কলকাতা/দুর্গাপুর, 2 জানুয়ারি: কেন্দ্রের ভারতীয় ন্যায় সংহিতার বিরুদ্ধে এবার অনির্দিষ্টকালের জন্য চাক্কা জ্যামের ডাক দিল খিদিরপুর পোর্ট এলাকায় বিভিন্ন সংস্থার হয়ে কাজ করা ট্রাকচালকরা ৷ পথ দুর্ঘটনা আইনে 10 বছরের কারাদণ্ড ও 7 লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধানের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন বলে জানিয়েছেন বন্দর এলাকার ট্রাক ইউনিয়নের নেতারা ৷ অন্যদিকে, সংহিতার পরিবহণ সংক্রান্ত আইনের প্রতিবাদে কাঁকসায় 'স্টিয়ারিং ছাড়ো আন্দোলন' শুরু করেছে তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল সংস্থার ট্যাঙ্কার চালকরা ৷ তিনটি তেল সংস্থার গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে আন্দোলকারী ট্যাঙ্কার চালকরা ৷
তাঁদের দাবি, কেন্দ্র নয়া আইন আনার আগে পথ দুর্ঘটনা কেন ঘটছে ? তা যাচাই করে দেখল না ৷ কোন যুক্তিতে ট্রাক চালকদের উপর এই শাস্তির খাড়া ঝুলিয়ে দেওয়া হল ? প্রশ্ন তুলেছে, তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল সংস্থার ট্যাঙ্কার চালকরা ৷ তাঁদের অভিযোগ, বিভিন্ন প্রান্তে জাতীয় সড়কের অবস্থা বেহাল ৷ কোথাও আবার ব্যাপক যানজট হয় ৷ সেই কারণেই দুর্ঘটনা ঘটছে বিভিন্ন সময় ৷ এর দায় কেন্দ্রীয় সরকারের ৷ তাঁরা আরও অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় সরকার হঠাৎই নয়া পরিবহন আইন বলবৎ করেছে ৷ যেখানে বলা হচ্ছে, কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে চালকদের লক্ষাধিক টাকার জরিমানার দিতে হবে ৷ এই আইন তারা মানছে না বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির ট্যাঙ্কার চালকরা ৷
এই আইনের বিরুদ্ধেই দেশ জড়ে সরব হয়েছে বিভিন্ন ট্রাক চালক সংগঠনগুলি ৷ এই আইন প্রত্যাহারের দাবিতে আজ খিদিরপুরেও বিক্ষোভে নামল বন্দর এলাকার ট্রাক ইউনিয়নগুলি ৷ যার জেরে খিদিরপুর ডক এলাকায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে কাজকর্ম ৷ আইন প্রত্যাহারের দাবিতে, অনির্দিষ্টকালের জন্য চাক্কা জ্যামের কথা ঘোষণা করেছে সংগঠনগুলি ৷ যতদিন না আইন সংশোধন বা প্রত্যাহার করা হচ্ছে, ততদিন খিদিরপুর ডকের প্রায় 1400 ট্রাক ও ট্রেলারের স্টিয়ারিং ধরবেন না চালকরা ৷
এ দিন সংগঠনের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, যে ট্রাকচালকের মাসে 10 হাজার টাকাও আয় নেই, তাঁরা 7 লক্ষ টাকা জরিমানা কীভাবে দেবে ৷ সংগঠনের যুক্তি, কোনও ট্রাকচালক ইচ্ছাকৃত কোনও মানুষকে চাপা দেয় না ৷ দুর্ঘটনা ঘটে গেলে কিছু করার থাকে না ৷ কিন্তু, কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে ট্রাক চালকদের উপর নয়া আইন চাপিয়ে দিচ্ছে, তা রীতিমতো জুলুম ৷ তাদের প্রশ্ন, কোনও ট্রাক চালক 10 বছরের জন্য জেলে গেলে, তাঁর পরিবারের কী হবে ?
সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দু’দিনে ব্রিটিশ আমলের 'ভারতীয় দণ্ডবিধি' সংশোধন করে 'ভারতীয় ন্যায় সংহিতা' আইন নিয়ে আসে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ সংহতি 104 (2) ধারায় পথ দুর্ঘটনা সংক্রান্ত নয়া বিধানের সংযোজন করেছে কেন্দ্র ৷ সেখানে বলা হয়েছে, "গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে অভিযুক্ত চালক নিজে পুলিশকে ফোন করে সেই কথা জানাবে ৷ তা না-করে চালক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেলে, তার বিরুদ্ধে 'হিট অ্যান্ড রান' মামলায় অভিযোগ দায়ের হবে ৷ সেক্ষেত্রে চালকের সর্বোচ্চ 10 বছরের কারাদণ্ড ও 7 লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে ৷"
উল্লেখ্য, আগে ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী, পথ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে কারণ যাচাই করা হত ৷ দুর্ঘটনা কতটা গুরুতর, চালকের আচরণ কেমন ? তা বিচার করে ইচ্ছাকৃত খুনের ধারা যোগ করা হত ৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলাই দেওয়া হত ৷ কিন্তু, ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় পথ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে অভিযুক্ত চালক পুলিশকে না জানালে, ইচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু করা হবে ৷
আরও পড়ুন: