কলকাতা, 15 মার্চ : 2016 সালেও একটা একটা বিধানসভার নির্বাচন হয়েছিল এই বাংলায় । এবারও একটা নির্বাচন হচ্ছে । 2016-র মতো এবারেও আছে টানটান উত্তেজনা ভোটের উত্তাপ ঘিরে । কিন্তু তফাৎ একটাই 2016 সালের নির্বাচনে কোথায় একটা যুক্তির লড়াই ছিল শাসক তৃণমূল কংগ্রেস এবং প্রধান বিরোধী বাম-কংগ্রেস জোটের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যু যেমন শিল্প এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন, আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি এবং রাজ্যের সার্বিক উন্নতি ।
কিন্তু এবারের নির্বাচনে সব কিছু চাপিয়ে গেছে মিনিটে মিনিটে দলবদল, গ্ল্যামার জগতকে নিয়ে টানাটানি এবং চটুল স্লোগানের চাপে । এই পরিস্থিতি হচ্ছে রাজ্য তথা দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির ক্ষেত্রে এক মন্বন্তরের প্রকাশ, ভাবছেন শিক্ষাবিদদের একাংশ ।
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ, অমল কুমার মুখোপাধ্যায়ের মতে বাংলা এখন এক ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক দারিদ্র এবং চিন্তাভাবনার মন্বন্তরের মধ্যে দিয়ে চলছে । বলছেন, "কোনও যুক্তির লড়াই নেই । কোনও উন্নয়নের কথা নেই । আছে শুধু নির্লজ্জ কাঁদা ছোড়াছড়ি, 'খেলা হবে'-র মতো চটুল স্লোগান, যাবতীয় নাটুকেপনার চূড়ান্ত প্রদর্শন এবং প্রতিটি জনসভায় নির্লজ্জ মিথ্যাচার । এতে সার্বিক লাভ হচ্ছে না কিছুই । বরং রাজ্যের ভাবমূর্তি আরও ধাক্কা খাচ্ছে এবং ধাক্কা খাচ্ছে ভবিষ্যতের উন্নয়নের সম্ভাবনা ৷"
আরও পড়ুন : নন্দীগ্রামে মমতার প্রার্থীপদ বাতিলের দাবিতে কমিশনে শুভেন্দু
তিনি একইরকম বীতশ্রদ্ধ এই মুহূর্তে দল বদলানো এবং টিকিট না পেয়ে আবার নতুন যোগ দেওয়া দল থেকে পদত্যাগ করা নিয়ে । অমলবাবু বলেন, "দীনেশ ত্রিবেদী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বা প্রবীর ঘোষালের মতো কিছু কিছু লোক হয়তো নিজের বিবেকের টানে দল বদলেছেন । কিন্তু আর বেশিরভাগই কিন্তু দল বদলেছেন হয় নিজেদের দুর্নীতির সাজার হাত থেকে বাঁচতে বা পুরোনো দলে টিকিট না পেয়ে । এটা ভীষণ একটা হাস্যকর ব্যাপার ৷ এই সব নেতারা বাংলা তথা গোটা বাঙালি সমাজের নাম ডোবাচ্ছে দেশের তথা বিশ্বের দরবার ৷"
এবার নির্বাচনের মাঠে গ্ল্যামার জগতের প্রাবল্য নিয়েও সন্দিহান অমলবাবু । তাঁর মতে, "একমাত্র লকেট চট্টোপাধ্যায় ছাড়া সাম্প্রতিককালে গ্ল্যামার জগত থেকে আসা আর কোনও ব্যাক্তিত্বকেই রাজনীতিকে বা তাঁদের সংসদীয় পদকে সিরিয়াসলি নিতে দেখিনি আমি । তাই গ্ল্যামারের জোরে বেশ কিছু একই জগত থেকে আসা ব্যক্তি হয়ত জিতে আসবে । কিন্তু কতটা সিরিয়াসলি তাঁরা মানুষের কাজ করবে এই ব্যাপারে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে ৷"
আরও পড়ুন : বলরামপুরে মমতার সভায় ফের হাওয়া বদলের গন্ধ ?
একই মত অর্থনীতির প্রাক্তন শিক্ষক এবং শিক্ষাবীদ প্রবীর কুমার মুখোপাধ্যায়ের । তিনি বলছেন, "রাজনীতি যখন চটুল স্লোগান সর্বস্ব হয়ে যায় তখন সেই রাজনীতি হয় অন্তঃসারশূন্য । প্রথমে অনুব্রত মণ্ডল বলেছিলেন যে ভয়ঙ্কর এক খেলা হবে । আজকাল দেখি বিভিন্ন জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ও বলছেন খেলা হবে । আগে বামপন্থী পার্টিগুলি এই চুতুল স্লোগান থেকে বিরত থাকত । কিন্তু আজকাল তো দেখছে সিপিআইএমও টুম্পা সোনাকে স্লোগানে নিয়ে এসেছে । বলি এটা হচ্ছেটা কি? তা এইরকম অন্তঃসারশূন্য রাজনীতিতে যেন সামাজিক বা অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা থাকবে না সেটাই তো স্বাভাবিক । রাজনীতিকে একটা হাসির খোরাক করে দিয়েছে আজকের বাংলার রাজনৈতিক নেতারা ৷"
দলবদলানো নিয়ে প্রবীরবাবুর বক্তব্য আরও তির্যক । প্রবীরবাবু বলেন, "কিছুদিন আগে পর্যন্ত শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দোপাধ্যায় বিজেপির হয়ে রোড শো করেছেন । কিন্তু বেহালা (পূর্ব) বিধানসভা কেন্দ্র থেকে টিকিট না পেয়ে শোভনবাবু বিজেপি থেকে পদত্যাগ করলেন । তাঁর সঙ্গে পদত্যাগ করলেন বৈশাখী বন্দোপাধ্যায়ও । এটা কি ধরণের রাজনৈতিক আদর্শ জানি না বাপু । তবে একটা কথা বলব যে কিন্তু বেহালা (পূর্ব) বিধানসভা কেন্দ্র থেকে শোভনবাবুকে প্রার্থী না করে ঠিক কাজই করেছে বিজেপি । কারণ ওই একই কেন্দ্র থেকে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী করেছে শোভনবাবুর প্রাক্তন স্ত্রী, রত্না চট্টোপাধ্যায়কে । তাই শোভনবাবু প্রার্থী হলে পারিবারিক কলহ যে কোন কলতলার ঝগড়ায় পর্যবসিত হতো তা ভাবলেই আতঙ্ক লাগে ৷"