কলকাতা, 1 ফেব্রুয়ারি: বুধবার সংসদে বাজেট (Union budget 2023) পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন । দেশের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির পরিস্থিতিতে দেশের সাধারণ মানুষ তাঁর দিকে তাকিয়ে ছিলেন । হয়তো এ বারের বাজেটে দেশের আম-আদমিকে আশার কথা শোনাবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ! কিন্তু এ বারের বাজেটে কার্যত আশাহত হয়েছেন দেশের গরিব ও সাধারণ মানুষ । এমনই মত বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ তথা অধ্যাপক শান্তনু বসুর (Economist Reacts on Budget)।
জনতার উপর বাজেটের প্রভাব কী: বুধবার বাজেট পেশের পর এই অর্থনীতিবিদের প্রতিক্রিয়া নেয় ইটিভি ভারত । সাধারণ থেকে মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত শ্রেণির মধ্যে এই বাজেটের প্রভাব কী ! এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বলেন, বাজেট হল দেশের আর্থিক স্বাস্থ্য আগামী এক বছর কেমন থাকবে এবং কীভাবে চলবে তারই একটা সার্বিক পরিকল্পনা । কতটা আয় করেছি, কতটা ব্যয় করেছি, কতটা আয় করতে পারি এবং কতটা ব্যয় করতে পারি তারই সামগ্রিক প্রতিফলন ।
'শহরকেন্দ্রিক বাজেট': শান্তনু বসু (Santanu Basu) বললেন, এই দেশ গ্রাম এবং শহর দুই ভাগে বিভক্ত । এই বাজেট নিতান্তই শহরকেন্দ্রিক । গ্রামীণ মানুষ কার্যত এই বাজেট থেকে বঞ্চিত হয়েছেন । বিশেষ করে এই বাজেটে কৃষকদের জন্য ন্যূনতম আশার বাণী শোনানো হয়নি । তাঁর মতে, এ দিন কেন্দ্রীয় বাজেটে যে ঘোষণা বা চমক দেওয়া হয়েছে তা মূলত শহরকেন্দ্রিক ।
'নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে বাজেট': তিনি মনে করছেন, সামনেই একাধিক রাজ্যের নির্বাচন রয়েছে । সেই নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই এই বাজেট পেশ করা হয়েছে । এই বাজেটে নতুন শিক্ষানীতি ঘোষণার কথা বলা হলেও, শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দবৃদ্ধি নিয়ে একটি বাক্যও খরচ করেননি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী । এ বারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনের কথা বলেছেন । কিন্তু দেশের কত শতাংশ মানুষ এই ডিজিটাল ইন্ডিয়া সম্পর্কে বোঝেন, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে ।
পুরনো প্রকল্পের পর্যালোচনা নেই: শান্তনু বসুর মতে, কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে এতগুলি প্রকল্প রয়েছে, সেই প্রকল্পের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে বলতে পারতেন নির্মলা সীতারমন । প্রয়োজনে কোথাও বরাদ্দ বৃদ্ধি কোথাও কম করা যেতে পারত । কিন্তু সে পথে না হেঁটে নতুন নতুন প্রকল্প ঘোষণা আর তাতে অর্থ বিনিয়োগ আদতে মানুষকে পুরনো প্রকল্পগুলির সাফল্য ব্যর্থতার পর্যালোচনা থেকে মুখ সরিয়ে দেওয়ার প্রয়াস ।
আরও পড়ুন: গরিব-বিরোধী সুবিধাবাদীদের বাজেট, কেন্দ্রকে নিশানা মমতার
করছাড় দিতে গিয়ে টান পড়বে সরকারি কোষাগারে: এ দিন করছাড়ের ঘোষণা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এই অর্থনীতির শিক্ষক বলেছেন, এতগুলো রাজ্যে ভোট আসছে, মূল্যবৃদ্ধি থেকে কোনও রক্ষাকবচ যেখানে সরকার দিতে পারছে না, সেখানে করছাড় দেওয়া ছাড়া উপায় কী । এ দিনের ঘোষণা থেকে একটা জিনিস স্পষ্ট, আগামী দিনে নতুন কর কাঠামোই ডিফল্ট হিসেবে ব্যবহৃত হবে ।
অর্থনীতিবিদ বলেছেন, দেশের মধ্যবিত্ত মানুষকে করছাড় দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রায় 30 হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাতে হবে । কিন্তু ঘুরপথে আদতে তা কেন্দ্রীয় সরকারের কোষাগারেই জমা হবে । এক একবারে তেলের দাম এক টাকা বাড়ালেই এর থেকে অনেক বেশি টাকা সরকারের কোষাগারে জমা হবে ।
'সাধারণের জন্য সুখবর নেই বাজেটে': এ দিন এই অর্থনীতিবিদের গলায় বাজেট নিয়ে আক্ষেপও শোনা গিয়েছে । যে পরিমাণে মূল্যবৃদ্ধির বাড়ছিল, তাতে দেশের সাধারণ মানুষ আশা করেছিলেন তাঁদের কথা ভেবে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের উপর জিএসটি প্রত্যাহার করা হবে । কিন্তু বাজেট শেষে এক কথায় একে পর্যালোচনা করতে গেলে বলতে হয়, এখানে রয়েছে প্রতিশ্রুতির বন্যা ও ছেলেমানুষী ৷ গরিব তথা সাধারণ মানুষের জন্য কোনও সুখবর (Budget will disappoint poor people) শোনাতেই পারলেন না কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ।