সে সময় শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের একাধিক অভিযোগ উঠেছিল । পরের পরীক্ষা ছিল এ বছরের লোকসভা নির্বাচন । কিন্তু, কোথায় যেন সেই মমতা-মমতা হাওয়াটা ফিকে হয়ে গেছিল । বাংলার মাটিতে গেরুয়া ঝড়ের আভাস মিলছিল । স্বাভাবিক ভাবেই এই তিন উপ-নির্বাচন হয়ে গেছিল মমতার কাছে সম্মান রক্ষার লড়াই ।

image
গত বিধানসভার নিরিখে পরিসংখ্যান

তিন কেন্দ্রের মধ্যে নদিয়ার করিমপুরই একমাত্র তৃণমূলের দখলে ছিল । খড়গপুর সদর ছিল BJP-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের দখলে । আর কালিয়াগঞ্জ কোনও বারই নিজেদের দখলে নিতে পারেনি তৃণমূল । মমতার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল নদিয়ার করিমপুরের আসনটি দখলে রাখা । আর বাকি দুটি আসনের ব্যবধান যতটা সম্ভব কমানো । আর সে কাজ হয়ে যাওয়ার পর খড়্গপুর সদর এবং কালিয়াগঞ্জ জয়ের জন্য ঝাঁপানো । সেই মতো ঘুঁটি সাজিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো । পরামর্শদাতার ভূমিকায় ছিলেন প্রশান্ত কিশোর । আজ ভোটের ফল প্রকাশের পর দেখা গেল শেষ চালে বাজিমাত করে গেলেন মমতাই ।

বাম জমানার শুরু থেকে 2016 পর্যন্ত টানা 39 বছর বামফ্রন্টের বা আরও নির্দিষ্ট করে বললে CPI(M)-এর দখলে ছিল করিমপুর । 2011 সালের পরিবর্তনের ভোটেও তা বামেদের হাতছাড়া হয়নি । 2016-র বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র প্রায় 16 হাজার ভোটে জিতে সেই গড় ছিনিয়ে নেন । কিন্তু লোকসভা ভোটে এক লাফে প্রায় 50 হাজার ভোট বাড়ায় এবার BJP প্রথম থেকেই সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল । তারা বুঝে গেছিল লড়াইটা মূলত তাদের সঙ্গে তৃণমূলের । গত লোকসভা ভোটের আগে নদিয়ার মাটি আকঁড়ে থেকে অভূতপূর্ব জয় এনেছিলেন মহুয়া । সেখানকার মানুষের কাছে 'দিদি' হয়ে উঠেছিলেন । আর এই আসনটা নিজেদের দখলে নিতে ঘুঁটি সাজাচ্ছিলেন BJP-র মুকুল রায় । স্বাভাবিকভাবেই লড়াইটা দাঁড়িয়েছিল মহুয়া বনাম মুকুল । যে ভাবে মুকুলের হাত ধরে লোকসভা ভোটে বাংলায় গেরুয়া আবির উড়েছিল, তাতে মুকুলকেই অনেকে সামনের সারিতে রেখেছিলেন । প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদারকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন এলাকার পর এলাকা । কিন্তু, শেষ হাসি হাসলেন মমতাই । তৃণমূল প্রার্থী বিমলেন্দু সিংহ রায় জিতলেন বিপুল ব্যাবধানে ।

image
করিমপুরে তৃণমূল কর্মীদের জয়োল্লাস

দ্বিতীয় লড়াইটা ছিল উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ । গত লোকসভা ভোটে উত্তরে গেরুয়া ঝড় দেখা গেছিল । আর কংগ্রেসের আলো বলতে ছিল শুধু প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির স্মৃতিটুকু । কিন্তু প্রিয়-হীন কালিয়াগঞ্জে এখন আর 'হাত' ধরার তেমন 'মন' নেই । অথচ স্বাধীনতার পর 11 বার হাতেই ভরসা রেখেছিল এই কালিয়াগঞ্জ । কয়েক বার জিতেছে CPI(M)। হাত-বামের এই আপাত 'ফাঁক' গলে পঞ্চায়েত ভোট থেকেই একটু একটু করে পদ্ম ফুটেছে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের গঞ্জ-গ্রামে । দশটি পঞ্চায়েতের মধ্যে ন'টিই পদ্ম-দখলে । আর গত লোকসভা ভোটে রায়গঞ্জ জিতেছে BJP-ই । প্রায় দু’লাখ ভোটারের মন কালিয়াগঞ্জে কোনও দিনই জেতেনি ঘাসফুল । স্বাভাবিকভাবেই আশায় ঘর বেঁধেছিল গেরুয়া শিবির । কিন্তু, লোকসভা ভোটের পর নাগরিক পঞ্জি আতঙ্কে কিছুটা হলেও হাওয়া ঘুরেছে সীমান্তবর্তী কালিয়াগঞ্জে । 20শতাংশের কাছাকাছি সংখ্যালঘু ভোট এখানে । রাজনৈতিক মহলের অনুমান, সেই সংখ্যালঘুদের ভরসা পেয়েছে তৃণমূল । সংখ্যালঘুদের কাছে টানাতে পারায় প্রথমবার সেখানে ফুটল ঘাসফুল । 2016 সালে কংগ্রেসের প্রমথনাথ রায় পেয়েছিলেন 112868 ভোট । সেখানে এ বার তৃণমূলের তপনদেব সিংহ 97428 ভোট পেয়ে দু'হাজার বেশি ভোটে জিতলেন গেরুয়া প্রার্থী কমলচন্দ্র সরকারের থেকে ।

image
কালিয়াগঞ্জের জয়ী প্রার্থী তপন দেব সিংহ

আর সব থেকে বেশি নজর ছিল সে আসনটাতে, সেটি দিলীপ ঘোষের ছেড়ে যাওয়া পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর সদর । খড়্গপুর সদর আসনে অবাঙালি ভোটের পরিমাণ বিপুল । 2014 সালে দিলীপ ঘোষ জেতার আগে পর্যন্ত প্রায় সব নির্বাচনেই খড়্গপুর থেকে অবাঙালি প্রার্থীরাই জিততেন । সে CPI-র নারায়ণ চৌবেই হন বা কংগ্রেসের জ্ঞান সিং সোহনপাল । ভোটের বাজারে দিলীপের সঙ্গে লড়াইটা দাঁড়িয়েছিল তৃণমূলের অন্যতম সেনাপতি শুভেন্দু অধিকারীর । খড়্গপুর (সদর) বিধানসভার মধ্যে মূলত খড়্গপুর পৌর এলাকাই পড়ে । 2015 সাল থেকে খড়্গপুর পৌরসভায় ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল । আর 2016 সালের বিধানসভা নির্বাচনে খড়্গপুর (সদর) কেন্দ্র থেকে জেতেন দিলীপ ঘোষ । পৌরপ্রধান প্রদীপ সরকার এ বার নিজেই উপ-নির্বাচনের তৃণমূল প্রার্থী । তাই তৃণমূল, BJP এবং বাম-কংগ্রেস জোট— তিন প্রার্থীর প্রচারেই বারবার উঠে আসছে শহরের উন্নয়ন প্রসঙ্গ । পৌরসভা কী কী কাজ করেছে, প্রচারে তার খতিয়ান তুলে ধরছে রাজ্যের শাসক দল । বিরোধীদের পালটা দাবি, পৌরসভার কাজে দুর্নীতি হয়েছে । কিন্তু, শেষ পর্যন্ত প্রদীপ সরকারে কাছে হার মানতেই হল BJP-র প্রেমচাঁদ ঝাঁকে ।

image
জয়ের উচ্ছ্বাস

আজকের জয়ের পরই একবার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তাঁর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ''অহংকার এবং ঔদ্ধত্যের ফল পেল ওরা'' । টুইটারে তৃণমূল নেত্রী লেখেন, 'এক দুই তিন BJP-কে কবর দিন ৷ এটা মানুষের জয়, উন্নয়নের জয়, এই জয়ের কৃতিত্ব মানুষের ৷ ঔদ্ধত্যের সংস্কৃতি বাংলায় চলে না, বাংলার সংস্কৃতি হল সৌজন্যতা বিনিময় ৷ অহংকারের ফল পাচ্ছে BJP ৷ সংখ্যালঘু, আদিবাসী, রাজবংশী, সকলে আমাদের ভোট দিয়েছেন ৷ এই প্রথম আমরা খড়্গপুরে জিতলাম ৷'

ভোটের ফল প্রকাশ হতেই বেশ কিছুটা হতাশ দিলীপ ঘোষ এবং কম্পানি । ফলাফল খারাপ হয়েছে এটা মেনে নিয়ে তাঁর মন্তব্য, "কী কারণে এমন ফলাফল তা এখনই বুঝতে পারছি না ৷ পর্যালোচনা দরকার ৷ আমাদের সংগঠন চাঙ্গা রয়েছে ৷ সে ভাবেই সংগঠনকে প্রস্তুত করেছি ৷ এখন আমাদের দলের নির্বাচন প্রক্রিয়া চলছে ৷ অনেক নতুন নতুন মুখ আসবেন ৷ নতুন উৎসাহে তাঁরা কাজ করবেন ৷"

সন্দেহ নেই, বাম-কংগ্রেস সমঝোতা এবার পুরোপুরি ব্যর্থ । যে আশায় সুজন চক্রবর্তীরা আবদুল মান্নান, সোমেন মিত্রদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন তা কোনও কাজে এল না । ক্রমেই বামেরা রাজ্যে প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলছে, তা আরও একবার দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে গেল । আর কালিয়াগঞ্জের মতো আসন হাতছাড়া হওয়ার পর কংগ্রেসের খাতাও সেই শূন্যের কোঠায় । আজকের ফল আবার একবার বাম-কংগ্রেস সমঝোতার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল । পৌরভোট বা আগামী বিধানসভা ভোটের আগে এটা নিঃসন্দেহে বড় ধাক্কা ।

আরও পড়ুন : 'সেই 32 নম্বর' বুথে জয়প্রকাশের খাতায় মাত্র 2টি ভোট

আর দিনের শেষে তৃণমূলের অন্দরে একটাই কথা, এতদিন বিরোধীরা হিংসার অজুহাত তুলত । এবারের উপনির্বাচনে তেমন অভিযোগ (দু-একটা ছাড়া) নেই । প্রমাণ হল বাংলার রং সবুজ-ই । আর এই ভোটে প্রশান্ত কিশোরের ভূমিকা নিয়েও উচ্ছ্বসিত তৃণমূল শিবির ।

আরও পড়ুন : অহংকারের ফল পাচ্ছে BJP : মমতা

বছরের শেষ প্রান্তে এসে মোদি-মুকুল-শাহের ত্রিফলা আক্রমণকে ভোঁতা করে দিল মমতা-প্রশান্ত জুটি ।

আরও পড়ুন : কী কারণে এই ফল বুঝতে পারছি না : দিলীপ

কলকাতা, 28 নভেম্বর : ইতিহাস বার বার সাক্ষী থেকেছে । হাজারো ঝড়ঝাপটা সামলে তিনি স্বমহিমায় ফিরে এসেছেন বার বার । বিনা যুদ্ধে তিল পরিমাণ জমিও যে তিনি প্রতিপক্ষকে ছাড়েন না, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে এ কথা বহু চর্চিত-বহু জনবিদিত । আজ পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর সদর, নদিয়ার করিমপুর এবং উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে যে ভাবে মমতার জয়জয়কার, তা নিঃসন্দেহে আগামী বিধানসভা ভোটের আগে বাড়তি অক্সিজেন দিল দলকে । শুধু বিধানসভা কেন, আগামী বছর পৌর ভোটের আগে গেরুয়া শিবিরের কাছে এই ফল বড় ধাক্কা বলেই মনে করা হচ্ছে ।

লড়াইটা শুরু হয়েছিল বছর দুয়েক আগে পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকে । সে সময় শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের একাধিক অভিযোগ উঠেছিল । পরের পরীক্ষা ছিল এ বছরের লোকসভা নির্বাচন । কিন্তু, কোথায় যেন সেই মমতা-মমতা হাওয়াটা ফিকে হয়ে গেছিল । বাংলার মাটিতে গেরুয়া ঝড়ের আভাস মিলছিল । স্বাভাবিক ভাবেই এই তিন উপ-নির্বাচন হয়ে গেছিল মমতার কাছে সম্মান রক্ষার লড়াই ।

image
গত বিধানসভার নিরিখে পরিসংখ্যান

তিন কেন্দ্রের মধ্যে নদিয়ার করিমপুরই একমাত্র তৃণমূলের দখলে ছিল । খড়গপুর সদর ছিল BJP-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের দখলে । আর কালিয়াগঞ্জ কোনও বারই নিজেদের দখলে নিতে পারেনি তৃণমূল । মমতার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল নদিয়ার করিমপুরের আসনটি দখলে রাখা । আর বাকি দুটি আসনের ব্যবধান যতটা সম্ভব কমানো । আর সে কাজ হয়ে যাওয়ার পর খড়্গপুর সদর এবং কালিয়াগঞ্জ জয়ের জন্য ঝাঁপানো । সেই মতো ঘুঁটি সাজিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো । পরামর্শদাতার ভূমিকায় ছিলেন প্রশান্ত কিশোর । আজ ভোটের ফল প্রকাশের পর দেখা গেল শেষ চালে বাজিমাত করে গেলেন মমতাই ।

বাম জমানার শুরু থেকে 2016 পর্যন্ত টানা 39 বছর বামফ্রন্টের বা আরও নির্দিষ্ট করে বললে CPI(M)-এর দখলে ছিল করিমপুর । 2011 সালের পরিবর্তনের ভোটেও তা বামেদের হাতছাড়া হয়নি । 2016-র বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র প্রায় 16 হাজার ভোটে জিতে সেই গড় ছিনিয়ে নেন । কিন্তু লোকসভা ভোটে এক লাফে প্রায় 50 হাজার ভোট বাড়ায় এবার BJP প্রথম থেকেই সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল । তারা বুঝে গেছিল লড়াইটা মূলত তাদের সঙ্গে তৃণমূলের । গত লোকসভা ভোটের আগে নদিয়ার মাটি আকঁড়ে থেকে অভূতপূর্ব জয় এনেছিলেন মহুয়া । সেখানকার মানুষের কাছে 'দিদি' হয়ে উঠেছিলেন । আর এই আসনটা নিজেদের দখলে নিতে ঘুঁটি সাজাচ্ছিলেন BJP-র মুকুল রায় । স্বাভাবিকভাবেই লড়াইটা দাঁড়িয়েছিল মহুয়া বনাম মুকুল । যে ভাবে মুকুলের হাত ধরে লোকসভা ভোটে বাংলায় গেরুয়া আবির উড়েছিল, তাতে মুকুলকেই অনেকে সামনের সারিতে রেখেছিলেন । প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদারকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন এলাকার পর এলাকা । কিন্তু, শেষ হাসি হাসলেন মমতাই । তৃণমূল প্রার্থী বিমলেন্দু সিংহ রায় জিতলেন বিপুল ব্যাবধানে ।

image
করিমপুরে তৃণমূল কর্মীদের জয়োল্লাস

দ্বিতীয় লড়াইটা ছিল উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ । গত লোকসভা ভোটে উত্তরে গেরুয়া ঝড় দেখা গেছিল । আর কংগ্রেসের আলো বলতে ছিল শুধু প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির স্মৃতিটুকু । কিন্তু প্রিয়-হীন কালিয়াগঞ্জে এখন আর 'হাত' ধরার তেমন 'মন' নেই । অথচ স্বাধীনতার পর 11 বার হাতেই ভরসা রেখেছিল এই কালিয়াগঞ্জ । কয়েক বার জিতেছে CPI(M)। হাত-বামের এই আপাত 'ফাঁক' গলে পঞ্চায়েত ভোট থেকেই একটু একটু করে পদ্ম ফুটেছে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের গঞ্জ-গ্রামে । দশটি পঞ্চায়েতের মধ্যে ন'টিই পদ্ম-দখলে । আর গত লোকসভা ভোটে রায়গঞ্জ জিতেছে BJP-ই । প্রায় দু’লাখ ভোটারের মন কালিয়াগঞ্জে কোনও দিনই জেতেনি ঘাসফুল । স্বাভাবিকভাবেই আশায় ঘর বেঁধেছিল গেরুয়া শিবির । কিন্তু, লোকসভা ভোটের পর নাগরিক পঞ্জি আতঙ্কে কিছুটা হলেও হাওয়া ঘুরেছে সীমান্তবর্তী কালিয়াগঞ্জে । 20শতাংশের কাছাকাছি সংখ্যালঘু ভোট এখানে । রাজনৈতিক মহলের অনুমান, সেই সংখ্যালঘুদের ভরসা পেয়েছে তৃণমূল । সংখ্যালঘুদের কাছে টানাতে পারায় প্রথমবার সেখানে ফুটল ঘাসফুল । 2016 সালে কংগ্রেসের প্রমথনাথ রায় পেয়েছিলেন 112868 ভোট । সেখানে এ বার তৃণমূলের তপনদেব সিংহ 97428 ভোট পেয়ে দু'হাজার বেশি ভোটে জিতলেন গেরুয়া প্রার্থী কমলচন্দ্র সরকারের থেকে ।

image
কালিয়াগঞ্জের জয়ী প্রার্থী তপন দেব সিংহ

আর সব থেকে বেশি নজর ছিল সে আসনটাতে, সেটি দিলীপ ঘোষের ছেড়ে যাওয়া পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর সদর । খড়্গপুর সদর আসনে অবাঙালি ভোটের পরিমাণ বিপুল । 2014 সালে দিলীপ ঘোষ জেতার আগে পর্যন্ত প্রায় সব নির্বাচনেই খড়্গপুর থেকে অবাঙালি প্রার্থীরাই জিততেন । সে CPI-র নারায়ণ চৌবেই হন বা কংগ্রেসের জ্ঞান সিং সোহনপাল । ভোটের বাজারে দিলীপের সঙ্গে লড়াইটা দাঁড়িয়েছিল তৃণমূলের অন্যতম সেনাপতি শুভেন্দু অধিকারীর । খড়্গপুর (সদর) বিধানসভার মধ্যে মূলত খড়্গপুর পৌর এলাকাই পড়ে । 2015 সাল থেকে খড়্গপুর পৌরসভায় ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল । আর 2016 সালের বিধানসভা নির্বাচনে খড়্গপুর (সদর) কেন্দ্র থেকে জেতেন দিলীপ ঘোষ । পৌরপ্রধান প্রদীপ সরকার এ বার নিজেই উপ-নির্বাচনের তৃণমূল প্রার্থী । তাই তৃণমূল, BJP এবং বাম-কংগ্রেস জোট— তিন প্রার্থীর প্রচারেই বারবার উঠে আসছে শহরের উন্নয়ন প্রসঙ্গ । পৌরসভা কী কী কাজ করেছে, প্রচারে তার খতিয়ান তুলে ধরছে রাজ্যের শাসক দল । বিরোধীদের পালটা দাবি, পৌরসভার কাজে দুর্নীতি হয়েছে । কিন্তু, শেষ পর্যন্ত প্রদীপ সরকারে কাছে হার মানতেই হল BJP-র প্রেমচাঁদ ঝাঁকে ।

image
জয়ের উচ্ছ্বাস

আজকের জয়ের পরই একবার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তাঁর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ''অহংকার এবং ঔদ্ধত্যের ফল পেল ওরা'' । টুইটারে তৃণমূল নেত্রী লেখেন, 'এক দুই তিন BJP-কে কবর দিন ৷ এটা মানুষের জয়, উন্নয়নের জয়, এই জয়ের কৃতিত্ব মানুষের ৷ ঔদ্ধত্যের সংস্কৃতি বাংলায় চলে না, বাংলার সংস্কৃতি হল সৌজন্যতা বিনিময় ৷ অহংকারের ফল পাচ্ছে BJP ৷ সংখ্যালঘু, আদিবাসী, রাজবংশী, সকলে আমাদের ভোট দিয়েছেন ৷ এই প্রথম আমরা খড়্গপুরে জিতলাম ৷'

ভোটের ফল প্রকাশ হতেই বেশ কিছুটা হতাশ দিলীপ ঘোষ এবং কম্পানি । ফলাফল খারাপ হয়েছে এটা মেনে নিয়ে তাঁর মন্তব্য, "কী কারণে এমন ফলাফল তা এখনই বুঝতে পারছি না ৷ পর্যালোচনা দরকার ৷ আমাদের সংগঠন চাঙ্গা রয়েছে ৷ সে ভাবেই সংগঠনকে প্রস্তুত করেছি ৷ এখন আমাদের দলের নির্বাচন প্রক্রিয়া চলছে ৷ অনেক নতুন নতুন মুখ আসবেন ৷ নতুন উৎসাহে তাঁরা কাজ করবেন ৷"

সন্দেহ নেই, বাম-কংগ্রেস সমঝোতা এবার পুরোপুরি ব্যর্থ । যে আশায় সুজন চক্রবর্তীরা আবদুল মান্নান, সোমেন মিত্রদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন তা কোনও কাজে এল না । ক্রমেই বামেরা রাজ্যে প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলছে, তা আরও একবার দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে গেল । আর কালিয়াগঞ্জের মতো আসন হাতছাড়া হওয়ার পর কংগ্রেসের খাতাও সেই শূন্যের কোঠায় । আজকের ফল আবার একবার বাম-কংগ্রেস সমঝোতার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল । পৌরভোট বা আগামী বিধানসভা ভোটের আগে এটা নিঃসন্দেহে বড় ধাক্কা ।

আরও পড়ুন : 'সেই 32 নম্বর' বুথে জয়প্রকাশের খাতায় মাত্র 2টি ভোট

আর দিনের শেষে তৃণমূলের অন্দরে একটাই কথা, এতদিন বিরোধীরা হিংসার অজুহাত তুলত । এবারের উপনির্বাচনে তেমন অভিযোগ (দু-একটা ছাড়া) নেই । প্রমাণ হল বাংলার রং সবুজ-ই । আর এই ভোটে প্রশান্ত কিশোরের ভূমিকা নিয়েও উচ্ছ্বসিত তৃণমূল শিবির ।

আরও পড়ুন : অহংকারের ফল পাচ্ছে BJP : মমতা

বছরের শেষ প্রান্তে এসে মোদি-মুকুল-শাহের ত্রিফলা আক্রমণকে ভোঁতা করে দিল মমতা-প্রশান্ত জুটি ।

আরও পড়ুন : কী কারণে এই ফল বুঝতে পারছি না : দিলীপ

Mumbai, Nov 28 (ANI): Ahead of Uddhav Thackeray's swearing-in ceremony, bust of his mother Meena Thackeray was decorated with flowers. Uddhav Thackeray will take oath as Chief Minister of Maharashtra on Nov 28. The swearing-in ceremony will be held at Shivaji Park.
Last Updated : Nov 28, 2019, 4:30 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.