কলকাতা, 6 ডিসেম্বর: পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের বিরুদ্ধে প্রায়ই পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলে বিজেপি ৷ অথচ সেই অধ্যক্ষই বিজেপির আপত্তিতে রাজ্য সরকারের ছ’জন মন্ত্রীকে ভোটই দিতে দিলেন না ৷ কারণ, ওই মন্ত্রীরা নিয়ম ভেঙে বিধানসভায় প্রবেশ করে ফেলেছিলেন ৷ যদিও শাসক শিবিরের বক্তব্য, ওই মন্ত্রীরা ভোটাভুটির বেল শুনতে পাননি ৷ তাই প্রবেশ করেছিলেন ৷ পরে বিষয়টি বুঝতে পেরে নিজেরাই ভোটদানে বিরত থাকেন ৷
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় এখন শীতকালীন অধিবেশন চলছে ৷ বুধবার সেই অধিবেশনে আলোচনা হয় ক্রিমিনাল জাস্টিস ডেলিভারি সিস্টেম নিয়ে ৷ সমস্যা তৈরি হয় এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শেষে ভোটাভুটির সময় ৷ ভোটাভুটি শুরুর পরে আকস্মিকভাবে অধিবেশন কক্ষের মধ্যে ঢুকে পড়েন মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন, সুজিত বসু, পার্থ ভৌমিক ও তাজমুল হোসেন ।
যা নিয়ে আপত্তি জানান বিজেপি বিধায়করা । এই নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয় ৷ উত্তাপ এতটাই ছড়ায় যে বিজেপি বিধায়কদের একাংশ বিধানসভার অধিবেশন কক্ষ থেকে ওয়াকআউটের জন্য উদ্যত হন । তখন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রীদের ভোটদানে নিষেধ করেন ।
যদিও এ দিন এই ঘটনার জন্য অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দায়ী করেছেন বিজেপি বিধায়ক শংকর ঘোষ । তিনি বলেন, ‘‘ভোটাভুটি চলাকালীন যাতে বাইরের কেউ প্রবেশ না করতে পারে, সেটা দেখার দায়িত্ব রিটার্নিং অফিসার অর্থাৎ স্পিকারের । এই অবস্থায় কীভাবে রাজ্যের মন্ত্রীরা বিধানসভায় প্রবেশ করল সেটাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ।’’
তবে শাসক শিবিরের তরফ থেকে দাবি করা হচ্ছে, ওই মন্ত্রীরা ভোটাভুটিতে অংশ না নেওয়ায় তাঁরা কোনোভাবেই নিয়মভঙ্গ করেননি । রাজ্যের এক মন্ত্রী এই নিয়ে বলেন, ‘‘যখন এই ঘটনা ঘটছিল, তখন আমরা সংহতি দিবসের অনুষ্ঠান থেকে আসছিলাম । ফলে ভোটাভুটির বেলের আওয়াজ আমরা শুনতে পাইনি । নিজের অজান্তেই বিধানসভায় প্রবেশ করি । তবে আমরা কিন্তু কোনোভাবেই ভোটাভুটিতে অংশগ্রহণ করিনি ৷ কাজেই বিরোধীদের এই অভিযোগ অর্থহীন ।’’
উল্লেখ্য, এবারের শীতকালীন অধিবেশনে শাসক বিধায়কদের হাজিরা নিয়ে আগেই কড়া বার্তা দিয়ে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে উত্তরবঙ্গ সফরে যাওয়ার জন্য এ দিন বিধানসভায় ছিলেন না মুখ্যমন্ত্রী ৷ সেদিনই এমন একটি ঘটনা অস্বস্তিতে ফেলল তৃণমূল কংগ্রেসকে ৷
অন্যদিকে বিজেপি বিধায়ক শংকর ঘোষ এ দিন আরও একটি প্রশ্ন তুলেছিলেন বিধানসভায় ৷ যে বিধায়করা তৃণমূলে যোগ দিলেও বিধানসভার অন্দরে খাতায়কলমে বিজেপি বিধায়ক, তাঁদেরই একজন বাগদার বিশ্বজিৎ দাসকে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শংকর ৷ তিনি জানতে চান, ‘‘অধিবেশন কক্ষে বিজেপির বিধায়ক বলে পরিচিত বিশ্বজিৎকে কেন বিরোধী দলের স্লিপ দেওয়া হচ্ছে না ?’’ কিন্তু ভোটাভুটির সময় মন্ত্রীদের অনুপস্থিতি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হলে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায় ।
আরও পড়ুন: