কলকাতা, 4 জানুয়ারি: দিনকয়েক আগে উত্তর 24 পরগনার দেগঙ্গা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে তিনি তৃণমূলে কোনও ঝগড়া বরদাস্ত করবেন না ৷ তার পর জল্পনা ছড়িয়েছিল যে এবার সম্ভবত দ্বন্দ্ব মিটবে ব্য়ারাকপুর শিল্পাঞ্চলে তৃণমূল কংগ্রেসের দুই নেতা অর্জুন সিং ও সোমনাথ শ্যামের মধ্যে ৷ প্রকাশ্য়ে একে অপরের বিরুদ্ধে তোপ দাগা থেকে বিরত থাকবেন এই সাংসদ ও বিধায়ক ৷
বাস্তবে সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়নি ৷ বরং দ্বন্দ্ব মেটার যে সামান্য সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, সেটাও দিনের আলো দেখেনি শিল্পাঞ্চলের দুই শাসক নেতা মুখোমুখি না হওয়ার জন্য ৷ এর আগে নৈহাটি উৎসবের উদ্বোধনের ফাঁকে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বকসির সামনে দুই নেতার মধ্যে ‘সন্ধি’ হবে বলে মনে করা হয়েছিল ৷ কিন্তু অর্জুন সেখানে থাকলেও ছিলেন না জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম ৷
বৃহস্পতিবার সেই একই পরিস্থিতি তৈরি হতে চলেছে ৷ এ দিন শ্যামনগর উৎসবের উদ্বোধনে উপস্থিত থাকার কথা তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বকসির৷ মনে করা হয়েছিল, সেখানে অর্জুন-সোমনাথের ‘সন্ধি’তে মধ্যস্থতা করতে পারেন ঘাসফুলের রাজ্য সভাপতি ৷ কিন্তু এ দিন সোমনাথ শ্যাম জানিয়ে দিয়েছেন যে শ্যামনগর উৎসবে তিনি আমন্ত্রিতই নন ৷
তাঁর আরও দাবি, তিনি এখন পাটশিল্প সংক্রান্ত বৈঠক নিয়ে ব্যস্ত ৷ তাই আদৌ যে রাজ্য সভাপতি সেখানে যাবেন, সেই বিষয়টি তিনি জানেন বলে দাবি তৃণমূল কংগ্রেসের এই বিধায়কের ৷ সোমনাথের আরও দাবি, নৈহাটি উৎসবেও তিনি আমন্ত্রিত ছিলেন না ৷ তাই সেখানে তাঁর থাকার কথাও ছিল না ৷
"কেন বিধায়ক-কে ডাকতে যাব ! ওনাকে তো কোনও দিন দরকারই হয়নি !" শ্যামনগর উৎসবে জগদ্দলের বিধায়কের আমন্ত্রণ না-পাওয়া নিয়ে এভাবেই নাম না-করে সোমনাথ শ্যামকে জবাব দিলেন সাংসদ অর্জুন সিং ঘনিষ্ঠ ভাটপাড়া পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা সোমনাথ তালুকদার । তিনি এই উৎসব কমিটির সভাপতিও বটে ।
স্বভাবতই বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া শ্যামনগর উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গরহাজির ছিলেন সোমনাথ শ্যাম । তবে আমন্ত্রিত থাকায় সেই উৎসবে সামিল হয়েছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বকসি এবং ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং । এনিয়ে অর্জুন অবশ্য বল ঠেলেছেন আয়োজকদের ঘাড়েই । তিনি বলেন, "কাকে ডাকা হয়েছে, না হয়েছে সেটা উৎসব কমিটিই বলতে পারবে । আমার এ বিষয়ে কিছু জানা নেই"।
তবে, এনিয়ে কোনও রাগঢাক না রেখেই জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ককে পাল্টা জবাব দিয়েছেন অর্জুন ঘনিষ্ঠ উৎসব কমিটির সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা সোমনাথ তালুকদার । তাঁর কথায়, "বিধায়ক কোথায় থাকেন, কোথায় যান তা কেউ জানে না । আমরাও ওনাকে এলাকায় দেখতে পাই না । এটা সকলের উৎসব । সবাই এখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছে । সাংসদ-কে তো ডাকতে হয়নি ! উনি তো এই উৎসবে সহযোগিতা করেছেন ।"
উল্লেখ্য, ভাটপাড়ায় তৃণমূল কর্মী ভিকি যাদব খুনের পর থেকেই অর্জুন সিং ও সোমনাথ শ্যামের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ৷ প্রকাশ্য়ে এই ঘটনা নিয়ে অর্জুনের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শুরু করেন সোমনাথ ৷ পালটা জবাব দেন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংও ৷ প্রায় রোজই দুই নেতার মধ্যে এই রাজনৈতিক বাকযুদ্ধ চলতেই থাকে ৷ লোকসভা নির্বাচনের আগে শিল্পাঞ্চলের রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়ছে বলেই অনেকের মত ৷
রাজনৈতিক মহল বলছে, 2009 সাল থেকে এই আসনটি জিতছিল তৃণমূল ৷ 2019 সালে অর্জুন সিং তৃণমূল থেকে বিজেপিতে গিয়ে ওই আসনে জেতেন ৷ এখন তিনি আবার তৃণমূলে ৷ এই পরিস্থিতিতে এবার ব্যারাকপুরে ঘাসফুট ফোটাতে মরিয়া বাংলার শাসক দল ৷ তাই এই দুই নেতাকে এখনই থামানো না গেলে ভোটে এর প্রভাব পড়তে পারে ৷ কিন্তু সোমনাথ শ্যাম যদি এভাবে রাজ্য সভাপতিকে এড়িয়ে যান, তাহলে আদৌ অর্জুনের সঙ্গে তাঁর ‘সন্ধি’ হবে ! এটাই এখন ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ৷
আরও পড়ুন: