কলকাতা, 11 জুলাই: নবজোয়ার নাকি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, সুফলের দায় কোন খাতে যাবে তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে চর্চা হলেও, পঞ্চায়েত নির্বাচন 2023-এর ফলের ট্রেন্ডে এটা স্পষ্ট যে নিয়োগ দুর্নীতি বা কয়লা-গরু পাচার কাণ্ড কোনও কিছুই ভোট বাক্সে তেমন প্রভাব ফেলতে ব্যর্থই হয়েছে ৷ ভোটের সম্পূর্ণ ফল এখনও সামনে আসেনি ৷ তবে যতটুকু প্রকাশ্যে এসেছে বিভিন্ন জেলা থেকে, তা থেকে সাফ হয়ে গিয়েছে যে, রাজ্যের ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে এবারও শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস নিজেদের আধিপত্য কায়েম রাখতে সক্ষম হয়েছে ৷ রাজ্যের গ্রামীণ প্রশাসনিক অংশে আরও পাঁচ বছরের জন্য তারা স্থায়ীভাবেও থাকছে ৷ পাশাপাশি ওয়াকিবহল মহলের মতে, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত প্রকাশিত ফলাফল থেকে আরও একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, যে একাধিক দুর্নীতি, আদালতের নির্দেশ বা এজেন্সির তৎপরতা, তার প্রভাব খুব একটা ভোটের ফলে প্রতিফলিত হয়নি ৷ তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি জনসমর্থন কিছুটা ম্লান হয়ে যেতে পারে, কিন্তু সেই ভোট আদৌ অন্য দলে স্থানান্তরিত হয়ছে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ দানা বেঁধেছে ৷
তবে ফলের নিরিখে রাজ্যের 21টি জেলায় আবারও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থন যে গিয়েছে তৃণমূলের কাছে তা নিয়ে সংশয় থাকছে না। পঞ্চায়েত সমিতির গণনার শুরু থেকেই বোঝা যাচ্ছে, তাও যে তৃণমূল কংগ্রেসের দিকেই কিছুটা ঝুঁকে রয়েছে ৷ মঙ্গলবার রাত 9 টা পর্যন্ত, পঞ্চায়েত সমিতির গণনায় দেখা গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস দুই হাজার 115টি আসনে জয়ী হয়েছে ৷ এগিয়ে রয়েছে 493টি আসনে। অন্যদিকে, এখনও পর্যন্ত 214টি আসনে জয়ী হয়েছে বিজেপি। অন্যদিকে, সিপিআইএম 47টি আসনে এবং কংগ্রেস 38টি আসনে জয় লাভ করেছে ৷ আরএসপি দুটি এবং অন্যরা 82টি আসনে জিতেছে ৷ এবং 58টি আসনে জিতেছে নির্দল ৷ নির্দল প্রার্থীরা 42টি আসনে এগিয়ে রয়েছে।
এখন পর্যন্ত গোটা রাজ্যের নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, 20টি জেলাতেই তৃণমূল কংগ্রেস এগিয়ে রয়েছে। দ্বিতীয়স্থানে রয়েছে বিজেপি, তারপরে রয়েছে সিপিএম এবং কংগ্রেস। ভোটের প্রাক্কালে প্রকাশিত কয়েকটি সমীক্ষায় ইঙ্গিত ছিল, বেশ কয়েকটি জেলায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের। সামনে লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন শাসক দলের জন্য এক রকম অ্যাসিড টেস্টের সমানই ছিল ৷ কিন্তু মঙ্গলবারের ফলাফলের যা ট্রেন্ড তাতে দেখা গিয়েছে, সসম্মানেই উত্তীর্ণ হয়েছে তৃণমূল ৷ যদিও ভোটে ব্যাপক হারে হিংসা এবং কারচুপির অভিযোগও তৃণমূলের বিরুদ্ধে তুলেছে বিরোধীরা ৷ একই সঙ্গে, পালটা তৃণমূলের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, গ্রামীণ জনগণ লক্ষ্মীর ভাণ্ডার এবং অন্যান্য সরকারি সুযোগ সুবিধার উপর অনেকটাই বেশি নির্ভর করেছে ৷ যার সুফল পেয়েছে তৃণমূল ৷
গ্রাম পঞ্চায়েতেও তৃণমূল 29 হাজার 665টি আসনে ইতিমধ্য়েই জয় লাভ করেছে ৷ আরও এক হাজার 527টি আসনে এগিয়ে রয়েছে ৷ অন্যদিকে বিজেপি আট হাজার 21টি আসনে জয় পেয়েছে ৷ এগিয়ে রয়েছে 406টি আসনে ৷ তবে লড়াইয়ের ময়দানে পিছিয়ে নেই বাম-কংগ্রেসও ৷ কমিশনের পরিসংখ্য়ান বলছে, দুই হাজার 472টি আসনে এবং কংগ্রেস দুই হাজার 94টি আসনে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ৷ তবে জেলা পরিষদে সেভাবে তৃণমূলের ধারেকাছে নেই অন্যান্য বিরোধীরা ৷ এক্ষেত্রে কমিশনের হিসাব বলছে, 77টি জেলাপরিষদেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল ৷ সেই সঙ্গে, আরও 92টিতে এগিয়ে রয়েছে তারা ৷ অন্যদিকে, বিজেপি 10টি এবং সিপিএম পাঁচটি জেলা পরিষদে এগিয়ে রয়েছে ৷
আরও পড়ুন: অনুব্রত তিহাড়ে, সবুজ গড় বীরভূমে দাঁত ফোটাল রাম ও বাম
আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা না হলেও এদিন পঞ্চায়েতের ট্রেন্ড সামনে আসতেই তৃণমূল সুপ্রিমো মমতো বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ও শুভেচ্ছে জানিয়ে টুইট করেন ৷ মুখ্যমন্ত্রী সোশাল মিডিয়ায় এদিন গ্রাম বাংলার মানুষকে অভিনন্দন জানালেও, অভিষেক বিরোধীদের খোঁচা দিতে ছাড়েননি ৷ সেই সঙ্গে তিনি লোকসভা ভোটেরও একরকম ডঙ্কা এদিন বাজিয়ে দিয়েছেন ৷ আত্মবিশ্বাসী সুরেই অভিষেক জানান, এই পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকেই আগামী লোকসভা ভোটে রাজ্যে তৃণমূলের জয়ের গতির ধারা অব্যাহতই থাকছে ৷