হাতে হাত ধরে জীবনটা কাটিয়ে দেবেন ভেবেছিলেন । শুরুও করেছিলেন । প্রথমে চুটিয়ে প্রেম । চিঠির আদান প্রদান । ফোনে কথা । গল্প । একটু একাকিত্ব । একটু এক সঙ্গে সময় কাটানো । বাকি জীবনের ব্লু-প্রিন্ট তৈরি...
সবই হয়েছিল । যেমনটা আর পাঁচ জনের হয় ।
যদিও, মেয়ের এই সম্পর্ক প্রথম থেকেই না-পসন্দ ছিল পরিবারের । মেয়েও যে নাছোড়বান্দা । প্রেম যখন করেছি, মরবই তো... পণ করে বসে সে । সব আপত্তি হেলায় উড়িয়ে মনের মানুষের হাত ধরে ঘোরাঘুরিতে দু'বার ভাবেননি ।
তরুণী সুজাতার প্রেমে তখন হাবুডুবু অবস্থা তরুণ সৌমিত্রর । আশেপাশের অনেকে কাণাঘুষো বলতে শুরু করেছিলেন, "ছেলেটা নিজেকে খাঁ নয়, চট্টোপাধ্যায় ভাবতে শুরু করেছে । "
হ্যাঁ, ঠিকই বুঝেছেন, নায়কের নাম সৌমিত্র খাঁ, নায়িকা সুজাতা মণ্ডল ।
আরও পড়ুন : 'নির্লজ্জ-দুশ্চরিত্র-অসতী-ঘরভাঙ্গানি মহিলাকে জালি পার্টি নেত্রী বানিয়েছে'
সে দিনও ছিলেন চর্চায়, আজও...
তাঁরা তখন একে-অপরের পরিপূরক । সুজাতা প্রাথমিক স্কুলের দিদিমণি । সৌমিত্র রাজনৈতিক নেতা । ব্যস্ত দিনলিপির মাঝেই তাঁদের একে অপরের সঙ্গে সময় কাটানো । একটু মনের কথা । একটু উপহার আদান-প্রদান । একটু ভালবাসা ।
আরও পড়ুন : ''কোনওদিন ভুলব না, ক্ষমাও করব না!'' দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে পুলওয়ামা স্মরণে নেটিজেন
আর পাঁচ দিন যাই হোক, প্রেমের দিন, মানে 14 ফেব্রুয়ারি তাঁরা খুব ব্যস্ত । সুজাতার বাড়ির সামনে সৌমিত্রর বাইক দেখে অনেকে মুখ টিপে হাসতেও ভোলেননি । কারণ, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তো তারা 'পথ যদি না শেষ হয়'-এর পথে রওনা দেবেন ।
গত দশ বছর, আজকের দিনটা তাঁদের কাছে ছিল ভেরি ইসস্পেশাল । কালের গতিতে আজ অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে ।
সুজাতা তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরই সুখের সংসারে ফাটল ধরে । বাড়ি ছেড়েছেন । সৌমিত্রও বিচ্ছেদের নোটিস দিয়েছেন । এনেছেন একগুচ্ছ অভিযোগ ।
কখনও বলেছেন, তাঁরা দুই জন আলাদা থাকেন । তাঁদের মধ্যে কোনও আন্তরিকতা নেই । কখনও অভিযোগ, সুজাতা হাইপারটেনশনে ভোগেন এবং ঝগড়ুটে । কখনও অভিযোগ, সুজাতা নাকি সৌমিত্রকে পরিবার থেকে আলাদা হতে জোর করতেন । কখনও অভিযোগ, সুজাতা নাকি সৌমিত্রর বাবা-মা-অন্য আত্মীয়দের সঙ্গে ঝগড়া করতেন । এমন অভিযোগের তালিকা নেহাত কম নয় ।
এতগুলো বছর সকাল থেকে মনের মানুষটার বাড়ির সামনেই দেখা যেত তাঁর বাইক । সুজাতার জন্য নিত্য-নতুন উপহার থাকত । থাকত দেশি-বিদেশি চকোলেট । গোলাপও । কখনও মিলেছে গাড়ির মতো উপহারও ।
আজ সেই সৌমিত্র দিনটার কথা মনে করতে চান না । বলছেন, দেশের মানুষের জন্য এই দিনটা নাকি তিনি পালন করেন না ।
আর সুজাতার দাবি, সৌমিত্রর নামে শাখা-সিঁদুর তিনি ছাড়বেন না । সৌমিত্রর সঙ্গেই ঘর করবেন । আজও তিনি সে-সব কথা বলতে বলতে কেঁদে ওঠেন । কোথায় যেন এখনও মনের ভিতরটা সৌমিত্র-সৌমিত্র করছে ।
সব কিছুর মাঝে যেন প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনীতি । দুই ভিন্ন মতের রাজনীতি । সৌমিত্র-সুজাতার প্রেম-কথা এক সময় বাঁকুড়ার মানুষের মুখে মুখে ফিরত । কখনও শাড়ি-কখনও চুড়িদার-কখনও আরও আধুনিক সাজে সুজাতা যখনই বাড়ি থেকে বের হতেন,পড়শিরা ফিসফিস করতে ছাড়েননি । সঙ্গে অবশ্যই পাঞ্জাবি আর জিনস্ পরিহিত আধুনিক কালের আর এক সৌমিত্র ।
আরও পড়ুন : বিধানসভায় প্রার্থী হচ্ছেন সুজাতা ?
বেশ লাগত জুটিকে । যাঁরা সৌমিত্র-সুজাতাকে চেনেন, তাঁরা আজ মেনে নিতে পারছেন না এই পরিণতি । কথায় কথায় অনেকেই বলে ফেলছেন, রাজনৈতিক মতভেদ হতেও পারে । তাই বলে পারিবারিক...