কলকাতা, 21 জুন: যে পরিমাণ বাহিনী মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন তা পর্যাপ্ত নয়। সেক্ষেত্রে 2013 সালের পঞ্চায়েত ভোটের প্রসঙ্গও টেনে বাহিনী বাড়ানোর পক্ষেই কার্যত সওয়াল করলেন খোদ কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ৷ বুধবার পঞ্চায়েত ভোট মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের বেঞ্চ স্পষ্ট জানায়, গত 2013 সালে রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটে 80 হাজারের বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান এবং প্রায় এক লক্ষ রাজ্য পুলিশ মোতায়েন ছিল ৷
এরপরই প্রধান বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে জানান, সেই তুলনায় নিশ্চিতভাবে এবারের ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী বেশি থাকা উচিৎ ৷ কারণ হিসাবে আদালতের ব্যাখ্যা, রাজ্যে এই মুহূর্তে 22টি জেলা ৷ একইসঙ্গে, রাজ্য নির্বাচন কমিশন যদি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয় তবে কমিশনারের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিৎ বলেও মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি ৷
এর আগে বাহিনী মোতায়েন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টেও ধাক্কা খায় রাজ্য নির্বাচন কমিশন ৷ পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের প্রশ্নে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখে দেশের শীর্ষ আদালতও ৷ এরপর ফের হাইকোর্টে এদিন একপ্রস্থ শুনানি হয় ৷ মূলত হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিল 48 ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে, কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও সেই নির্দেশ পালন করেনি রাজ্য নির্বাচন কমিশন ৷ আর তাতেই আদালত অবমাননার মামলা রুজু হয় ফের ৷ সেই মামলার শুনানিতে এদিন কমিশনের ভূমিকায় তীব্র উষ্মাপ্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি ৷
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটে নথি বিকৃতির অভিযোগে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
এদিন মামলার শুনানিতে হাইকোর্ট জানায়, আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে চাইছে না রাজ্য নির্বাচন কমিশন। প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, আগামী 24 ঘণ্টার মধ্যে সব জেলায় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। একই সঙ্গে, বাহিনী 2013 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে যেন বেশি হয় তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
প্রসঙ্গত, 2013 সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে এক লক্ষেরও বেশি রাজ্য পুলিশ এবং 80 হাজারের বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল মোতায়েন করা হয়েছিল। তখন রাজ্যে জেলার সংখ্যা ছিল মাত্র 17টি। এখন 22টি জেলা। স্বাভাবিক নিয়মেই বাহিনী সংখ্যায় আরও বেশি হওয়া উচিৎ 2013-র তুলনায়। একইসঙ্গে, রাজ্য নির্বাচন কমিশন এখনও পর্যন্ত নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ বলে মনে করছে হাইকোর্ট। যে পরিমাণ বাহিনী মোতায়েন করার কথা জানানো হয়েছে কমিশনের তরফে তা পর্যাপ্ত নয় বলেই মনে করছেন প্রধান বিচারপতি। একইসঙ্গে, এদিন প্রধান বিচারপতির ভর্ৎসনার মুখেও পড়েন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীবা সিনহা ৷ এদিন পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি বলেন, "নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে না-পারলে পদ ছেড়ে দিতে পারেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার, সেক্ষেত্রে রাজ্যপাল নতুন কমিশনার নিয়োগ করবেন ৷"
অন্যদিকে, বিরোধী দলনেতার আইনজীবী সৌম্য মজুমদার প্রশ্ন তুলে বলেন, "আট জুলাই ভোট আর ছয় জুলাই বাহিনী মোতায়েন করা হবে? ভিন রাজ্যের পুলিশ ও এক হাজার 700 কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে 22টি জেলার জন্য বলে আমরা জানতে পেরেছি। সাধারণ ভোটারদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে কী করে?" উল্লেখ্য, 13 ও 15 জুনের নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হলেও তা খারিজ হয়। সুপ্রিমকোর্ট পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, রাজ্যের পরিস্থিতি, শান্তি ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা প্রয়োজন। নিরেপক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন গণতন্ত্রের প্রাণ বলে জানায় সুপ্রিমকোর্ট।