কলকাতা, 2 জুলাই: অসাধু ট্রাক মালিকদের মোটা টাকার বিনিময়ে সুবিধা পাইয়ে দিতে ছোট ব্যবসায়ীদের উপর পুলিশের জুলুমের অভিযোগ (Truck Owners Association Allegation Against Police Extortion)৷
এর আগেও একাধিকবার পুলিশি জুলুম বন্ধের দাবিতে সরব হয়েছে ট্রাক সংগঠন। ট্রাক ধর্মঘটের পথে হাঁটেও তারা। ফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের মতে কিছু অসাধু ট্রাক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে কিছু পুলিশ।
ট্রাক ওভারলোডের জেরে যেমন বাড়ছে দুর্ঘটনা তেমনই সড়ক, ফ্লাইওভার ও ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই ওভারলোড বন্ধ করতে ইতিমধ্যে ভারি জরিমানার কথাও জানিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু মালিক পক্ষের বক্তব্য যে প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ নিলেও আসলে সর্ষের মধ্যেই তো ভুত! তাই প্রশাসনের নাকের নিচ দিয়ে এখনও চলছে লেনদেন।
সংগঠনের সভাপতি সুভাষচন্দ্র বসু বলেন, "প্রতি মুহূর্তেই ছোট ট্রাক ব্যবসায়ীদের হয়রানির মুখোমুখি হতে হয় । সব চালকই অভিযোগ জানিয়েছেন আমাদের কাছে। এমনিতেই লকডাউনের সময় পণ্য-পরিবহণ ব্যাপকভাবে ধাক্কা খেয়েছে যার থেকে আমরা এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি। ওই সময় ট্রাকই রাজ্যের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে অত্যাবশ্যক সামগ্রী এবং ওষুধপত্র। প্রত্যেকটা ট্র্যাফিক গার্ডে আগে দিনে ট্রাক পিছু 980টি কেস দেওয়া হত। এখন তার সংখ্যা আরও বেড়ে গিয়েছে।"
আরও পড়ুন : প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এখনও চলছে ওভারলোডিং, মার খাচ্ছে ছোট ট্রাক ব্যবসায়ীরা
তিনি আরও বলেন, "ট্রাফিক পুলিশ, সিভিক পুলিশ, গ্রামীণ পুলিশের জুলুম চলছে রাজ্যের সমস্ত জায়গায়। বিশেষ করে সিভিক পুলিশের দৌরাত্ম্য যেভাবে বেড়েছে তাতে নাজেহাল হয়ে উঠছি আমরা। সিভিক পুলিশের অধিকার নেই কোনও ট্রাক চালকের কাছ থেকে কাগজ দেখার। সেটা একমাত্র ট্রাফিক পুলিশ বা থানার সাব-ইন্সপেক্টরাই দেখতে পারেন। কাগজ দেখার নাম করে সিভিক পুলিশ টাকা আদায় করছে ট্রাক চালকদের থেকে। এমনকী পুজোর মুখেও জোড় পূর্বক টাকা আদায় করার মাত্রাও যেমন বারে তেমনই টাকার অঙ্কটাও বেড়ে যায়।"
ঠিক একই কথা বলেন ফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সজল ঘোষ বলেন, "সম্প্রতি জলপাইগুড়ির ঘিস নদী থেকে নুরি পাথর তুলে ওভারলোড করছে অসাধু কিছু ট্রাক ব্যবসায়ী আমরা এর বিরোধিতা করেছি। অথচ ছোট ব্যবসায়ীদের ওই নদীর থেকে নুড়ি পাথর তুলতে আটকাচ্ছে স্থানীয় পুলিশ। জলপাইগুড়ি জেলা ইউনাইটেড ট্রাক অনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এই বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনলে তাদের কথা শোনা হয়নি। ওখানকার কিছু অসাধু বালি মাফিয়া সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিছু পুলিশ ও প্রশাসনের কিছু ব্যক্তিরাও। ওই ব্যবসায়ীদের সুবিধা পাইয়ে দিতে স্থানীয় পুলিশ সংগঠন ও ছোট ব্যবসায়ীদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করছে। আলোচনায় মীমাংসা করার চেষ্টাও বিফলে যায়। এই ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে শুরু করেছে। কিন্তু এই সব কার্যকলাপের জন্য দিনের পর দিন আমরা আমাদের ন্যায্য লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। দিনের পর দিন পুলিশের এহেন দাবিদাওয়ার বিরুদ্ধে সরব হলেও অত্যাচারের পরিমাণ আরও বেড়েছে ।"
অভিযোগ, সারাবছরই এই পরিস্থিতি থাকে। তবে দীর্ঘ দিনের ওভারলোডিং সমস্যা যখন প্রশাসন কড়া হাতে দমন করার চেষ্টা করছে তখনই ছোট ও মাঝারি ট্রাক মালিকদের উপর এই অত্যাচার বাড়ছে। অথচ কিছু অসাধু বড়লোক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জোট বেঁধেছে কিছু পুলিশ। ওভারলোড করার জন্য এরা মোটা অঙ্কের 'মান্থলি' আকারে আগেই টাকা দিয়ে রাখছে স্থানীয় পুলিশকে। তাই মরছে ছোট ব্যবসায়ীরা।
আরও পড়ুন : পেট্রাপোলে পণ্য বোঝাই গাড়িতে আগুন, পুড়ে ছাই 3 ট্রাক
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে 7 লাখ পণ্য-পরিবহণ গাড়ি চলছে এবং 80 লক্ষ মানুষ এই কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন । রাজ্যে যেখানে কর্মসংস্থান নেই সেখানে লাভজনক একটি শিল্পকে এইভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে। গাড়ির পারমিট, রোড ট্যাক্স থেকে সরকার রাজস্ব পাচ্ছে। তারপরও কেন এত পুলিশি হয়রানি হচ্ছে। এমনটাই দাবি তুলেছেন ট্রাক মালিক সংগঠনের কর্মীরা।