ETV Bharat / state

আব্বাস-অধীরের স্নায়ুযুদ্ধ, জোটের আকাশে কালো মেঘ নিয়ে শেষ হল বামেদের ব্রিগেড

আব্বাস মঞ্চে উঠতেই আলিঙ্গন করলেন মহম্মদ সেলিম । এগিয়ে এলেন সূর্যকান্ত মিশ্র । আর এদিকে অধীর চৌধুরী আব্বাসকে দেখে বক্তৃতা থামালেন । বক্তব্য ছেড়ে চলে যেতে চাইলেন । এই সবের পর, একটা প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে । এই জোট টিকবে তো ?

Left Front's Brigade rally
ছবি
author img

By

Published : Feb 28, 2021, 7:49 PM IST

কলকাতা, 28 ফেব্রুয়ারি : জনসমাগম হল । হাততালি পড়ল । লাল পতাকায় মুড়ল গোটা এলাকা । সঙ্গে দোসর হাত । রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জায়গায় আহারের আয়োজনও ছিল ।

নিয়মমাফিক সংবাদমাধ্যমের সামনে নিজেদের জোটের প্রমাণ দিতে হাতে হাত তুলে দাঁড়ালেন তাঁরা ।

কিন্তু প্রকৃত উদ্দেশ্য সফল হল কি ?

উদ্দেশ্য । জোট গড়া । তৃণমূলকে সরানো । গেরুয়া আবিরকে মুছে দেওয়া । সফল হল কি এই উদ্দেশ্য ? যেভাবে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের সর্বাধিনায়ক আব্বাস সিদ্দিকীকে নিয়ে মাতামাতি চলল, তারপর এই জোট সফল হবে তো ?

তখন মঞ্চে ভাষণ দিচ্ছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী । মঞ্চে এলেন আব্বাস সিদ্দিকী । করতালিতে ফেটে পড়ল গোটা ব্রিগেড । অধীরের চোখে মুখে বিরক্তি স্পষ্ট হল । এবার বক্তা আব্বাস । একটি বারের জন্যও কংগ্রেসের নাম মুখে আনলেন না । উল্টে তাঁর হুঙ্কার, কারও তোষণ করতে আসিনি । কংগ্রেস সভাপতিকে মঞ্চে রেখেই কংগ্রেসকে নিশানা করলেন আব্বাস ।

Left Front's Brigade rally
আব্বাস সিদ্দিকীকে আলিঙ্গন করছেন সূর্যকান্ত মিশ্র

বাম নেতৃত্বও বারবার জোটের কথা বলেছেন । কিন্তু যে জোটে আব্বাসকে সঙ্গে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের, সেই জোট টিকবে তো ?

আরও পড়ুন : ব্রিগেড থেকে বাম শরিকদের সর্বশক্তি দিয়ে সমর্থনের ঘোষণা আব্বাসের

আজ দশ বছরের ব্যবধানে নতুন সূর্য ওঠানোর অঙ্গীকার ছিল বামেদের । এগারোতে বাংলা থেকে মুছে যাওয়ার পর নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে আজকের সভা ছিল গুরুত্বপূর্ণ । সেই মতো ঘুঁটি সাজিয়েছিলেন বিমান বসুরা । বারবার ব্রিগেড পর্যবেক্ষণ করেছেন । তালিকা তৈরি করেছেন বক্তাদের । বামেদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ এর আগে একাধিকবার এসেছে, তাঁরা নাকি ক্ষমতালোভী । ক্ষমতাকে ধরে রাখতে চান । সাদা চুলের নেতারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখেন । সেই অভিযোগ কাটানোও ছিল আজ বিমান বসুদের কাছে চ্যালেঞ্জ । তাই হয়ত ঐশী ঘোষ, বাদশা মৈত্র, সব্যসাচী চক্রবর্তী, দীপশিতা ধরদের এগিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা । সম্ভবত এর আগে বামেদের সভায় এভাবে এসএফআই, ডিওয়াইএফআই নেতাদের দেখা যায়নি । হয়ত কিছুটা ক্ষত মেরামতের চেষ্টা ছিল আজ । সামান্য কিছু বক্তব্যও শোনা গিয়েছে তাঁদের মুখ থেকে । কিন্তু দিনের শেষে গোটা ব্রিগেড জুড়ে একটাই গুঞ্জন । এই জোট টিকবে তো ?

Left Front's Brigade rally
আব্বাস মঞ্চে উঠতেই বক্তৃতা থামাতে হল অধীরকে, মানভঞ্জনের চেষ্টায় সেলিম

যেভাবে অধীর চৌধুরী আব্বাসকে দেখে বক্তৃতা থামালেন, বক্তব্য ছেড়ে চলে যেতে চাইলেন, তারপরেও টিকবে তো ? আব্বাস মাঠে এলেন, মঞ্চে উঠলেন । আলিঙ্গন করলেন মহম্মদ সেলিম । এগিয়ে এলেন সূর্যকান্ত মিশ্র । হাত বাড়ালেন ডি রাজা । ছুটে এলেন বিমান বসু । এ যেন 'জামাই-আদর' । কিন্তু কোথায় কংগ্রেস নেতারা ? গোমড়া মুখে বসে আছেন তাঁরা । কথায় জোট হলেও এটা প্রকৃত জোট হলো কি ?

আরও পড়ুন : ঝড় উঠেছে, এটাকে ধরে রাখতে হবে; ব্রিগেড থেকে বার্তা দেবলীনা হেমব্রমের

এর আগেও একাধিকবার ব্রিগেডের মাঠে হাতে হাত ধরে জোটের বার্তা দেখা গিয়েছে । হাতে হাত ধরে বিরোধী নেতাদের মঞ্চ আলো করে ফটোশুট এর আগে শেষবারের মতো দেখা গিয়েছিল 2019-এর লোকসভা ভোটের আগে । সে-বার মমতার ডাকে অ-বিজেপি নেতারা একসাথে দাঁড়িয়েছিলেন । মঞ্চে ছিলেন এইচ ডি দেবেগৌড়া, মল্লিকার্জুন খাড়গে, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, ওমর আবদুল্লা, চন্দ্রবাবু নাইডু, কুমারস্বামী, অখিলেশ যাদব, তেজস্বী যাদব । কিন্তু এই অ-বিজেপি ফ্রন্ট যে কার্যক্ষেত্রে অশ্বডিম্ব প্রসব করেছে, তা 2019-এর লোকসভা ভোটেই স্পষ্ট হয় । যা দেখে বিজেপি নেতার টিপ্পনি কেটেছিলেন, "এ জোট ছিল লোক দেখানো । সুবিধাবাদীদের জোট । সুবিধা না পেয়ে তাঁরা অন্যত্র চলে যান ।"

আব্বাস সিদ্দিকী মঞ্চে ওঠার পর কী ঘটল দেখুন

আজ অধীর চৌধুরী এবং আব্বাস সিদ্দিকীর স্নায়ুযুদ্ধ যেন উনিশের সেই জোটের কথাই মনে করিয়ে দিল । হাতে হাত ধরে দাঁড়ালেও বাস্তব চিত্রটা যেন ফ্যাকাশেই থেকে গেল ।

আব্বাস পরে দাবি করেছেন, সোনিয়া গান্ধির সদিচ্ছা আছে জোটের বিষয়ে, কিন্তু বাংলার প্রদেশ নেতাদের জন্যই তা সফল হচ্ছে না । অর্থাৎ, অধীর চৌধুরী, আবদুল মান্নানদের দিকেই যে তাঁর আঙুল, সেবিষয়ে সন্দেহ নেই । জোট হওয়ার আগেই জোট ভেঙে যাওয়ার ইঙ্গিত যেন স্পষ্ট ।

Left Front's Brigade rally
তাল কাটল অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, শান্ত করার চেষ্টা করছেন সেলিম-বিমান

রাজনৈতিক মহলের দাবি, তৃণমূল কংগ্রেসের ভগ্নদশা । বিজেপি এখনও পর্যন্ত রাজ্যে সেভাবে নিজেদের মুখ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি । কখনও শুভেন্দু অধিকারী, কখনও দিলীপ ঘোষকে সামনে রেখে নিজেদের প্রচারতরী সাজাচ্ছে । তখন বাম-কংগ্রেস জোট কিছুটা হলেও নতুন বাতাস আনতে পারত । সঙ্গে আব্বাস । কিন্তু যেভাবে তরুণ প্রজন্মকে তুলে আনতে বাম শীর্ষ নেতাদের অনীহা আবারও প্রকট হল, বা কংগ্রেস-আইএসএফয়ের স্নায়ুযুদ্ধ প্রকাশ্যে এল, তাতে আগামীদিনে কি তৃণমূল বা বিজেপি আরও বেশি সুবিধা পেল? সব জল্পনার অবসান, 2 মে ।

Left Front's Brigade rally
আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে হাত মেলালেন ডি রাজা

কলকাতা, 28 ফেব্রুয়ারি : জনসমাগম হল । হাততালি পড়ল । লাল পতাকায় মুড়ল গোটা এলাকা । সঙ্গে দোসর হাত । রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জায়গায় আহারের আয়োজনও ছিল ।

নিয়মমাফিক সংবাদমাধ্যমের সামনে নিজেদের জোটের প্রমাণ দিতে হাতে হাত তুলে দাঁড়ালেন তাঁরা ।

কিন্তু প্রকৃত উদ্দেশ্য সফল হল কি ?

উদ্দেশ্য । জোট গড়া । তৃণমূলকে সরানো । গেরুয়া আবিরকে মুছে দেওয়া । সফল হল কি এই উদ্দেশ্য ? যেভাবে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের সর্বাধিনায়ক আব্বাস সিদ্দিকীকে নিয়ে মাতামাতি চলল, তারপর এই জোট সফল হবে তো ?

তখন মঞ্চে ভাষণ দিচ্ছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী । মঞ্চে এলেন আব্বাস সিদ্দিকী । করতালিতে ফেটে পড়ল গোটা ব্রিগেড । অধীরের চোখে মুখে বিরক্তি স্পষ্ট হল । এবার বক্তা আব্বাস । একটি বারের জন্যও কংগ্রেসের নাম মুখে আনলেন না । উল্টে তাঁর হুঙ্কার, কারও তোষণ করতে আসিনি । কংগ্রেস সভাপতিকে মঞ্চে রেখেই কংগ্রেসকে নিশানা করলেন আব্বাস ।

Left Front's Brigade rally
আব্বাস সিদ্দিকীকে আলিঙ্গন করছেন সূর্যকান্ত মিশ্র

বাম নেতৃত্বও বারবার জোটের কথা বলেছেন । কিন্তু যে জোটে আব্বাসকে সঙ্গে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের, সেই জোট টিকবে তো ?

আরও পড়ুন : ব্রিগেড থেকে বাম শরিকদের সর্বশক্তি দিয়ে সমর্থনের ঘোষণা আব্বাসের

আজ দশ বছরের ব্যবধানে নতুন সূর্য ওঠানোর অঙ্গীকার ছিল বামেদের । এগারোতে বাংলা থেকে মুছে যাওয়ার পর নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে আজকের সভা ছিল গুরুত্বপূর্ণ । সেই মতো ঘুঁটি সাজিয়েছিলেন বিমান বসুরা । বারবার ব্রিগেড পর্যবেক্ষণ করেছেন । তালিকা তৈরি করেছেন বক্তাদের । বামেদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ এর আগে একাধিকবার এসেছে, তাঁরা নাকি ক্ষমতালোভী । ক্ষমতাকে ধরে রাখতে চান । সাদা চুলের নেতারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখেন । সেই অভিযোগ কাটানোও ছিল আজ বিমান বসুদের কাছে চ্যালেঞ্জ । তাই হয়ত ঐশী ঘোষ, বাদশা মৈত্র, সব্যসাচী চক্রবর্তী, দীপশিতা ধরদের এগিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা । সম্ভবত এর আগে বামেদের সভায় এভাবে এসএফআই, ডিওয়াইএফআই নেতাদের দেখা যায়নি । হয়ত কিছুটা ক্ষত মেরামতের চেষ্টা ছিল আজ । সামান্য কিছু বক্তব্যও শোনা গিয়েছে তাঁদের মুখ থেকে । কিন্তু দিনের শেষে গোটা ব্রিগেড জুড়ে একটাই গুঞ্জন । এই জোট টিকবে তো ?

Left Front's Brigade rally
আব্বাস মঞ্চে উঠতেই বক্তৃতা থামাতে হল অধীরকে, মানভঞ্জনের চেষ্টায় সেলিম

যেভাবে অধীর চৌধুরী আব্বাসকে দেখে বক্তৃতা থামালেন, বক্তব্য ছেড়ে চলে যেতে চাইলেন, তারপরেও টিকবে তো ? আব্বাস মাঠে এলেন, মঞ্চে উঠলেন । আলিঙ্গন করলেন মহম্মদ সেলিম । এগিয়ে এলেন সূর্যকান্ত মিশ্র । হাত বাড়ালেন ডি রাজা । ছুটে এলেন বিমান বসু । এ যেন 'জামাই-আদর' । কিন্তু কোথায় কংগ্রেস নেতারা ? গোমড়া মুখে বসে আছেন তাঁরা । কথায় জোট হলেও এটা প্রকৃত জোট হলো কি ?

আরও পড়ুন : ঝড় উঠেছে, এটাকে ধরে রাখতে হবে; ব্রিগেড থেকে বার্তা দেবলীনা হেমব্রমের

এর আগেও একাধিকবার ব্রিগেডের মাঠে হাতে হাত ধরে জোটের বার্তা দেখা গিয়েছে । হাতে হাত ধরে বিরোধী নেতাদের মঞ্চ আলো করে ফটোশুট এর আগে শেষবারের মতো দেখা গিয়েছিল 2019-এর লোকসভা ভোটের আগে । সে-বার মমতার ডাকে অ-বিজেপি নেতারা একসাথে দাঁড়িয়েছিলেন । মঞ্চে ছিলেন এইচ ডি দেবেগৌড়া, মল্লিকার্জুন খাড়গে, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, ওমর আবদুল্লা, চন্দ্রবাবু নাইডু, কুমারস্বামী, অখিলেশ যাদব, তেজস্বী যাদব । কিন্তু এই অ-বিজেপি ফ্রন্ট যে কার্যক্ষেত্রে অশ্বডিম্ব প্রসব করেছে, তা 2019-এর লোকসভা ভোটেই স্পষ্ট হয় । যা দেখে বিজেপি নেতার টিপ্পনি কেটেছিলেন, "এ জোট ছিল লোক দেখানো । সুবিধাবাদীদের জোট । সুবিধা না পেয়ে তাঁরা অন্যত্র চলে যান ।"

আব্বাস সিদ্দিকী মঞ্চে ওঠার পর কী ঘটল দেখুন

আজ অধীর চৌধুরী এবং আব্বাস সিদ্দিকীর স্নায়ুযুদ্ধ যেন উনিশের সেই জোটের কথাই মনে করিয়ে দিল । হাতে হাত ধরে দাঁড়ালেও বাস্তব চিত্রটা যেন ফ্যাকাশেই থেকে গেল ।

আব্বাস পরে দাবি করেছেন, সোনিয়া গান্ধির সদিচ্ছা আছে জোটের বিষয়ে, কিন্তু বাংলার প্রদেশ নেতাদের জন্যই তা সফল হচ্ছে না । অর্থাৎ, অধীর চৌধুরী, আবদুল মান্নানদের দিকেই যে তাঁর আঙুল, সেবিষয়ে সন্দেহ নেই । জোট হওয়ার আগেই জোট ভেঙে যাওয়ার ইঙ্গিত যেন স্পষ্ট ।

Left Front's Brigade rally
তাল কাটল অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, শান্ত করার চেষ্টা করছেন সেলিম-বিমান

রাজনৈতিক মহলের দাবি, তৃণমূল কংগ্রেসের ভগ্নদশা । বিজেপি এখনও পর্যন্ত রাজ্যে সেভাবে নিজেদের মুখ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি । কখনও শুভেন্দু অধিকারী, কখনও দিলীপ ঘোষকে সামনে রেখে নিজেদের প্রচারতরী সাজাচ্ছে । তখন বাম-কংগ্রেস জোট কিছুটা হলেও নতুন বাতাস আনতে পারত । সঙ্গে আব্বাস । কিন্তু যেভাবে তরুণ প্রজন্মকে তুলে আনতে বাম শীর্ষ নেতাদের অনীহা আবারও প্রকট হল, বা কংগ্রেস-আইএসএফয়ের স্নায়ুযুদ্ধ প্রকাশ্যে এল, তাতে আগামীদিনে কি তৃণমূল বা বিজেপি আরও বেশি সুবিধা পেল? সব জল্পনার অবসান, 2 মে ।

Left Front's Brigade rally
আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে হাত মেলালেন ডি রাজা
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.