কলকাতা, 29 নভেম্বর: ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী বুধবার দেড় ঘণ্টা ধর্মতলায় বিজেপির প্রতিবাদ সভার মঞ্চে থাকার কথা ছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ৷ কিন্তু তিনি উপস্থিত ছিলেন প্রায় 45 মিনিটের মতো ৷ ভাষণও দিয়েছেন মাত্র 23 মিনিট ৷ তাও আবার শুরুতে জনতার গর্জন শুনতে পেয়ে না কিছুটা হতাশাও ব্যক্ত করেন তিনি ৷ ভাষণের শুরুতে রাজ্য সভাপতির নাম বলতে গিয়ে হোঁচটও খান ৷ স্বাভাবিকভাবেই তাই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি বিজেপির মেগা ইভেন্ট ফ্লপ হয়ে গেল ? আর সেটা টের পেয়েই ভাষণের সময় কাটছাঁট করলেন গেরুয়া শিবিরের এই হেভিওয়েট নেতা ?
বুধবার কলকাতার ভিক্টোরিয়া হাউজের সামনে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছিল বিজেপি ৷ দলের নেতা, বিধায়ক, সাংসদ, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন ৷ তবে মূল আকর্ষণ ছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষণকে ঘিরে ৷ দুপুর 2টোর কিছু আগে শাহ যখন সভামঞ্চে পৌঁছান, তখন ভাষণ দিচ্ছেন বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথা মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ ৷ অমিত শাহ আসায় তাঁর ভাষণ স্বাভাবিকভাবেই মাঝপথে থেমে যায় ৷
অমিত শাহ মঞ্চে থাকাকালীন ভাষণ দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও বঙ্গ বিজেপির বর্তমান সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ৷ শুভেন্দু অধিকারী ধরা গলায় সামান্য কিছুক্ষণ কথা বলেন ৷ আর সুকান্ত স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে ভাষণ দিয়ে পোডিয়াম ছেড়ে দেন অমিত শাহের জন্য ৷ আর ভাষণের সময় সেই সুকান্তর পদবিই ভুল বলেন শাহ ৷ মজুমদারের বদলে মজমুদার বলেন ৷ যদিও শুভেন্দু অধিকারীর নাম ও পদবি বলার ক্ষেত্রে কোনও ভুল করেননি শাহ ৷ নিন্দুকেরা বলছে, যে বিষয় বা নাম বারবার বলা হয়, তা রপ্ত করা অনেক বেশি সহজ হয় ৷ সেই কারণেই কি সুকান্তর নাম বলতে গিয়ে হোঁচট খেলেন শাহ ?
আর একই হোঁচট কি বঙ্গ বিজেপিও খেল সভা আয়োজন করতে গিয়ে৷ কারণ, মঙ্গলবার সভাস্থলের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে গিয়ে সুকান্ত মজুমদার দাবি করেছিলেন যে অমিত শাহের সভার জন্য কলকাতায় গেরুয়া সুনামি হবে ৷ অথচ বক্তৃতার শুরুতে জনতার গর্জন সেভাবে শুনতেই পেলেন না অমিত শাহ ৷
বক্তৃতা করতে উঠে তিনি ভারত মায়ের নামে জয়ধ্বনি দেওয়ার আহ্বান জানান ৷ শুরুতে সেভাবে বিজেপির নেতা-কর্মীদের চিৎকার তাঁর কানে পৌঁছায়নি ৷ সেই কারণে শাহকে বলতে শোনা যায়, ‘‘...বাংলার বাসিন্দাদের আওয়াজের আজ কী হল ? 24-এ মোদিজিকে প্রধানমন্ত্রী করতে হবে কি হবে না ! চিৎকার করে বলুন, করতে হবে কি হবে না ! 26-এ বাংলায় বিজেপির সরকার গড়তে হবে কি হবে না ! তাহলে এমন আওয়াজ চলবে না ৷’’
প্রশ্ন উঠেছে, কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হল ? তাহলে কি গেরুয়া সুনামি হলই না ? সেই কারণেই কি কর্মীদের গলার স্বর ঠিকভাবে শুনতে পেলেন না অমিত শাহ ? আর সেই কারণেই কি মাত্র 23 মিনিট ভাষণ দিয়েই নেমে গেলেন অমিত শাহ ? যদিও এ দিন মঞ্চ থেকে বারবার অভিযোগ করা হয়েছে যে পুলিশ বিভিন্ন রাস্তায় মিছিল ঘুরিয়ে দিচ্ছে, যাতে সভাস্থলে সঠিক সময় বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা পৌঁছাতে না পারেন ৷
পুলিশের একটি সূত্র বলছে যে এ দিন প্রায় 70 হাজার লোক হয়েছিল সভায় ৷ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পুলিশ সাধারণত বিরোধী দলের সভায় জনসমাগমকে কমিয়ে দেখান ৷ সেক্ষেত্রে ধরা যায় যে আরও হাজার দশেক লোক বেশি ছিল ৷ কিন্তু এই পরিমাণ লোককে জনসুনামি হিসেবে ধরা সম্ভব !
তাছাড়া রাজনৈতিক মহল বলছে যে এ দিনের শাহের ভাষণের সেই ধার ছিল না ৷ সামনেই লোকসভা নির্বাচন ৷ সেই প্রেক্ষিতে তিনি যতটা আক্রমণাত্মক হবেন বলে মনে করা হয়েছিল, ততটা আক্রমণাত্মক তাঁকে দেখায়নি ৷ তাহলে কি আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বঙ্গের পরিস্থিতির দেওয়াল লিখন এ দিন সভামঞ্চের সামনের ছবিটা দেখেই পড়ে ফেললেন গেরুয়া রাজনীতির চাণক্য !
আরও পড়ুন: