কলকাতা, 15 জুলাই : এই প্রথমবার নয় । এর আগেও বহুবার বেতন বৃদ্ধির দাবিতে উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে পথে নেমেছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা । এবার আর শুধু জমায়েত বা অবস্থান নয়, দাবি আদায়ে অনশন শুরু করেছেন তাঁরা । শুক্রবার বেলা 12টা নাগাদ করুণাময়ী থেকে মিছিল করে সল্টলেকের উন্নয়ন ভবনের সামনে অবস্থান শুরু করেন হাজারেরও বেশি প্রাথমিক শিক্ষক । শনিবার বেলা 12টা থেকে অবস্থানের পাশাপাশি অনশন কর্মসূচি শুরু করেন তাঁরা । অনশনকারীদের অভিযোগ, এখনও পর্যন্ত কোনও সদুত্তর বা বার্তা মেলেনি সরকার বা শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে । উপরন্ত, একফোঁটা জল পর্যন্ত দিচ্ছে না প্রশাসন । বাধ্য হয়ে তাঁদের নিজেদেরই পানীয় জল ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হয়েছে বলে দাবি অনশনকারীদের ।
UUPTWA-র কোর কমিটির সদস্য চন্দন চ্যাটার্জি বলেন, "প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন কাঠামোতে যে ভুল রয়েছে সেটা সরকার স্বীকার করেছে । এখন আমাদের দাবি, সেই বেতন কাঠামোর ভুলটাকে আমাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে সংশোধন করুক সরকার । এছাড়াও যে 14 জন শিক্ষককে অবৈধভাবে বদলি করা হয়েছে, তাঁদের অবিলম্বে নিজের স্কুলে পুনর্বহাল করতে হবে ।" তিনি আরও বলেন, "শিক্ষকদের নিজের স্কুলে পুনর্বহাল করার দাবিতে 20 জন শিক্ষক অনশন করছিলেন । ইতিমধ্যেই একজন অসুস্থ পড়েছেন । তাঁকে আমরা অনশন থেকে তুলে নিয়েছি । বর্তমানে, সম্পাদিকা পৃথা বিশ্বাস সহ 19 জন অনশন করছেন । যাদের মধ্যে 14 জন পুরুষ ও 5 জন মহিলা রয়েছে ।"
প্রশাসনের বিরুদ্ধে পানীয় জলটুকু পর্যন্ত না দেওয়ার অভিযোগ তুলে চন্দন চ্যাটার্জি বলেন, "48 ঘণ্টা কেটে গেছে । এখনও পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে কোনওরকম সদুত্তর বার্তা পাইনি আমরা । একফোঁটা জল পর্যন্ত দিয়ে সাহায্য করেনি প্রশাসন । বরং আমাদের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে অসহযোগিতা করা হচ্ছে । সরকারের পক্ষ থেকে, পৌরসভার পক্ষ থেকে আমাদের পানীয় জল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আন্দোলনকারীদের কোনও পানীয় জল দেওয়া হবে না । সরকারের এই রকম মানসিকতা । এই সরকারের ন্যূনতম লজ্জাবোধ নেই । জল সরবরাহ করাটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব । মাননীয়া কয়েকদিন আগে মিছিল করেছেন এই জল সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে । অথচ এখানে সারা পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষকরা এসেছেন, আর উনি জল বন্ধ করে দিয়েছেন । আমাদের কালকে একজন ম্যাডাম অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভরতি হয়েছেন । আরও যারা অনশনকারী রয়েছেন তাদেরও শারীরিক অবনতি হচ্ছে । আমরা ডাক্তারের ব্যবস্থা নিজেরা করে রেখেছি । অ্যাম্বুলেন্স পেছনে রাখা আছে । সমস্তটাই আমাদের নিজেদের পক্ষ থেকে করা হয়েছে । সরকারের কাছ থেকে এই ন্যূনতম পরিষেবাটাও আমরা পাচ্ছি না ।"
শুধু জল নয়। গতকাল অনশনকারীদের মধ্যে একজন শিক্ষিকা অসুস্থ হয়ে গেলে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রশাসন অ্যাম্বুলেন্সও দেয়নি বলে অভিযোগ অনশনকারীদের । শৌচালয় বলতে করুনাময়ী বাস স্ট্যান্ডের পে অ্যান্ড ইউজ়ই একমাত্র ভরসা । তার পাশাপাশি, পুলিশ ক্যান্টিনের শৌচালয়টিও তাঁদের ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে বর্তমানে । কিন্তু, পানীয় জলের সমস্যাও কিছুতেই দূর হচ্ছে না । নিজেরাই পরিশুদ্ধ জলের ড্রাম কিনে জলের চাহিদা মেটাচ্ছেন ।
অন্যদিকে, অনশনকারীরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, প্রশাসনের সঙ্গে কোনও রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসবেন না তাঁরা । এই প্রসঙ্গে চন্দন চ্যাটার্জি বলেন, "আমরা কোনও রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসব না । কারণ বিগত 24 জুন আমরা অনুষ্ঠান করেছিলাম রানি রাসমণিতে । সেখানে আমরা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করার পর, সরকারের তরফে কোনও সদুত্তর এখনো পর্যন্ত পাইনি । তাই সরকার যা কিছু ভাবছেন তা যেন আমাদের অনশন মঞ্চে এসে বলে যান । প্রধান শিক্ষকরা নিজেদের কানে শুনুক । সরকারকে ধন্যবাদ দিয়ে আমরা নিজেরা অনশন প্রত্যাহার করে বাড়ি চলে যাব ।"