কলকাতা, 17 জুন: পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পর্বে শুরুতে অশান্ত হওয়া এলাকা পরিদর্শন করছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ৷ এই নিয়ে শুক্রবার থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস তাঁকে নিশানা করছে ৷ শনিবার শাসক দলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্য়ায় রাজ্যপালের সমালোচনা করতে গিয়ে টেনে আনলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের নাম ৷ বললেন, ‘‘বোস উপাধি নিলেই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস হওয়া যায় না ।’’
বৃহস্পতিবার মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষদিনে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল দক্ষিণ 24 পরগনার ভাঙড়ে ৷ শুক্রবার ওই এলাকায় গিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিক এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন রাজ্যপাল ৷ শনিবার তিনি যান ভোট ঘিরে অশান্ত হয়ে ওঠা দক্ষিণ 24 পরগনার ক্যানিংয়ে ৷ তিনি যখন ক্যানিংয়ের পথে, ঠিক সেই সময় কালীঘাটে সাংবাদিক বৈঠক করেন শ্রীরামপুরের সাংসদ তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ সেই সাংবাদিক বৈঠক থেকেই চাঁচাছোলা ভাষায় রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানকে আক্রমণ শানান শাসক দলের এই আইনজীবী সাংসদ ৷
তিনি বলেন, ‘‘বোস উপাধি নিলেই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস হওয়া যায় না । রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে বাংলার জন্য কাজ করুন । বিজেপির ঘরে ঢুকে যাবেন না । এত লোক মারা যাচ্ছে আপনি তো যাচ্ছেন না । বিজেপির লোক মারা গেলেই আপনি যাবেন, এমনটা করলে বোস উপাধি নেওয়া যায় না । বোস উপাধি নিতে হলে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের মতো হতে হবে ।’’
আরও পড়ুন: রাজ্যপালের ভাঙড়-ক্যানিং পরিদর্শন নিয়ে বেলাগাম আক্রমণ মদনের
একই সঙ্গে তিনি রাজ্যপালের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন ৷ কল্যাণের কথায়, ‘‘আমি অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে বলছি, রাজ্যপাল পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছেন । রাজনীতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে তিনি ভূমিকা পালন করছেন ।’’ রাজ্যপালের কাছে তাঁর আবেদন, ‘‘আপনি এমনটা করবেন না । আপনার প্রতি আমাদের এখনও ভক্তি শ্রদ্ধা আছে । আপনি দীর্ঘদিন আমলা হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন । আপনার বোস টাইটেল নেওয়ার ইচ্ছে নিন । তবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস এর মত হওয়ার চেষ্টা করুন । নির্ভীক হোন । মানুষের জন্য কাজ করুন । পলিটিক্যাল মোটিভেটেড (রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত) হবেন না ।’’
এখানেই থেমে যাননি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় । আরও একধাপ এগিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আজ আমাদেরও তো একজন মারা গিয়েছেন, কই তার বাড়িতে তো যাননি রাজ্যপাল ! ট্রেন দুর্ঘটনায় বাংলার এত লোক মারা গিয়েছেন । ক’জনের বাড়ি গিয়েছেন রাজ্যপাল ! একটি জায়গায় তিনি গিয়েছেন, যেখানে বিজেপির লোক মারা গিয়েছেন । তাহলে কি ধরে নেব, রাজ্যপাল শুধু বিজেপির হয়ে কাজ করছেন । বিজেপিকে যারা সাহায্য করছে সেই আইএসএফের জন্য তিনি শুধু রাজ্যপাল নন ।’’
কল্যাণের প্রশ্ন, ‘‘ভারতবর্ষের সংবিধানের কোন অধিকারে রাজ্যপাল একটি পলিটিক্যাল পার্টির অফিসে যায় ? তাহলে রাজ্যপালও কি একটি রাজনৈতিক দলের এজেন্ট হয়ে যাচ্ছেন ? শুভেন্দু অধিকারী ওঁকে ভয় দেখাতেন, উনি ঘরের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিলেন, এবার সেই ভয়ে রাজনৈতিক দলের অফিসে যেতে হচ্ছে ।’’
আরও পড়ুন: রবীন্দ্রনাথ-শেক্সপিয়র আওড়ে ক্যানিংয়ে গিয়ে কড়া ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি রাজ্যপালের