কলকাতা, 18 জুলাই: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিউ ইন্ডিয়ার তত্ত্বকে পরাস্ত করতে মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুতে ভূমিষ্ঠ হল বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোট ৷ যে জোটের শরিকরা সার্বিকভাবে সারা দেশে একে অপরের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করবে বলে আজ দাক্ষিণাত্য় থেকে বারবার বার্তা দেওয়া হল বিভিন্ন বিজেপি বিরোধী রাজনীতিবিদদের তরফে ৷ কিন্তু সেই জোট-বার্তা কি ভারতের সব অংশে সমানভাবে কার্যকর করা সম্ভব হবে ? এই প্রশ্নের উত্তর কিন্তু মেলেনি এখনও ৷
2024 সালে লোকসভা নির্বাচন ৷ ভোট ঘোষণা হতে হাতে আর বাকি মাত্র মাস সাতেক ৷ তার আগেই এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হবে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে ৷ বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের জন্য এর উত্তর খোঁজা সবচেয়ে জরুরি ৷ কারণ, এই রাজ্যের রাজনীতির যুযুধান তিনপক্ষ - কংগ্রেস, সিপিএম ও তৃণমূল, বিজেপি বিরোধী এই জোটের অন্যতম তিনটি কুশীলব ৷ বঙ্গ রাজনীতি কংগ্রেস-তৃণমূল জোট দেখেছে ৷ কংগ্রেস-সিপিএম জোটও দেখছে ৷ কিন্তু বাংলাতে বিজেপির বিরুদ্ধে কি এই তিন দল পাশাপাশি দাঁড়াবে ?
বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাজনীতিতে সবই সম্ভব ৷ তাই সাত মাস পর কী পরিস্থিতি তৈরি হবে, তা এখনই বলা মুশকিল ৷ কিন্তু বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচন পরবর্তী সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে সেই সম্ভাবনা বিশবাঁও জলে বলেই মনে হচ্ছে ৷ কারণ, তৃণমূলের সঙ্গে কোনোরকম জোটের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে বাম ও কংগ্রেস উভয়পক্ষ ৷
আরও পড়ুন: 'ইন্ডিয়া' জিতবে বিজেপি হারবে, নয়া জোটের নামে উচ্ছ্বসিত মমতা
মঙ্গলবার সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবীন দেব বলেন, "যেখানে অপশাসন চলছে, সেখানে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে বামেরা । এরাজ্যে শাসকের অপশাসন বন্ধ না হলে কেন্দ্রের অপশাসন বন্ধ করা যাবে না । একই ভাবে কেন্দ্রের অপশাসন বন্ধ করা না গেলে এরাজ্যেও হবে না । যুগপৎ । এ রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে । দিল্লিতেও বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লরাইয়ে আমরা থাকবে ।"
অন্যদিকে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, "এ রাজ্যের বামেদের সঙ্গে কংগ্রেস জোট আরও মজবুত, শক্তিশালী হবে । জাতীয় স্তরে বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ । তেমনই, বাম কংগ্রেসের বিরুদ্ধে এ রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কী পদক্ষেপ করে, সেটাই দেখার ।"
কিন্তু সম্প্রতি পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় যেভাবে সিপিএম ও কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলার অভিযোগ উঠল শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ৷ তার পর কীভাবে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, রাহুল গান্ধি ও সোনিয়া গান্ধিরা তৃণমূলের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একমঞ্চে হাজির হলেন ? এর পর কোনমুখে তৃণমূলের বিরোধিতা করবে সিপিএম-কংগ্রেস ? রাজনৈতিক মহল এই প্রশ্নও তুলছে ৷
আরও পড়ুন: সকলের অধিকার রক্ষায় জাতিশুমারির দাবিতে যৌথ সংকল্প বিরোধী বৈঠকে
এই নিয়ে রবীন দেবের বক্তব্য, "মঞ্চে অনেকেই থাকতে পারেন । আমরা সিদ্দিকুল্লার মতো পার্টির পদ বিলীন করে যায়নি । আত্মসমর্পণ করিনি । সিপিএম ন্যাশনাল পার্টি, তৃণমূল নয় । একমাত্র সিপিএমের কর্মসূচিতে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলা হয়েছে । বিজেপিকে প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে । 2004 সালে কেরলে 61 আসনে জয়ী হয় বামেরা । যার মধ্যে 57টা আসনে কংগ্রেস বিরোধী ছিল । পরে বিজেপি বিরোধী সরকার গড়তে গিয়ে সেই কংগ্রেসকে বাইরে থেকে সমর্থন করে বামেরা । সেই সরকার দশ বছর চলে । তাই, তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির বিরুদ্ধে বামেরা লড়াই চালিয়ে যাবে, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই ।"
তবে তৃণমূলের তরফে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ের বার্তা দেওয়া হয়েছে ৷ তৃণমূল কংগ্রেসের পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ বলেন, "এই লড়াই দেশ বাঁচানোর লড়াই । এখানে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে । হয়তো আমাদের মধ্যে কিছুটা মতপার্থক্য আছে । কিন্তু সেগুলো দূরে সরিয়ে রেখে 24-এ বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে হবে । এমনটা যদি না করা যায় তাহলে বিজেপির হাত শক্ত করা হবে । যারা এই জোটের বিরোধিতা করছেন তাদের ভাবা উচিত তারা কার হাত শক্ত করছেন !"
আরও পড়ুন: বিজেপির এনডিএ-র বিরুদ্ধে বিরোধীদের জোটের নাম ইন্ডিয়া, ঘোষণা খাড়গের