কলকাতা, 13 মার্চ: রাজ্য বিধানসভায় সিবিআই (CBI) ও ইডির (ED) অপব্যবহার নিয়ে আলোচনা এড়াল রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি (BJP) । সোমবার রাজ্যের শাসক দলের উপমুখ্য সচেতক তাপস রায় রাজ্য বিধানসভায় 185 ধারায় একটি প্রস্তাব নিয়ে আসে । এই প্রস্তাবের মূল বক্তব্য ছিল, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ও সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন বেছে বেছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের নেতাদের ও সদস্যদের টার্গেট করছে এবং রাজ্যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করছে ।
এখানে তাপস রায় আরও দাবি করেছেন, এই দুই এজেন্সি তদন্তের নামে তৃণমূল কংগ্রেসের (Trinamool Congress) নেতাদের উপর অপরাধ করে চলেছে এবং ভয়ের রাজনীতিকে উস্কে দেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগী হিসাবে কাজ করছে । তাই, এই হাউজ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়, যাতে মন্ত্রী-সহ এই বিধানসভার শাসক দলের সদস্যরা অযথা হয়রানির শিকার না হয় ।
এদিন এই প্রস্তাবের উপর কোনও বক্তব্য রাখেনি বিজেপি । বরং যখন এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তখন গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে বিধানসভার বাইরে শাসক দলের বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রী বিধায়কদের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে ।
এদিন আলোচনায় যোগদান না করলেও বিরোধী দলের তরফ থেকে বলা হয়েছে, দুর্নীতিতে সরাসরি যুক্ত থাকার পরে তদন্ত থেকে বাঁচতেই এ ধরনের কথা বলছে শাসক দলের নেতারা । রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) অভিযোগ করেছেন, ইতিমধ্যেই শাসকদলের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও নেতা জেলে গেলেও এখনও অনেকেই বাকি রয়েছে । অনেকেই জেলে যাবেন৷ গোটা তৃণমূল ফাঁকা হয়ে যাবে ।
তিনি বলেন, ‘‘আদালতের রায় যাঁদের চাকরি যাচ্ছে, সেই তালিকায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ভাইঝি রয়েছেন ৷ মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতোর ভাই রয়েছেন ৷ অসীমা পাত্রর বোনঝিও রয়েছেন৷ ঊষা রানি ও জয়দেব হালদারের ছেলেও রয়েছেন । লোকে দেখুক ভুয়ো চাকরি কারা পেয়েছেন । আদালত একের পর এক জনের চাকরি ছাঁটাই করছে আর তৃণমূল কেন্দ্রীয় এজেন্সি নিয়ে সরব হচ্ছে ।’’ এদিন বিরোধী দলনেতার আরও দাবি, তাঁদের কারণে সিবিআই তদন্ত হচ্ছে না । আদালতের নির্দেশে দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে । সিবিআই, ইডিকে বিজেপি ডাকেনি । তাই আজকের এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ।
অন্যদিকে এদিন শাসকদলের তরফ থেকে বলা হয়েছে, সম্প্রতি রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি কয়েকজন নেতা-নেত্রী বিশেষ করে এই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা এমন আচরণ করছেন, যাতে মনে হচ্ছে ইডি ও সিবিআই তাঁদের অঙ্গুলিহেলনেই চলছে ।
এদিন তৃণমূল মুখপাত্র তথা বরানগরের বিধায়ক তাপস রায় বলেন, ‘‘গত 10 মার্চ যেভাবে ভরা বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা রাজ্যের এক মন্ত্রীকে হুমকি দিয়েছেন । আঙুল তুলে বলেছেন, এক মাসের মধ্যে জেলে পুরে দেব । এর থেকে মনে হয়েছে যেন এই এজেন্সির বন্দোবস্ত তাঁর অঙ্গুলিহেলনেই চলে । এই ঘটনা শুধু পরিষদীয় ব্যবস্থাকে অসম্মানিত করে তাই নয়, পবিত্র সদনকেও অসম্মানিত করে । আর তাই এই প্রস্তাব নিয়ে আসতে হল ।’’
প্রসঙ্গত এবারই প্রথম নয়, গত বছর সেপ্টেম্বর মাসেও ইডি ও সিবিআই-এর অতি সক্রিয়তা নিয়ে একটি প্রস্তাব এনেছিল রাজ্যের শাসক দল । সেবারও সংখ্যাধিক্যের সমর্থনে সেই প্রস্তাব পাস হয় । সোমবার আরও একবার এই প্রস্তাব পাস হল । এখন দেখার এই প্রস্তাব বিধানসভায় পাস হওয়ার পর, তা আদৌও কোনও প্রভাব ফেলতে সমর্থ হয় কি না !
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েতের রণকৌশল নির্ধারণে শুক্রবার তৃণমূলের বর্ধিত ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকলেন মমতা