কলকাতা, 28 ফেব্রুয়ারি : জনসমাগম হল । হাততালি পড়ল । লাল পতাকায় মুড়ল গোটা এলাকা । সঙ্গে দোসর হাত । রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জায়গায় আহারের আয়োজনও ছিল ।
নিয়মমাফিক সংবাদমাধ্যমের সামনে নিজেদের জোটের প্রমাণ দিতে হাতে হাত তুলে দাঁড়ালেন তাঁরা ।
কিন্তু প্রকৃত উদ্দেশ্য সফল হল কি ?
উদ্দেশ্য । জোট গড়া । তৃণমূলকে সরানো । গেরুয়া আবিরকে মুছে দেওয়া । সফল হল কি এই উদ্দেশ্য ? যেভাবে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের সর্বাধিনায়ক আব্বাস সিদ্দিকীকে নিয়ে মাতামাতি চলল, তারপর এই জোট সফল হবে তো ?
তখন মঞ্চে ভাষণ দিচ্ছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী । মঞ্চে এলেন আব্বাস সিদ্দিকী । করতালিতে ফেটে পড়ল গোটা ব্রিগেড । অধীরের চোখে মুখে বিরক্তি স্পষ্ট হল । এবার বক্তা আব্বাস । একটি বারের জন্যও কংগ্রেসের নাম মুখে আনলেন না । উল্টে তাঁর হুঙ্কার, কারও তোষণ করতে আসিনি । কংগ্রেস সভাপতিকে মঞ্চে রেখেই কংগ্রেসকে নিশানা করলেন আব্বাস ।
বাম নেতৃত্বও বারবার জোটের কথা বলেছেন । কিন্তু যে জোটে আব্বাসকে সঙ্গে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের, সেই জোট টিকবে তো ?
আরও পড়ুন : ব্রিগেড থেকে বাম শরিকদের সর্বশক্তি দিয়ে সমর্থনের ঘোষণা আব্বাসের
আজ দশ বছরের ব্যবধানে নতুন সূর্য ওঠানোর অঙ্গীকার ছিল বামেদের । এগারোতে বাংলা থেকে মুছে যাওয়ার পর নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে আজকের সভা ছিল গুরুত্বপূর্ণ । সেই মতো ঘুঁটি সাজিয়েছিলেন বিমান বসুরা । বারবার ব্রিগেড পর্যবেক্ষণ করেছেন । তালিকা তৈরি করেছেন বক্তাদের । বামেদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ এর আগে একাধিকবার এসেছে, তাঁরা নাকি ক্ষমতালোভী । ক্ষমতাকে ধরে রাখতে চান । সাদা চুলের নেতারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখেন । সেই অভিযোগ কাটানোও ছিল আজ বিমান বসুদের কাছে চ্যালেঞ্জ । তাই হয়ত ঐশী ঘোষ, বাদশা মৈত্র, সব্যসাচী চক্রবর্তী, দীপশিতা ধরদের এগিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা । সম্ভবত এর আগে বামেদের সভায় এভাবে এসএফআই, ডিওয়াইএফআই নেতাদের দেখা যায়নি । হয়ত কিছুটা ক্ষত মেরামতের চেষ্টা ছিল আজ । সামান্য কিছু বক্তব্যও শোনা গিয়েছে তাঁদের মুখ থেকে । কিন্তু দিনের শেষে গোটা ব্রিগেড জুড়ে একটাই গুঞ্জন । এই জোট টিকবে তো ?
যেভাবে অধীর চৌধুরী আব্বাসকে দেখে বক্তৃতা থামালেন, বক্তব্য ছেড়ে চলে যেতে চাইলেন, তারপরেও টিকবে তো ? আব্বাস মাঠে এলেন, মঞ্চে উঠলেন । আলিঙ্গন করলেন মহম্মদ সেলিম । এগিয়ে এলেন সূর্যকান্ত মিশ্র । হাত বাড়ালেন ডি রাজা । ছুটে এলেন বিমান বসু । এ যেন 'জামাই-আদর' । কিন্তু কোথায় কংগ্রেস নেতারা ? গোমড়া মুখে বসে আছেন তাঁরা । কথায় জোট হলেও এটা প্রকৃত জোট হলো কি ?
আরও পড়ুন : ঝড় উঠেছে, এটাকে ধরে রাখতে হবে; ব্রিগেড থেকে বার্তা দেবলীনা হেমব্রমের
এর আগেও একাধিকবার ব্রিগেডের মাঠে হাতে হাত ধরে জোটের বার্তা দেখা গিয়েছে । হাতে হাত ধরে বিরোধী নেতাদের মঞ্চ আলো করে ফটোশুট এর আগে শেষবারের মতো দেখা গিয়েছিল 2019-এর লোকসভা ভোটের আগে । সে-বার মমতার ডাকে অ-বিজেপি নেতারা একসাথে দাঁড়িয়েছিলেন । মঞ্চে ছিলেন এইচ ডি দেবেগৌড়া, মল্লিকার্জুন খাড়গে, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, ওমর আবদুল্লা, চন্দ্রবাবু নাইডু, কুমারস্বামী, অখিলেশ যাদব, তেজস্বী যাদব । কিন্তু এই অ-বিজেপি ফ্রন্ট যে কার্যক্ষেত্রে অশ্বডিম্ব প্রসব করেছে, তা 2019-এর লোকসভা ভোটেই স্পষ্ট হয় । যা দেখে বিজেপি নেতার টিপ্পনি কেটেছিলেন, "এ জোট ছিল লোক দেখানো । সুবিধাবাদীদের জোট । সুবিধা না পেয়ে তাঁরা অন্যত্র চলে যান ।"
আজ অধীর চৌধুরী এবং আব্বাস সিদ্দিকীর স্নায়ুযুদ্ধ যেন উনিশের সেই জোটের কথাই মনে করিয়ে দিল । হাতে হাত ধরে দাঁড়ালেও বাস্তব চিত্রটা যেন ফ্যাকাশেই থেকে গেল ।
আব্বাস পরে দাবি করেছেন, সোনিয়া গান্ধির সদিচ্ছা আছে জোটের বিষয়ে, কিন্তু বাংলার প্রদেশ নেতাদের জন্যই তা সফল হচ্ছে না । অর্থাৎ, অধীর চৌধুরী, আবদুল মান্নানদের দিকেই যে তাঁর আঙুল, সেবিষয়ে সন্দেহ নেই । জোট হওয়ার আগেই জোট ভেঙে যাওয়ার ইঙ্গিত যেন স্পষ্ট ।
রাজনৈতিক মহলের দাবি, তৃণমূল কংগ্রেসের ভগ্নদশা । বিজেপি এখনও পর্যন্ত রাজ্যে সেভাবে নিজেদের মুখ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি । কখনও শুভেন্দু অধিকারী, কখনও দিলীপ ঘোষকে সামনে রেখে নিজেদের প্রচারতরী সাজাচ্ছে । তখন বাম-কংগ্রেস জোট কিছুটা হলেও নতুন বাতাস আনতে পারত । সঙ্গে আব্বাস । কিন্তু যেভাবে তরুণ প্রজন্মকে তুলে আনতে বাম শীর্ষ নেতাদের অনীহা আবারও প্রকট হল, বা কংগ্রেস-আইএসএফয়ের স্নায়ুযুদ্ধ প্রকাশ্যে এল, তাতে আগামীদিনে কি তৃণমূল বা বিজেপি আরও বেশি সুবিধা পেল? সব জল্পনার অবসান, 2 মে ।